রাসেলস ভাইপার থেকে সতর্ক থাকার উপায় জানাল মন্ত্রণালয়

0

শুধু বরেন্দ্র অঞ্চল নয়, এখন প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে রাসেলস ভাইপার। কয়েক দিন ধরে দেশজুড়ে এই বিষধর সাপ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সচেতন হতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় তথ্য ও নির্দেশনা দিয়েছে।

এই নির্দেশনামূলক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি উদ্বেগজনক। তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষের সঙ্গে রাসেলস ভাইপারের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এই সাপ সাধারণত নিচু ভূমির ঘাসবন, ঝোপ-জঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় থাকে।

এরা মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। মেটে রঙের কারণে সাপটি মাটির সঙ্গে সহজে মিশে থাকতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে কাছাকাছি গেলে, সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে।

রাসেলস ভাইপার দক্ষ সাঁতারু সাপ। এটি নদীর স্রোত ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়েছে। এ জন্য সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

কামড় এড়াতে যা করণীয়
— যদি কোনো এলাকায় রাসেলস ভাইপার দেখা যায়, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন মেনে চলুন।
— ঝোপঝাড়, লম্বা ঘাস, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। গর্তে হাত-পা ঢোকাবেন না।
— কৃষিজমিতে কাজ করার সময় বুট পরুন। লম্বা প্যান্ট পরুন।
— বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখুন।
— পতিত গাছ, জ্বালানির লাকড়ি এবং খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
— রাতে চলাচলের সময় টর্চলাইট ব্যবহার করুন।
— সাপ দেখলে ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না।
— জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন। নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।

কামড় খেলে যা করণীয়
— কামড়ের জায়গাটি নড়াচড়া করা যাবে না। যদি পায়ে কামড়ায়, বসতে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে কামড়ালে, হাত নড়াচাড়া করবেন না। কেননা, হাত-পায়ের গিরা নড়াচড়ায় মাংসপেশির সংকোচন হয়। ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
— আক্রান্ত স্থানটি সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে। অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছে ফেলতে হবে।
— শরীর থেকে ঘড়ি, অলংকার, তাবিজ, তাগা খুলে ফেলুন।
— আক্রান্ত স্থান কাটবেন না। কোনো রকম প্রলেপ বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা যাবে না। সুই ফোটাবেন না।
— সাপে কাটলে ওঝার কাছে যাবেন না।
— শিগগির নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যান।
— আতঙ্কিত হবেন না। রাসেলস ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম সরকারি হাসপাতালে বিনা খরচে পাওয়া যায়।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষের প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম রয়েছে। সব জায়গায় হাসপাতালগুলোয় অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রাদুর্ভাব কমাতে যা করণীয়
সারস, গুইসাপ, বেজি, গন্ধগোকুল, বাগডাশ, মেছো বিড়াল, বনবিড়াল, তিলা নাগ ইগল, মদনটাক পাখি এবং কিছু প্রজাতির সাপ রাসেলস ভাইপার খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব বন্য প্রাণী মানুষ নির্বিচার হত্যার কারণে রাসেলস ভাইপার বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্য প্রাণী দেখলেই হত্যা ও আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

রাসেলস ভাইপার বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী। এই সাপ ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষা করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে। এর বিষ থেকে অনেক ওষুধ তৈরি হয়। সাপ মারা অপরাধ। তাই, সাপ মারা থেকে বিরত থাকুন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ বন বিভাগ উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও সচেতন সমাজের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

Share.