জেনে রাখতে পারেন বয়:সন্ধির কিছু বিষয়

0

য়:সন্ধি একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে একটি শিশুর শরীর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে রূপান্তরিত হয়। প্রজননের সক্ষমতা লাভ করে। মস্তিষ্ক থেকে গোনাডে (ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয়) হরমোন সংকেত যাওযার মাধ্যমে এর সূচনা হয়।

ফলশ্রুতিতে গোনাড নানা ধরনের হরমোন উৎপাদন শুরু করে। ফলে মস্তিষ্ক, অস্থি, পেশি, ত্বক, স্তন ও জনন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি শুরু হয়। বয়ঃসন্ধির মধ্যভাগে এই বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। বয়ঃসন্ধি শেষ হওয়ার মাধ্যমে এ বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয়।

বয়ঃসন্ধি শুরুর পূর্বে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্য প্রায় সম্পূর্ণটাই বলতে গেলে শুধু যৌনাঙ্গের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকে। বয়ঃসন্ধির সময়, শরীরের গঠনের আকার-আকৃতি, গুরুত্ব ও কাজে প্রধান পার্থক্যগুলো প্রতীয়মান হয়। এদের মধ্যে খুবই অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনগুলোকে সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য বলা হয়।

কেন হয়?
নারী ও পুরুষ উভয়ের জীবনে বিভিন্ন সময়ে যৌবনের সঞ্চার ঘটে থাকে। তবে যৌবন আগমন উভয়ের ঠিক একই সময়ে ঘটে না- বিভিন্ন সময়ে ঘটে। নারীর যৌবন আগমন ঘটে আগে- পুরুষের ঘটে কিছু পারে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে পুরুষের যৌবন আগমন ঘটে আঠারো থেকে কুড়ি বছরের মধ্যে। শীতপ্রধান দেশে- অর্থাৎ যুবকদের যৌবন আগমন ঘটে বাইশ থেকে পঁচিশ বছর বয়সে। নারীর যৌবন আগমন ঘটে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে চৌদ্দ থেকে ষোল বছর বয়সে- আর শীতপ্রধান দেশে আঠারো থেকে বিশের মধ্যে। আর নারী ও পুরুষের যৌবনের আগমনই হলো বয়:সন্ধিকাল।
আক্ষরিক অর্থে বয়ঃসন্ধি বলতে বোঝায় যৌন পরিপক্কতার জন্য শরীরে যেসকল পরিবর্তন আসে সেটাকে। বয়ঃসন্ধিকালের উন্নতিতে মনোসামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা এর অন্তর্ভুক্ত নয়। বয়ঃসন্ধিকাল হচ্ছে শৈশব ও সাবালকত্বের মধ্যবর্তী একটি মানসিক ও সামাজিক ক্রান্তিকাল। বয়ঃসন্ধিকাল, বয়ঃসন্ধির সময় দ্বারা প্রভাবিত হয় বটে কিন্তু এটা আলোচনার সীমারেখা যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের ব্যাপারে আলোচনার ক্ষেত্রে কৈশোর সময়কার শারীরিক পরিবর্তনের চেয়ে সেই সময়ের মনোসামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং আচার-আচরণের বিকাশকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।

ছেলে ও মেয়ের বয়ঃসন্ধির মধ্যে পার্থক্য
ছেলের ও মেয়ের বয়ঃসন্ধির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যগুলোর মধ্যে দুটির শুরু হয় বয়ঃসন্ধি শুরুর সঙ্গেই। এতে প্রধান প্রধান যৌন স্টেরয়েডগুলো সংশ্লিষ্ট।

এর মধ্যে রয়েছে:
১. ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন – FSH
২. ল্যুটিনাইজিং হরমোন – LH
৩. প্রজেস্টেরন
৪. ইস্ট্রেজেন
৫. হাইপোথ্যালামাস
৬. পিটুইটারি গ্রন্থি
৭. ডিম্বাশয়
৮. গর্ভধারণ – hCG (মানুষের কোরিওনিক গোনাড্রোট্রোপিন)
৯. টেস্টেস্টেরন
১০. শুক্রাশয়
১১. ইনসেনটিভ্স
১২. প্রোল্যাকটিন – PRL

যদিও বয়ঃসন্ধি শুরুর সাধারণ বয়সসীমার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য রয়েছে, কিন্তু গড়পড়তা মেয়েদের বয়ঃসন্ধির প্রক্রিয়া ছেলেদের ১-২ বছর আগে শুরু হয় (গড় বয়স: মেয়েদের ৯-১৪ বছর, এবং ছেলেদের ১০-১৭ বছর) এবং অল্পসময়ের মাঝেই সম্পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়। সাধারণত বয়ঃসন্ধির প্রথম লক্ষণ দেখা দেয়ার চার বছরের মধ্যেই মেয়েরা তাদের উচ্চতা ও প্রজনন পরিপূর্ণতা লাভ করে। এক্ষেত্রে তুলনামূলক ছেলেদের বৃদ্ধিটা হয় একটু ধীরে, কিন্তু সাধারণত বয়ঃসন্ধির পরিবর্তন শুরুর ছয় বছরের মধ্যে তারাও পরিপূর্ণতা লাভ করে।

পুরুষের ক্ষেত্রে, টেস্টোস্টেরনের অ্যান্ড্রোজেন হলো প্রধান যৌন স্টেরয়েড। অল্পসময়ের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের প্রভাবে সব পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে। পুরুষে টেস্টোস্টেরনের রাসায়নিক রূপান্তরের ফলে অন্যতম যে স্টেরয়েড উৎপন্ন হয় তা হলো এস্ট্রাডিওল। যদিও এর সীমাবৃদ্ধি ঘটে মেয়েদের চেয়ে অনেক ধীরে ও দেরিতে।

ছেলেদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় মেয়েদের তুলনায় আরও পরে, অনেক ধীরে, এবং এপিফিসেস জোড়া না লাগার আগ পর্যন্ত এ বৃদ্ধি বিদ্যমান থাকে।

বয়ঃসন্ধি শুরু হবার আগে উচ্চতায় ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় ২ সে.মি. খাটো থাকলেও একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার তুলনায় গড়ে ১৩ সে.মি. (৫.২ ইঞ্চি) খাটো।

মেয়েদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধিটা নির্ধারিত হয় এস্ট্রাডিওল ও ইস্ট্রোজেন হরমোন দ্বারা। যেখানে এস্ট্রাডিওল স্তন ও জরায়ুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটা প্রধান হরমোন যা বয়ঃসন্ধিকালীন বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং এপিফিসিয়াল পরিপক্কতা ঘটায় এবং সম্পূর্ণ করে। ছেলেদের চেয়ে এস্ট্রাডিওল সীমার বৃদ্ধি মেয়েদের বেশি ও আগে হয়।

বয়ঃসন্ধির প্রারম্ভ
বয়ঃসন্ধির শুরু হয় জিএনআরএইচ-এর উচ্চ স্পন্দনের মাধ্যমে, যা যৌন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়। জিএনআরএইচ বৃদ্ধির কারণ ধারবাহিকভাবে চলতে থাকে।

বয়ঃসন্ধি সাধারণত পুরুষের ৫৫ কেজি ও মেয়েদের ৪৭ কেজি ওজনে শুরু হয়। শরীরের ওজনের এ পার্থক্যের কারণ জিএনআরএইচ বৃদ্ধি, যা লেপ্টিনের (এক প্রকার প্রোটিন হরমোন) চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। এটা জানা যে হাইপোথ্যালামাসে লেপ্টিন গ্রহীতা হিসেবে কাজ করে, যেগুলো জিএনআরএইচ সংশ্লেষ করে। দেখা যায় যাদের লেপ্টিন উদ্দীপ্ত হতে দেরি হয় তাদের বয়ঃসন্ধি শুরু হতেও দেরি হয়। লেপ্টিনের পরিবর্তন বয়ঃসন্ধির প্রারম্ভেই শুরু হয়, এবং প্রাপ্তবয়স্কতাপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়। যদিও বয়ঃসন্ধির শুরুর সময় বংশানুক্রমিক কারণেও পরিবর্তিত হতে পারে।

Share.