নতুন চাঁদ গতকাল মঙ্গলবার পশ্চিমাকাশে উঁকি দিয়েছে। আবারও বছর ঘুরে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান।
এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো সংযম সাধনার মাস।
খোশ আমদেদ মাহে রমজান।
পরকালীন পাথেয় অর্জনের অভাবনীয় মৌসুম এ মাস। সিয়াম-সাধনা, ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার এবং তাজকিয়া ও আত্মশুদ্ধির ভরা বসন্ত এ সময়।
রোজা ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। দীর্ঘ ১১ মাসের পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ এনে দেয় এ মাস। রোজা ইসলামের মৌলিক ইবাদতের মধ্যে অন্যতম।
গতকাল রাতে এশার নামাজের পরপরই মুসল্লিরা তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। কেউ মসজিদে, কেউবা ঘরে।
ভোররাতে সেহরি খেয়ে রোজা শুরু করেছেন রোজাদাররা।
আজ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ায় মসজিদে সর্বোচ্চ ২০ জন তারাবির নামাজ পড়তে পারবেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
ঢাকায় প্রথম দিন সেহরির শেষ সময় ছিল রাত ৪টা ১৫ মিনিট। প্রথম রোজায় ইফতারের সময় ছিল ৬টা ২৩ মিনিট। বহু ফজিলত ও পুণ্যময় বৈশিষ্ট্যে ভরা এ মাসটিতেই পবিত্র কোরআন শরীফ নাজিল হয়।
রমজানেই রয়েছে সহস্র মাসের চেয়ে সেরা একটি রাত-লাইলাতুল কদর। ৯ মে দিবাগত রাতে পবিত্র লাইলাতুল কদর পালিত হবে। তবে এই মহামহিমান্বিত রাতটি আসবে রমজানের শেষ ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে। সেটা ২১ রমজান থেকে ২৯ রমজানের যে কোনো রাতে হতে পারে। এই মাসের নাম এসেছে আরবি ‘রামাদ’ শব্দ থেকে। এর অর্থ ‘তপ্ত’ বা ‘শুষ্কতা’।
প্রথম রমজান মাস পালিত হয়েছিল গ্রীষ্মে, সে জন্যই এমন নামকরণ করা হয়েছে। নামকরণের আরেকটি প্রতীকী কারণ হচ্ছে, গ্রীষ্মের সূর্য যেমন পৃথিবীকে দগ্ধ করে, তেমনি এ মাস সব পাপ পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।
রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, কারণ এটি শরীরে কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
প্রতি বছর কোটি মুসলমান রোজা রাখেন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারে বিরত থেকে। এতে কেমন প্রভাব পড়ে তাদের শরীরে?
শেষবার খাবার খাওয়ার পর আট ঘন্টা পার না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত মানুষের শরীরে সে রোজার প্রভাব পড়ে না। কেননা যে কোনো খাবার পাকস্থলীতে তা পুরোপুরি হজম হতে ও এর পুষ্টি শোষণ করতে অন্তত আট ঘন্টা লাগে দেহের। যখন এই খাদ্য পুরোপুরি হজম হয়ে যায়, তখন দেহ যকৃৎ ও মাংসপেশীতে সঞ্চিত গ্লুকোজ তা থেকে শক্তি নেয়ার চেষ্টা করে।
শরীর যখন এই চর্বি খরচ করতে শুরু করে, তা ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। তবে এতে যেহেতু রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা কমে যায়, সে কারণে হয়তো কিছুটা দুর্বল ও ঝিমুনি ভাব আসতে পারে।এছাড়া কারও ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমিভাব বা নিশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে।
এ সময়টায় সবচেয়ে বেশি ক্ষুধা লাগে।
প্রথম কয়েকদিন পর দেহ যখন রোজায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে, তখন শরীরে চর্বি গলে গিয়ে তা রক্তের শর্করায় পরিণত হয়। রোজা ভাঙ্গার পর অবশ্যই প্রচুর পানি পান করতে হবে। আর সব ধরণের খাবার শক্তিদায়ক হতে হবে। যেমন কার্বোহাইড্রেট, শর্করা ও চর্বি।
সুষম বা ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে যেন সব ধরণের পুষ্টি, প্রোটিন বা আমিষ, লবণ ও পানি থাকে।
প্রথম সপ্তাহ কাটিয়ে ওঠার পর ৮ হতে ১৫ রোজায় অভ্যস্ত হয়ে উঠে শরীর। এ পর্যায়ে শরীর-মনে ভালো লাগা শুরু করে।
রোজা দেহের ক্ষত সারিয়ে তোলা বা সংক্রমণ রোধে সাহায্য করতে পারে।
এরপর ১৬ থেকে ৩০ রোজায় ভারমুক্ত হয় দেহ। রমজানের দ্বিতীয়ার্ধে শরীর পুরোপুরি রোজার সঙ্গে মানিয়ে নেয়। দেহের পাচকতন্ত্র, যকৃৎ, কিডনি ও দেহত্বক এখন এক ধরণের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাবে। সেখানে থেকে সব দূষিত বস্তু বেরিয়ে দেহ শুদ্ধ হয়ে উঠবে। ♦