জাপানে করোনা ফিরে আসার আতঙ্ক

0

বিশ্ব অর্থনীতি ডেস্ক: করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে টোকিওর রাজপথ প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম হচ্ছে মনে করার মুহূর্তে উভয় দেশে নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় করোনা ফিরে আসা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন জাপান। দেশটি অবশ্য সার্বিকভাবে এখনও সংক্রমণের রাশ টেনে ধরতে না পারলেও মনে করা হচ্ছিল উত্তরের জেলা হোক্কাইডো হয়তো সংক্রমণের গতি কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। সেই হোক্কাইডোতে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে আবারও জরুরী অবস্থা জারি হচ্ছে।

জাপানে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকটি সংক্রমণ শনাক্ত হয়। হোক্কাইডোর গভর্নর ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা জুড়ে জরুরী অবস্থা জারি করেছিলেন। জরুরী অবস্থা চলাকালীন লোকজনকে যতটা সম্ভব ঘরে সময় কাটানোর উপদেশ দেওয়া হয়েছিল। স্কুল–কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। আদেশ ফলপ্রসূ হওয়ায় জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমে আসতে শুরু করে। ফলে ১৯ মার্চ গভর্নর জরুরী অবস্থা তুলে নেন। তবে এখন আবার হোক্কাইডোতে নতুন করে করোনাভাইরাস বিস্তৃত হতে শুরু করেছে। তাই জেলার স্কুলগুলো মাত্র শুরু হওয়ার মুখে হোক্কাইডোর গভর্নর নাওমিচি সুজুকি ও জেলার প্রধান শহর সাপ্পোরোর মেয়র কাৎসুহিরো আকিমোতো আজ এক যৌথ ঘোষণায় আগামীকাল থেকে হোক্কাইডোতে আবারও জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছেন। আগামী ৬ মে পর্যন্ত জরুরী অবস্থা বহাল থাকবে।

প্রথমবারের জরুরী অবস্থা কার্যকর প্রমাণিত হওয়ার পর ৯ এপ্রিল থেকে হোক্কাইডোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। চারদিনে চল্লিশটির কাছাকাছি সংক্রমণ নিশ্চিত হলে জেলা নেতারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসেন। জেলার সবকয়টি প্রাইমারি, জুনিয়ার ও হাই স্কুল জরুরী অবস্থার পুরো সময় ধরে বন্ধ রাখা হবে। এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ যতটা সম্ভব ঘরে বসে কাজ করা এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো এড়িয়ে চলার উপদেশ নেতৃবৃন্দ জেলার অধিবাসীদের দিয়েছেন। গভর্নর সুজুকি বলেছেন, তাদের ঘোষিত জরুরী অবস্থার আইনগত ভিত্তি না থাকলেও এই আশায় সেই পদক্ষেপ তারা নিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত জরুরী অবস্থার বিস্তৃতি সম্প্রসারিত করে নিয়ে হোক্কাইডোকেও এর আওতায় নিয়ে আসতে সরকারের উপর এটা চাপ প্রয়োগ করবে।

এদিকে জাপানে আজ করোনাভাইরাস সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার দৈনিক হিসাবে কিছুটা অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেলেও হোক্কাইডোর পাশাপাশি চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা সংবাদ নীতি নির্ধারকদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ভাইরাস বিস্তৃত হওয়ার একটি ধাক্কা সামলে উঠার পর নতুন করে সংক্রমণের আঘাত আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে যে রোগের চিকিৎসায় ব্যবহারের ওষুধ দ্রুত আবিষ্কার করা এখন অনেক বেশি জরুরী হয়ে উঠেছে।

জাপানের একদল গবেষক এদিকে স্বাস্থ্য সেবা কর্মীরা যেন থ্রি-ডি বা ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার ব্যবহার করে নিজেরা ভেন্টিলেটর যন্ত্র তৈরি করে নিতে পারেন, সেজন্য যন্ত্রের ব্লু-প্রিন্ট বিনামূল্যে সরবরাহের উদ্যোগ নিচ্ছেন। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে বিশ্বজুড়ে ভেন্টিলেটরের ঘাটতি পূরণ করে নেওয়ার চিন্তা থেকে জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা এই উদ্যোগ শুরু করেন। যান্ত্রিক শ্বাসযন্ত্রের বিকল্প এই ভেন্টিলেটর ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারে ছাপা হয়ে যাওয়া চারটি ভিন্ন অংশ থেকে সংযোজন করে নেওয়া সম্ভব। স্প্রিং সংযুক্ত থাকা শ্বাসযন্ত্রটি বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই বাতাসের চাপে কাজ করে।

নিইগাতা হাসপাতালের চিকিৎসক নাওইয়ুকি ইশিকিতা মহাকাশ গবেষণায় ব্যবহারের জন্য ২০১৭ সালে এটা আবিষ্কার করেছিলেন। পরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে একটি থ্রি-ডি প্রিন্টার ব্যবহার করে সফলভাবে এ ভেন্টিলেটর যন্ত্র তৈরি করে নেয়া হয়। সরকারের অনুমোদন লাভের পর একটি চিকিৎসা যন্ত্র হিসেবে যান্ত্রিক এ ভেন্টিলেটর ব্যবহারের অনুমতি লাভের জন্য আবেদন জানানোর পরিকল্পনা ইশিকিতা ও দলের অন্যান্য গবেষকরা করছেন।

Share.