তৃষ্ণার সমান পানি, জীবনের প্রয়োজনে কখনও এর বেশি নয়

0

শুধু বিশুদ্ধ ও পরিমিত পানি পানে অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। বিষয়টি প্রমান করেছে জাপানের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। এ কারণে জাপানিদের মধ্যে নিয়ম মেনে পানি পান করার রেওয়াজ রয়েছে।

দেশটির চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, পরিমিত পানি পান করে অনেক সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, ব্যথা বা যন্ত্রণা, হার্টের রোগ, দ্রুত হৃৎস্পন্দন, অতিরিক্ত ওজন, অ্যাজমা, টিবি, কফ, মেনিনজাইটিস, কিডনি ও মূত্রবিষয়ক রোগ ইত্যাদি। আরও রয়েছে বমি, গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস, চোখের নানা রোগ, ক্যানসার, মস্তিষ্কের সমস্যাজনিত সব ধরনের রোগ, কান, নাক ও গলার সব ধরনের সমস্যা।

-দেহে পানি থাকার আদর্শ পরিমাপ-
* আমাদের দেহের ৭২ ভাগ পানি।
* রক্তের ৮৩ ভাগ পানি।
* হাড়ের ২২ ভাগ পানি।
* মস্তিষ্কের ৭৪ ভাগ পানি।
* পেশির ৭৫ ভাগ।
* চোখের ৮০ ভাগ।

এ হিসেবে দেহের দুই-তৃতীয়াংশই পানি।

দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্ম সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন পানি।
-দেহের অভ্যন্তরে পানি যেসব কাজ করে-
* পানি রক্ত ও কোষে অক্সিজেনসহ অন্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।
* রক্ত সরবরাহ ও সঞ্চালন বাড়ে।
* দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। পানির অভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
* হজম শক্তি বাড়ায় ও হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে।

-পরিমিত পানি পানের উপকারিতা-
* পানি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। ঠিকমতো পান না করলে শরীর সব পানি শুষে নেয়, এতে কোলন শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ঠিকমতো নির্গত হয় না। তাই পানির পরিমাণ ঠিক থাকলে কোলনে কোনো বর্জ্য জমতে পারে না।

* কিডনির পাথর হওয়া থেকে বাঁচায়। কারণ, পানি ইউরিনের লবণ ও খনিজ ভেঙে দেয়। ফলে কিডনিতে পাথর হয় না।

* একটু পরপর পানি পান করলে তাই মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং শারীরিক শক্তি বাড়ে।

* পানি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, তাই উচ্চ রক্তচাপ কমে।

* দেহে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, বলিরেখা দূর করে।

* ত্বকে টক্সিন জমতে দেয় না। স্বাভাবিক রঙের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।

* চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

অক্সিজেনের পর পানি মানুষের জীবনধারণের জন্য দ্বিতীয় উপাদান। অক্সিজেনের ২৫ ভাগ আসে পানি থেকে। মাথাব্যথার অনেক কারণের একটি পানিশূন্যতা। এজন্য দুই গ্লাস পানি খেয়ে ২০ মিনিট বিশ্রাম নিন। মাথাব্যথা থাকবে না।

-পানি পানের আদর্শ পদ্ধতি-
* ভোরে উঠে দাঁত ব্রাশ করার আগে ৬০০ মিলি (তিন গ্লাস) কুসুম গরম পানি পান করতে হবে। এরপর এক ঘণ্টা পেট খালি রাখতে হবে। এই তিন গ্লাসের মধ্যে মাঝের গ্লাসে এক টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে পানি পান করুন।

* সারা দিনে আরও ৮ গ্লাস পানি পান করুন। সারা দিনের পানি এক গ্লাস একসঙ্গে না খেয়ে ধীরে ধীরে পান করুন।

* খাবারের সঙ্গে সঙ্গে পানি পান করা উচিত নয়। প্রতিবার খাবার শেষ করে ৩০ মিনিট পর এক গ্লাস পানি পানের অভ্যাস করুন।

* শরীর খারাপ লাগলে কিংবা জ্বর জ্বর ভাব হলে কোনো খাবার না খেয়ে ঘণ্টায় এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানি পান করুন। ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে বুঝতে পারবেন পানি কী উপকার করেছে।

-দেহের মাপ অনুসারে পানি পান-
আমরা প্রতিদিন নানাভাবে (প্রস্রাব, ঘাম, শ্বাসপ্রশ্বাস ইত্যাদি) দেহ থেকে পানি বের করি। ফুসফুস থেকে নিশ্বাসের সঙ্গে দৈনিক দুই থেকে চার কাপ পানি বের হয়ে যায়। দৈনিক ছয়বার ওয়াশরুমে গেলে আরও ছয় কাপ পানি দেহ থেকে কমে যায়। তাই প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করতে হবে, তা দেহের উচ্চতা ও কাজের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে।

সবার জন্য একই মাপে পানি পান করা যাবে না। এখন পর্যন্ত যে আদর্শ মাপটি রয়েছে, তা হল- কেজি হিসেবে দেহের ওজনকে ৩০ দিয়ে ভাগ করতে হবে। ভাগফলের পরিমাণ অনুযায়ী পানি পান করুন। অর্থাৎ আপনার ওজন ৬০ কেজি হলে (৬০/৩০ = ২) ২ লিটার পানি পান করতে হবে। এর অর্থ হলো, প্রতিদিন ৮ গ্লাসের (প্রতি গ্লাস ২০০ মিলি) অধিক পানি পান করা বাঞ্ছনীয়।

-অতিরিক্ত পানি মানে বিষ-
বেশি পানি পান করলে হতে পারে:
* বমি বমি ভাব
* ঘুম ঘুম ভাব
* ক্লান্তি
* অতিরিক্ত প্রস্রাব
* মাথাব্যথা
* বুকে ব্যথা
* লিভারের সমস্যা
* পেটে যন্ত্রণা
* হার্ট অ্যাটাক
* মৃত্যুও

চাপ পড়ে:
* হার্টের ওপর

এছাড়া
* কিডনির ছাঁকনি প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায় অতিরিক্ত পানি
* শরীরের কোষ ফুলতে থাকে
* মাথার কোষও ফুলে যেতে পারে, পরিণাম ব্রেন স্ট্রোক।

এ প্রসঙ্গে জাপানের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়েছেন, কখনও একসঙ্গে অনেক পানি পান করা যাবে না।

ভারী পরিশ্রম অথবা ব্যায়ামের সময় সবারই একটু একটু পানি পান করা উচিত।

যতটুকু তৃষ্ণা ততটুকু পানি বা তৃষ্ণার সমান পানি পান করতে হবে। কখনও তার চেয়ে বেশি নয়।

বেশি হলে পানির অপর নাম কেবল জীবন নয়, তা হতে পারে মরণও।

Share.