‘সেট টপ বক্স’ স্থাপনে ফের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট

0

ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে স্যাটেলাইট টেলিভিশন গ্রাহকদের ডিজিটাল ‘সেট টপ বক্স’ বসানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে সরকারের দেয়া সিদ্ধান্তে আবার স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ-সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি তিন মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন।

কেবল নেটওয়ার্ক কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরে গত ২৮ এপ্রিল সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তি কেন অসৎ উদ্দেশ্যপূর্ণ, অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

‘কোনো নীতিমালা না করে’ সরকারের দেয়া ওই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে গত রোববার হাইকোর্টে রিট করেন কেব্ল নেটওয়ার্কের গ্রাহক ঢাকার গোরানের বাসিন্দা মো. আবুল কাউসার কল্পন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মুশফিকুল হুদা।

রিটকারীর আইনজীবী মুশফিকুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত রুল দিয়ে বিজ্ঞপ্তিটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ‘সেট টপ বক্স’ বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওইদিন সভা শেষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেট টপ বক্স বসাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে গ্রাহকদের দুই মাস সময় দেয়া হবে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ডিজিটাল সেট বক্স বসাতে হবে। যারা ডিজিটাল সেট টপ বক্স সেবা নেবেন না, তারা ৩১ মার্চের পরে অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। সব বিভাগীয় শহর ও মহানগরের গ্রাহকরা আরও দুই মাস সময় পাবেন। ৩০ মের মধ্যে তাদের ডিজিটাল সেট টপ বক্স বসাতে হবে।’

পরে গত ২৮ এপ্রিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনটি সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এতে বলা হয়—প্রথম ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে কেবল নেটওয়ার্ক কার্যক্রম ৩১ মের মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহকদের নিজেদের টেলিভিশনের সঙ্গে ‘সেট টপ বক্স’ সংযুক্ত করতে হবে।

‘সেট টপ বক্স’ ব্যবহারে গ্রাহকদের আগ্রহী করার জন্য সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে এবং বিটিভি কর্তৃক নির্মিত টিভিসি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বারবার প্রচার করতে হবে। এছাড়া কেব্ল নেটওয়ার্ক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন নীতিমালা/গাইডলাইন প্রণয়নের জন্য কেব্ল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ/ডিস্ট্রিবিউটররা এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ইনপুট মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।

নীতিমালা তৈরি করতে ‘ইনপুট’ চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে রিটকারীর আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মুশফিকুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার মানে এ-সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা নেই। প্রযুক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার প্রস্তুত নয়। যেখানে নীতিমালা নেই, প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি যেখানে নেই, সেখানে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না, যে কারণে বিজ্ঞপ্তিটি চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করা হয়।’

এর আগে গত বছর ৪ নভেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নেটওয়ার্ক ডিজিটাল করা নিয়ে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে টিভি কেব্ল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আসবে। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেখা অব্যাহত রাখতে ডিশ কেব্ল গ্রাহকদের এ সময়ের মধ্যে কেব্ল বা ফিড অপারেটরের সহযোগিতায় অ্যানালগ পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল সেট টপ বক্স স্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় ৩০ নভেম্বরের পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেখা যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল।

ওই গণবিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. সাহেদ কাওসার হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে প্রাথমিক শুনানির পর তখন ওই গণবিজ্ঞপ্তিটিও স্থগিত করে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। 

Share.