দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা কমছে, বাড়ছে সুস্থতা

0
দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা কমে সুস্থ হওয়ার হার বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ১৪ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ১৭৪ জন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৭০ জন। খবর বাসস।

গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ২৩৮ জন। শনাক্তকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৮শ’ জন সুস্থ আছেন, যাদের মধ্যে লক্ষণ উপসর্গ নেই। কিন্তু পরপর দুটি টেস্টের মধ্যে কারো হয়তো একটি টেস্ট হয়েছে, কারো হয়তো হয়নি। আবার কারো হয়তো একটিও টেস্ট হয়নি। কারণ এখানে সময়ের বিষয়। লক্ষণ উপসর্গ সম্পূর্ণ নিরাময়ের পরই আমরা পুনরায় টেস্টগুলো করি। এই ৮শ’ জন আছেন যাদের অনেকে বাসায় আছেন, আবার হাসপাতালে থেকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

তিনি জানান, দেশে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আরও ৫৭১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৮ হাজার ২৩৮ জন।

গতকালের চেয়ে আজ আক্রান্ত ৭ জন বেশি। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫৬৪ জন। গতকালের চেয়ে আজ নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর নমুনা সংগ্রহ বেড়েছে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি।

ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৯৫৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৫ হাজার ৬২৬টি। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৩১টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৩টি। আগের দিন পরীক্ষা হয়েছিল ৪ হাজার ৯৬৫টি। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭০ হাজার ২৩৯টি।’

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ২ জন মারা গেছেন তার মধ্যে ১ জন পুরুষ ও ১ জন নারী। মৃতদের মধ্যে একজন ষাটোর্ধ্ব। আরেকজন ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী। মৃতদের ১ জন ঢাকার, আরেকজন ঢাকার বাইরের।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১৭৫ জনকে। এখন পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ৫২২ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭৩ জন। মোট ছাড় পেয়েছেন ৯৬৪ জন।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন সব মিলিয়ে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৩৮১ জনকে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯০০ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৬২ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৭০ হাজার ৪৪১ জন। যারা কোয়ারেন্টাইন মুক্ত হচ্ছেন তাদের সাথে অপরাধীর মতো আচরণ না করে মানবিক আচরণ করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

নাসিমা সুলতানা জানান, সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৯ হাজার ৭৩৮টি। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ৩ হাজার ৯৪৪টি। ঢাকা সিটির বাহিরে শয্যা রয়েছে ৫ হাজার ৬৯৪টি। আর দেশে আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে ৩৪৯টি, ডায়ালাসিস ইউনিট রয়েছে ১০২টি।

তিনি জানান, সারাদেশের ৬৪ জেলা এবং সেখানকার উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬০১টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ হাজার ৬৩৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন সেবা দেয়া যাবে।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ৯৭ হাজার ৬৫৫টি। বিতরণ হয়েছে ৩১ হাজার ৩৩০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯২টি। বিতরণ করা হয়েছে ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৮টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৬৪টি মজুদ রয়েছে।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ৭৪ হাজার ২০৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৬ জনকে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ও ওয়েবসাইটে গত ২৪ ঘন্টায় ২৯ হাজার ১৭৪ জন এবং এ পর্যন্ত ১৬ লাখ ২৬ হাজার ১০৪ জনকে স্বাস্থ্য পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৫৫২ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন আরও ৩১ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২৮ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।

ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৬১৪ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৭৭ হাজার ২৫০ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

ব্রিফিংয়ের শুরুতে তিনি করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে, তাদের নাম উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।

Share.