ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ভোক্তাব্যয়ে স্বস্তিতে জাপানের অর্থনীতি

0

ভোক্তাব্যয় বেড়ে যাওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছে জাপানের অর্থনীতি। বার্ষিক হিসাবে অর্থাৎ গত বছরের সাপেক্ষে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ বলে জানায় দেশটির সরকার। কোভিড-১৯ মহামারির বিধিনিষেধ তুলে নেয়ায় অর্থনীতিতে গতি এসেছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে অন্য অনেক দেশের মতো জাপানও দুই বছর ধরে বিদেশি পর্যটকদের আগমনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে অবশ্য এশিয়া ও বিশ্বের অন্যতম উন্নত এ দেশের পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ ২০২০ সালে নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পরে দেশটিতে পর্যটকের আগমন ৯০ শতাংশ কমেছে।

গত জুনে সেই নিষেধাজ্ঞা আংশিক তুলে নেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। প্রথম ধাপে গত জুনে বিশ্বের ১০০ দেশ ও অঞ্চলের পর্যটকরা দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ পান। তবে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হচ্ছে পর্যটকদের। সে অনুযায়ী দেশ ও অঞ্চলভেদে পর্যটকদের লাল, হলুদ ও নীল—এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এ শ্রেণিকরণের ফলে অনেক দেশের পর্যটক কোয়ারেন্টিনের নিয়ম পালন করে জাপানে ঘুরতে পারবেন।

পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। এর অর্থ পরিবারগুলো বাইরে বেড়াতে যাচ্ছেন এবং খরচের পরিমাণ বাড়িয়েছেন। এমনকি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ারও পরও এই প্রবণতা দেখা গেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটির নাগরিকদের ব্যয় বেড়েছে। চলতি বছরের জুনে টানা তৃতীয় মাসে জাপানের প্রধান ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশের ওপরে ছিল। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুনে জাপানের ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে।

এছাড়া প্রধান ভোক্তা মূল্য সূচক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির পর এবারই প্রধান ভোক্তা মূল্য সূচক সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি জাপান। চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে অর্থনৈতিক উন্নতির আভাস পাওয়া গিয়েছিল। তখন এর আগের প্রান্তিকের তুলনায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ে প্রবৃদ্ধি। গত ত্রৈমাসিকে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয় ২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা পূর্বাভাসের তুলনায় কম ছিল।

ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অর্থনীতির পরিধি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ, যা মহামারি পূর্ব সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ ৫৪২ দশমিক ১২ ট্রিলিয়ন ইয়েনের (৪ দশমিক শূন্য ৭ ডলার) অর্থনীতির কলেবর আরও বেড়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এ প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কম।
কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ শিথিল করে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অপ্রীতিকর চাহিদার কারণে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অনলাইন ট্রেডিং সংস্থার আইজির জুন রং ইয়াপ।

তবে কোভিডে সাম্প্রতিক সময়ে দৈনিক সংক্রমণের শীর্ষে উঠে আসে জাপান। দেশটিতে গত শুক্রবার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৯২৬ জন এবং মারা গেছেন ২১৪ জন। কয়েক দিন ধরে দেশটিতে এ প্রবণতা দেখা গেছে। এ কারণে চলতি প্রান্তিকে ফের অর্থনীতি ধীরগতির হতে পারে বলে মনে করছেন সুমি ট্রাস্টের অর্থনীতিবিদ তাকায়ুকি তুজি।

পরিস্থিতির উন্নতি কিছুটা নির্ভর করছে চীনের ওপর। কেননা চীনে জাপানের পণ্যের বিশাল চাহিদা রয়েছে। দেশটিতে রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জাপানের কর্তৃপক্ষ। চীনের কোভিড শূন্য নীতির প্রভাব পড়েছে দেশটি ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যবসাবাণিজ্যে ও সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর।

এজন্য তুজি বলেন, চীনের উচিত কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নেয়া, যাতে রপ্তানির পথ সুগম হয়। এছাড়া বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আর্থিক নীতি পরিবর্তন করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ব্যাংক অব জাপান) সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। মানুষ যেন সহজে অর্থ পায়, তা নিশ্চিত করা এর লক্ষ্য। 

Share.