বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, একদিকে আমদানি ব্যয়ের চাপ কমে এসেছে, অন্যদিকে প্রবাসী আয় এখনও আসছে। এছাড়া দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাইকার বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ও বিশ্ব সংস্থার অনুদানের কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। তবে রপ্তানি বাণিজ্যের অবস্থা বেশ নাজুক। এর আগে ৩ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ হাজার ৩০৯ কোটি (৩৩.০৯ বিলিয়ন) ডলার উচ্চতায় উঠলেও ৪ মার্চ ফের নেমে আসে ৩২ বিলিয়নে। ৮ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ২১৫ কোটি (৩২.১৫ বিলিয়ন) ডলারে।
সাধারণত রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়লে রিজার্ভ বাড়ে। তবে গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানিতে শোচনীয় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
জানা গেছে, ২৪ মার্চ পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০১৭ সালের জুনে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলার রিজার্ভ অতিক্রম করেছিল। এরপর দীর্ঘদিন ৩১ থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলারে ওঠানামা করেছে রিজার্ভ।
বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণের দায় ও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় শোধ করলে এ রিজার্ভ আবারও কমে যাবে বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) শেষে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারে। এ আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ কম। একক মাস হিসেবে মার্চে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৭৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ কম।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশিরা আয় (রেমিট্যান্স) পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন। সারাদেশের ব্যাংক শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ও এনজিওদের মাধ্যমে তা পৌঁছে যাচ্ছে সুবিধাভোগীদের কাছে। এ মাসের প্রথম ১৬ দিনে প্রবাসীরা ৪৪ কোটি ২০ লাখ ডলার আয় পাঠিয়েছেন, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৩ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা।
জানা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে ভালো সূচক ছিল প্রবাসী আয়। করোনার কারণে এ আয় কমে গেছে। প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলো ভাইরাসে নাস্তানাবুদ, দীর্ঘদিন ধরে চলছে লকডাউন।
প্রসঙ্গত বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। গত ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এজন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, যে কারণে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে যায়।
জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত কেবল বিকাশের মাধ্যমে ১৩৮ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছে। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলো থেকে। ♦