ষষ্ঠবারের মতো এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা

0

পাকিস্তানকে হারিয়ে ১৫তম এশিয়া কাপের শিরোপা জিতলো শ্রীলংকা। গতকাল দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলংকা ২৩ রানে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। এ নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ষষ্ঠবার এশিয়া কাপে শিরোপা জিতলো লংকানরা।

সর্বোচ্চ সাতবার শিরোপা ঘরে তুলে ভারত।

ভানুকা রাজাপাকসের অপরাজিত হাফ সেঞ্চুরি ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় শ্রীলংকা। রাজাপাকসে ৪৫ বলে ৭১ রানে অপরাজিত থাকেন।

শ্রীলংকার দুই বোলার পেসার প্রমোদ মধুশান ও স্পিনার হাসারাঙ্গা ডি সিলভার বোলিং তোপে ১৪৭ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান।

শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নিলে বল হাতে আক্রমনে এসে ইনিংসের প্রথম ওভারে পাকিস্তানকে সাফল্য এনে দেন পেসার নাসিম শাহ।

ওভারের তৃতীয় বলে দারুন এক ইন-সুইংয়ে রানের খাতা খোলার আগে কুশল মেন্ডিসকে বোল্ড করেন নাসিম।

কুশলের বিদায়ে উইকেটে গিয়েই দ্বিতীয় ওভারে ২টি চার মারেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। বোলার ছিলেন পেসার মোহাম্মদ হাসনাইন। পরের ওভারে নাসিমের তৃতীয় বলে চার মারেন আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা।

ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথমবারের মত বোলিংয়ে আসেন পেসার হারিস রউফ। দ্বিতীয় বলে নিশাঙ্কাকে বিদায় করেন রউফ। মিড-অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাবরকে ক্যাচ দেন নিশাঙ্কা। ১১ বলে ১টি চারে ৮ রান করেন তিনি।

নিশাঙ্কাকে হারানোর ওভারে ১টি চার মারেন ধনাঞ্জয়া। হাসনাইনের পরের ওভারে আরও ১টি চার মেরে রানের চাকা সচল রাখেন ধনাঞ্জয়া। ৫ ওভার শেষে শ্রীলংকার রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৩৬।

পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারে পাকিস্তানকে তৃতীয় সাফল্য এনে দেন রউফ। ওভারের প্রথম বলে হাফ-ভলি ইন-সুইংয়ে দানুস্কা গুনাথিলাকার উইকেট উপড়ে ফেলেন রউফ। ১ রান করেন আসরে পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়া গুনাথিলাকা।

পাওয়া-প্লেতে শ্রীলংকার ৩ উইকেট শিকার করে দারুন শুরু করে পাকিস্তান। এর মাধ্যমে এবারের এশিয়া কাপে পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষের সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট নেয়ার নজির গড়ে পাক বোলাররা।

পাকিস্তানের বোলারদের দাপটের মাঝে যার হাত ধরে শ্রীলংকার রানের চাকা ঘুড়ছিলো, সেই ধনাঞ্জয়াকে অষ্টম ওভারে বিদায় করেন এবারের আসরে পাঁচ ম্যাচে দ্বিতীয় ওভার করতে আসা অফ-স্পিনার ইফতিখার আহমেদ। ইফতিখারকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ধনাঞ্জয়া ৪টি চারে ২১ বলে ২৮ রান করেন।

ধনাঞ্জয়া ফেরার পরের ওভারে শ্রীলংকার পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান পাকিস্তানের লেগ-স্পিনার শাদাব খান। শাদাবের মিডল-স্টাম্পের ফুল পিচড বলকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ভুল শটে বোল্ড হন শ্রীলংকার অধিনায়ক দাসুন শানাকা।

৩ বলে ২ রান করেন শানাকা। শানাকার আউটে নবম ওভারে ৫৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে মহাচাপে পড়ে শ্রীলংকা।

শ্রীলংকাকে সেই চাপ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন ভানুকা রাজাপাকসে ও হাসারাঙ্গা ডি সিলভা। রানের গতি বাড়িয়ে পাকিস্তানের বোলারদের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেন রাজাপাকসে-হাসারাঙ্গা জুটি। পরের ছয় ওভারে ছয়টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তারা।

১৪তম ওভারে শ্রীলংকার রান ১শ স্পর্শ করে। ঐ ওভার শেষে ৫ উইকেটে ১০৬ রান দাঁড় করায় লংকানরা।

১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জুটিতে ৫০ রান পূর্ণ করেন রাজাপাকসে ও হাসারাঙ্গা। আর তৃতীয় ও চতুর্থ বলে দু’টি চার মেরে পঞ্চম ডেলিভারিতে আউট হন হাসারাঙ্গা।

রউফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৩৬ রানে থামেন তিনি। ২১ বলের ইনিংসে ৫টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন হাসারাঙ্গা।

১৫তম ওভারে দলীয় ১১৬ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে হাসারাঙ্গার বিদায়ে রানের গতি কমে শ্রীলংকার। পরের ১০ বলে কোন বাউন্ডারি পায়নি লংকানরা।

নাসিমের করা ১৭তম ওভারে দু’টি ছক্কা মারেন রাজাপাকসে ও চামিকা করুনারত্নে। আর ১৮তম ওভারে চতুর্থ বলে জীবন পেলেও শেষ বলে ১ রান নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রাজাপাকসে। ৩৫ বলে হাফ-সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে ৫টি চার ও ১টি ছয়ের সহায়তা নেন তিনি।

হাসনাইনের করা ১৯তম ওভারের প্রথম ৫ বল থেকে মাত্র ২ রান নিতে পারেন রাজাপাকসে ও করুনারত্নে। তবে ছক্কা মেরে ওভারটি শেষ করেন রাজাপাকসে।

শেষ ওভারে বল হাতে আক্রমনে আসেন নাসিম। প্রথম চার ডেলিভারিতে ৫ রান উঠে। পঞ্চম বলে চার মারেন রাজাপাকসে। আর শেষ বলে এক্সট্রা কভার দিয়ে ছক্কা মারেন রাজাপাকসে। এতে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭০ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা। সপ্তম উইকেটে চামিকা করুনারত্নরে সঙ্গে ৩১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রান যোগ করেন রাজাপাকসে। সেখানে ১৭ বলে ৩৪ রান তুলেন রাজাপাকসে।

৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৫ বলে অপরাজিত ৭১ রান করেন রাজাপাকসে। ১৪ বলে ১৪ রান করেন করুনারত্নে। পাকিস্তানের রউফ ৪ ওভারে ২৯ রানে ৩ উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ১৭১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পেসার দিলশান মধুশাঙ্কার করা প্রথম ওভার থেকে ১২ রান পায় পাকিস্তান। এর মধ্যে অতিরিক্ত থেকেই আসে ৯টি রান। পরের দুই ওভার থেকে ১টি চারে ৮ রান তুলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার অধিনায়ক বাবর ও রিজওয়ান।

চতুর্থ ওভারে পাকিস্তান ব্যাটিং লাইন-আপে জোড়া আঘাত হানেন প্রথমবারের মত আক্রমনে আসা পেসার প্রমোদ মধুশান। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে যথাক্রমে বাবর ও ফখর জামানকে শিকার করেন মধুশান। বাবর ৬ বলে ৫ ও জামান ১ বলে শূন্য হাতে ফিরেন। পরপর দুই বলে উইকেট নিয়ে হ্যাট্টিকের সুযোগ পান মধুশান। তবে তার হ্যাট্টিকের সম্ভাবনা রুখে দেন ইফতেখার।

২২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া পাকিস্তান পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৩৭ রানের সংগ্রহ পায়। এ অবস্থায় রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি ক্রিজে থাকা রিজওয়ান ও ইফতেখার। ১০ ওভার শেষে ২ উইকেটে পাকিস্তানের রান ৬৮।

হাসারাঙ্গার করা ১২তম ওভারে ইফতেখারের ব্যাট থেকে ১টি করে চার-ছক্কা আসায় ১৪ রান পায় পাকিস্তান। ১৪তম ওভারে ছক্কা মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ইফতেখার। মধুশানের তৃতীয় শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ৩২ রানে আউট হন ইফতেখার। ৩১ বলের ইনিংসে ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন ইফতেখার। তৃতীয় উইকেটে রিজওয়ানের সঙ্গে ৫৯ বলে ৭১ রান যোগ করেন ইফতেখার।

ইফতেখারের বিদায়ে ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পান মোহাম্মদ নাওয়াজ। সুপার ফোরে ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পেয়ে, এই পজিশনেই ২০ বলে ৪২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে পাকিস্তানের জয়ের পথ সহজ করেছিলেন নাওয়াজ। কিন্তু এবার ৯ বলে ৬ রানে থামতে হয় তাকে। করুনারত্নের বলে ডিপ স্কয়ারে মধুশানকে ক্যাচ দেন তিনি। একই ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রিজওয়ান।

৪৭ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পাবার ১ বল পরই বিদায় ঘন্টা বাজে রিজওয়ানের। ইনিংসের ১৭তম ও হাসারাঙ্গার চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে স্লগ সুইপ করে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন রিজওয়ান। ৪৯ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৫ রান করেন তিনি।

এই ইনিংসের সুবাদে এবারের এশিয়া কাপে ভারতের বিরাট কোহলিকে টপকে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন রিজওয়ান।
রিজওয়ানের আউটের পরই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে পাকিস্তান। একই ওভারে আরও দু’টি উইকেট নেন হাসারাঙ্গা। তৃতীয় বলে আসিফ আলিকে ও পঞ্চম ডেলিভারিতে খুশদিল শাহকে বিদায় করেন হাসারাঙ্গা। ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের লাগাম শ্রীলংকার হাতে তুলে দেন হাসারাঙ্গা।

৪ উইকেটে ১১০ থেকে ৭ উইকেটে ১১২ রানে পরিণত হওয়ায়, ৩ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ৩ ওভারে ৫৯ রানের প্রয়োজন পড়ে পাকিস্তানের।

শেষ পর্যন্ত পুরো ২০ ওভার খেলে ১৪৭ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ৫৪ রানে শেষ ৮ উইকেট হারায় পাকিস্তান। শ্রীলংকার মধুশান ৩৪ রানে ৪টি ও হাসারাঙ্গা ২৭ রানে ৩টি উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড (টস-পাকিস্তান)
শ্রীলংকা: ১৭০/৬, ২০ ওভার (রাজাপাকসে ৭১*, হাসারাঙ্গা ৩৬, রউফ ৩/২৯)
পাকিস্তান: ১৪৭/১০, ২০ ওভার (রিজওয়ান ৫৫, ইফতেখার ৩২, মধুশান ৪/৩৪)

ফল : শ্রীলংকা ২৩ রানে জয়ী 

Share.