বাংলাদেশে নার্স রুনুকে দিয়ে টিকাকরণ শুরু

0

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বহু প্রতীক্ষিত টিকাদান কার্যক্রম শুরু হল।

করোনা মহামারীতে মৃত্যু, শোক ও সঙ্কটের একটি বছর পেরিয়ে এসে আজ টিকাকরণ শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে সরকার আশা করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার বিকেলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ভিডিও কনফারেন্সে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রথম পাঁচজনকে টিকা দেয়া দেখেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, শিগগির সারা দেশে টিকা দেয়া শুরু হবে, যাতে দেশের মানুষ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পায়।

টিকা নেয়ার আগে রুনুকে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার ভয় লাগছে না তো?’ উত্তরে রুনু ‘না’ বললে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব সাহসী তুমি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি আরও বেশি করে রোগীদের সেবা কর।’

রুনুর পর টিকা নেন চিকিৎসক আহমেদ লুৎফুল মোবিন।

এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, “নার্ভাস লাগছে না তো নাসিমা?” জবাবে সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, “না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।”

নাসিমা সুলতানাকে টিকা পুশ করার সময় প্রধামন্ত্রীকে মাইক্রোফোনে বলতে শোনা যায়, “মাসল রিল্যাক্স করতে হবে।”

তারপর টিকা নিতে আসেন দিদারুল ইসলাম নামে মতিঝিল ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা। প্রধানমন্ত্রী তার উদ্দেশ্যে বলেন, “পুলিশ অনেক কাজ করেছে। বলার মতো না। অনেক সার্ভিস দিয়েছে।”

দিদারুলের পর টিকা নিতে আসেন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। তিনিও টিকা নিয়ে শেষ অন্য সবার মতো প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

আজ পাঁচজনসহ ২৫ জনকে টিকা দেয়া হচ্ছে, যাদের মধ্যে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ রয়েছেন বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পাঁচ হাসপাতালে প্রথম সারির পাঁচ শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেয়া হবে। কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও আগামীকাল স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল।

টিকাদান কর্মসূচি শুরুর মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। একইসঙ্গে টিকার মাধ্যমে করোনা মহামারি মোকাবিলার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ।

৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকাদান শুরু হবে। করোনার টিকাদান কত দিন চলবে, তা এখনো কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।

উদ্বোধনের পর দেশের মানুষকে টিকা পেতে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারাও টিকাদানকেন্দ্রে যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন।

করোনার টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করতে হবে ‘সুরক্ষা’ নামক ওয়েব পোর্টালে (www.surokkha.gov.bd)। অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল প্লে স্টোর থেকে সুরক্ষা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করেও করা যাবে নিবন্ধন।

দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি যখন অনেকটাই কমে এসেছে, তখন টিকা দেয়া শুরু হলো। তবে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব এখনো করোনা মহামারির ঝুঁকিতে রয়েছে। কোনো কোনো দেশে পুনরায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। কিছু দেশে বাধ্যতামূলকভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। কোনো দেশে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের (ধরন) বিস্তার দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

দেশের বেশির ভাগ মানুষ করোনার টিকা নিতে আগ্রহী। তবে বড় অংশ এখনই নয়, কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস অপেক্ষার পর টিকা নিতে চায়। করোনার টিকা নিয়ে মানুষের এই মনোভাব উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক জরিপে। এতে বলা হয়, ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। এখনই পেলে টিকা নেবেন ৩২ শতাংশ, অপেক্ষার পর নিতে চান ৫২ শতাংশ, আর কখনোই টিকা নেবেন না ১৬ শতাংশ মানুষ। জরিপের এ ফল গতকাল মঙ্গলবার এক ওয়েবিনারে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টিকা প্রতিবছর লাখো মানুষের জীবন রক্ষা করে। দেশের সব মানুষের টিকা নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ। তার মতে, করোনা প্রতিহত করার পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক অস্ত্র হচ্ছে টিকা। আমি নিঃসংকোচে এ টিকা নেব।

বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা ও সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী সরকার তিন কোটি টিকা কিনছে সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে। বেক্সিমকো এ টিকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। গত সোমবার টিকার প্রথম চালান ৫০ লাখ টিকা দেশে আসে। এভাবে আরো পাঁচটি চালান আসার কথা। তার আগে গত বৃহস্পতিবার ভারতের উপহার হিসেবে দেশে ২০ লাখ টিকা আসে।

Share.