শরীরে জীবাণু না থাকলেও টেস্ট পজিটিভ হতে পারে?

0

প্রশ্নটার উত্তর দেয়ার আগে একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। আগের দিনে আমাদের এলাকায় উপজাতিরা বন্য খরগোশ শিকার করে খেতো। দিনের বেলা খরগোশ ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকতো। সন্ধ্যার সময় বেরিয়ে আসত মাঠে ঘাস খাওয়ার জন্য। খরগোশ ঘাস খেয়ে জীবন ধারণ করে। শিকারি ঝোপঝাড়ের আশে পাশে ফাঁদ পেতে লুকিয়ে থাকতো। খরগোশ ঘাস খেতে বেরিয়ে এসে ওই ফাঁদে আটকা পড়তো। সন্ধ্যার আগে শিকারি মাঠে খরগোশের গোবর খুঁজে বেড়াতো। যদি মাঠে খরগোশের কাঁচা গোবর দেখতে পেতো তাহলে মনে করে নিতো পাশের ঝোপে খরগোশ আছে। আগের রাত্রে খরগোশ এ মাঠে খাওয়া-দাওয়া করেছে। যদি শুকনা গোবর থাকতো তাহলে সন্দেহ ছিল যে খরগোশ আছে কিনা। কাঁচা গোবর পেলেই তারা ফাঁদ পাততো।

উপরের উদাহরণে তিনটা জিনিস বোঝার রয়েছে। ফাঁদে যখন খরগোশ জড়িয়ে পড়ল তখন নিশ্চিত হওয়া গেল যে, খরগোশ রয়েছে। কাঁচা গোবর দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল যে, খরগোশ খুব সম্ভবত আছে। আর শুকনা গোবর দেখে বলা যায় যে খরগোশ ছিল কিন্তু এখন খুব সম্ভবত এখন নাই। মাঠে খরগোশের গোবর যদি নাই থাকে তাহলে নিশ্চত যে এ ঝোপে খরগোশ নেই।

এখন আসছি জীবাণুর বেলায় কি হয়। শরীরে যদি জীবণু প্রবেশ করে তাহলে শরীর থেকে স্যাম্পল নিয়ে যদি আমরা জীবাণুকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে পারি অথবা এটার কালচার করে সে কালচার থেকে আমরা জীবণু দেখতে পারি তাহলে নিশ্চিত যে শরীরে জীবাণু রয়েছে।

প্যাথলজিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে কোন কোন সময় জীবাণু অথবা জীবাণুর অংশ বিশেষের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। এটাকে বলা হয় ডাইরেক্ট পরীক্ষা। জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পর জীবাণুর বিপরীতে রক্ত কণিকা এন্টিবডি তৈরি করে। এ এন্টিবডি রক্তে থাকে। রক্ত পরীক্ষা করে এ এন্টিবডির পরিমাণ ও উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। কাজেই এটা একটা ইনডাইরেক্ট পরীক্ষা। শরীরে জীবাণু প্রবেশ করার পর এন্টিবডি তৈরি হয়। তারপর জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও শরীরে এন্টিবডি থেকে যায়। কাজেই এন্টিবডি থাকলে যে শরীরে জীবাণু আছে তা বলা যাবে না। উভয় ক্ষেত্রে টেস্ট পজিটিভ।

এন্টিবডি পজিটিভ থাকা মানে জীবাণু শরীরে থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত শরীরে জীবাণু প্রবেশ করেছিল। জীবাণুর অংশ থেকে বের হওয়া প্রোটিন হল এন্টিজেন, যার বিরুদ্ধে রক্ত এন্টিবডি তৈরি করে। রক্তে সেই এন্টিজেনের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে শরীরে জীবাণু রয়েছে। তবে মৃত জীবাণুর এন্টিজেনও থাকতে পারে। কাজেই এন্টিজেন পজিটিভ হওয়ার অর্থ হলো শরীরে জীবাণু আছে, সেটা মৃতও হতে পারে, জীবিত থাকতে পারে।

তবে কালচার পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়া মানে হলো শরীরে জীবিত জীবাণু আছে। রোগ জীবাণুর কোষ ভেঙ্গে বের হয় জিন (ডিএনএ)। পিসিআর পরীক্ষা করে জিনের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। যেহেতু জিন জীবাণু থেকে আসে সেহেতু জিন পজেটিভ হওয়া মানে হলো শরীরে জীবাণু রয়েছে।

সব ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে আমরা বুঝতে পারলাম যে শরীরে জীবাণু না থাকলেও টেস্ট পজিটিভ হতে পারে।

কৃতজ্ঞতা: ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,
প্যাথলজি বিভাগ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ

Share.