পায়ের গোড়ালিতে একটি টেনডন বা রগ আছে, যার নাম অ্যাকিলিস টেনডন। এর শেষ মাথায় বারবার চাপ বা টান লাগলে মাইক্রোট্রমা বা ছোট ছোট আঘাতের কারণে গোড়ালিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এতে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হয়। সাধারণত ৭ থেকে ১০ বছরের শিশুদের এটি বেশি হয়। এ সমস্যাকে ক্যালকেনিও অ্যাপোফাইসাইটিসও বলে।
কারণ
আঘাত, দৌড়াদৌড়ি, লাফ দেওয়া, অতিরিক্ত শক্ত সমতলে হাঁটা, শক্ত জুতা পরা, শক্ত ব্যান্ডেজ, খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস, হ্যালাক্স ভ্যারাস, হ্যালাস ভ্যালগাস ধরনের ত্রুটি, পেস প্লানাস, পেস ক্যাভাস, স্থূলতা ইত্যাদি।
লক্ষণ
সকালে সাধারণত গোড়ালিতে কোনো ব্যথা থাকে না। কিছুক্ষণ হাঁটা-চলার পর আস্তে আস্তে ব্যথা বাড়ে। পায়ের গোড়ালির পেছনের দিকে ব্যথা করে, এমনকি সামান্য ফুলতে পারে। পায়ের গোড়ালির পেছনের দিকে চাপ দিলে ব্যথা অনুভব হবে। দিনের শেষ বেলায় শিশুটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। পায়ের পাতা ওপরের দিকে তুলতে সমস্যা হয়।
শনাক্ত করার উপায়
সমস্যার ধরন সম্পর্কে ভালোভাবে শুনতে হবে। চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করলে অনেকটা বুঝতে পারেন। বিশেষ একটি পরীক্ষা করা হয়, যার নাম স্কুইজ টেস্ট। পায়ের গোড়ালির ক্যালকেনিয়াসের পেছন থেকে ভেতরের দিকে এবং বাইরের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনী আঙুল দিয়ে চাপ দিয়ে কতটা ব্যথা হচ্ছে, তা দেখা হয়। পায়ের এক্স-রে করে অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। প্রয়োজনে মাস্কুলোস্কেলেটাল আলট্রাসাউন্ড করা হয়।
চিকিৎসা
পায়ের গোড়ালির নড়াচড়া কম করা ও অর্থোসিস বা হিল কুশন ব্যবহার করা। প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে বরফ ব্যবহার করা যায়। ব্যথা ও ফোলা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ বা প্রদাহরোধী ওষুধ সেবন করা যায়। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ইলেকট্রোথেরাপির নানা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। পায়ের পেছনের মাংসপেশির স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে মায়োফেসিয়াল রিলিজ ও স্ট্রেচিং করা যেতে পারে। ব্যথার তীব্রতা এবং কত দিনের সমস্যা, তা বিবেচনায় নিয়ে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি, ইনটেনসিটিতে আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া পায়ে চাপ কমাতে ট্যাপিং করা হয়, যতটা সম্ভব স্যান্ডেল পরতে হবে। ইনফিলট্রেশন বা কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এতে অ্যাকিলিস টেনডন ছিঁড়ে যেতে পারে। ♦
কৃতজ্ঞতা: সাইফুল ইসলাম, ফিজিওথেরাপিস্ট, আশা সমন্বিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মহিপুর, পটুয়াখালী
