হাসি মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছিল তানজানিয়া

0

হাসি সবসময় সুখের কারণে বোঝায় না, মাঝে মাঝে এটাও বোঝায় যে, আপনি কতটা বেদনা লুকাতে পারেন। কথাগুলো বলেছিলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ।

আসলেই হাসি মানে কি সবসময়ই খুশি? বিজ্ঞজনরা বলেন, খুশিতে মানুষ হাসে ঠিকই, কিন্তু উল্টো কথাটা সব সময় ঠিক নয়। হাসি মানেই যে খুশি, তা নয়।

চিকিৎসাবিদরা বহুকাল ধরে বলে আসছেন, হাসিই সর্বোত্তম ওষুধ। তবে হাসি কিন্তু একটি অসুখও। এই কভিড-১৯ আবহে অতিমারি ও মহামারি- শব্দ দু’টির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি আমরা। কিন্তু জানেন কি, একবার হাসিও মহামারিতে রূপ নিয়েছিল।

১৯৬২ সালে তানজানিয়ার কাশাশা গ্রাম আক্রান্ত হয়েছিল হাসির মহামারিতে। একের পর এক মানুষ বিনা কারণে যেন হেসে খুন হচ্ছিল। পরিস্থিতি এমনই তৈরি হয়েছিল যে সামনের জনকে হাসতে দেখে উপস্থিত সবাই হাসতে শুরু করছিলেন। থামতে পারছিলেন না কেউ।

এ মহামারি বিশ্বজুড়ে পরিচিত ‘টানগানইকা লাফটার এপিডেমিক’ নামে। তানজানিয়ার আগে নাম ছিল টানগানইকা। সে সময় জাঞ্জিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল তানজানিয়া।

উগান্ডার সীমান্তে তানজানিয়ার ওই গ্রামের একটি স্কুল থেকে সূত্রপাত হয়েছিল এ মহামারি। ওই বছর ৩১ জানুয়ারি কাশাশার একটি বোর্ডিং স্কুলের তিন ছাত্রীর মধ্যে প্রথম এ সংক্রমণ দেখা যায়। তারা কোনো কারণ ছাড়া হাসতে শুরু করে। তাদের থেকে দ্রুত স্কুলের বাকি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ।

স্কুলের ৯৫ জন পড়ুয়া যাদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে তারা সবাই সংক্রমিত হয়ে পড়ে এ রোগে। তবে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা বা কর্মীদের মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েনি। সংক্রমণ ঠেকাতে স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়।

এখান থেকে নসাম্বা নামে একটি গ্রামের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। জানুয়ারিতে শুরু হওয়া রোগটিতে ৪ থেকে ৫ মাসের মধ্যে ২১৭ জন আক্রান্ত হন।

২১ মে কাশাশা গ্রামের স্কুলটি ফের চালু হয়। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যে ফের তা বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশের গ্রাম বুকোবার কাছে আরও একটি স্কুলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। এ স্কুলের ৪৮ জন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়।

আক্রান্তরা টানা ১৬ দিন ধরে শুধু হাসত। এভাবে চলে ১৮ মাস। কিন্তু তারপর আর কারও মধ্যে অকারণে হাসির বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়নি। তবে তখন অন্য এক সমস্যা শুরু হয়, অন্য এক লক্ষ্মণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। আচমকা জ্ঞান হারানো, শ্বাসকষ্ট, শরীরে র্যাশ হওয়া, হঠাৎ কেঁদে ওঠা, পরক্ষণেই আবার ভয়ে আর্তনাদ করা হাসি… আক্রান্তদের মধ্যে এমন লক্ষ্মণ দেখা দিতে শুরু করে।

তবে এ মহামােতে কেউ মারা যায়নি। সবমিলে তানজানিয়ার ১৪ স্কুলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল হাসি মহামারি। এক হাজার জন সংক্রমিত হয়েছিল।

কী এই রোগ? কেন তা ছড়িয়ে পড়েছিল তানজানিয়ায়? যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানার পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক এর কারণ সামনে আনেন। মনের উপর অত্যধিক চাপে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন ছাত্ররা, দাবি করেছিলেন তিনি।

সে সময় দেশটি সবেমাত্র স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতা আনন্দের, চাপমুক্তির। কিন্তু দেশের পড়ুয়াদের উপর খুব মানসিক চাপ বেড়ে গিয়েছিল সে সময়। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়ুয়াদের প্রতি আশা বেড়ে গিয়েছিল অভিভাবক ও শিক্ষকদের। এ কারণে মূলত পড়ুয়াদের মধ্যে এ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

Share.