স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।…’
– সুকান্ত ভট্টাচার্য, ছাড়পত্র
আঠারো বছরের আগেই দ্রোহী সত্ত্বা ভর করেছিল ক্ষুদিরাম বসুর ওপর। মাতৃভূমি দখলদার বেনিয়ামুক্ত করতে কোনো আপোষের পথে তিনি হাঁটেননি। নৃশংস শাসন কাঠামোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সশস্ত্র হওয়াই তাঁর কাছে অনিবার্য মনে হয়েছে।
কৈশোরের ভাবালুতা স্পর্শ করেনি ক্ষুদিরামকে। একের পর এক বিপ্লবী সক্রিয়তায় নিষ্ঠ ছিলেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখ করা যায় কিছু।
১৯০৬ সালের মার্চে মেদিনীপুরের এক কৃষি ও শিল্পমেলায় রাজদ্রোহমূলক ইশতেহার বিতরণের সময় ক্ষুদিরাম প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
এর পরের মাসে একই রকম এক দুঃসাহসী কাজের জন্য তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং আদালতে বিচারের সম্মুখীন হন। কিন্তু বয়স অল্প- এই বিবেচনায় তিনি মুক্তি পান।
১৯০৭ সালে হাটগাছায় ডাকের থলি লুট ও একই বছর ৬ ডিসেম্বর নারায়ণগড় রেল স্টেশনের কাছে বঙ্গের ছোটলাটের বিশেষ রেলগাড়িতে বোমা আক্রমণের ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। একই বছর মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত এক রাজনৈতিক সভায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যপন্থি রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এর আগে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো ও ইংল্যান্ড থেকে আমদানি লবণ বোঝাই নৌকা ডোবানোর কাজে ক্ষুদিরাম অংশ নেন। বিপ্লবের ডাকে বারবার সাড়া দিয়ে এমনই কাটে তাঁর কিশোরবেলা।
কঠোর সাজা ও দমননীতির কারণে তৎকালিন কলকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড বাঙালিদের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। যুগান্তর বিপ্লবী দল ১৯০৮ সালে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরামের উপর এ দায়িত্ব পড়ে।
ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকি একসঙ্গে একটি গাড়িতে কিংসফোর্ড আছে ভেবে বোমা ছুঁড়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড ছিলেন অন্য এক গাড়িতে। এ ঘটনায় দু’জন ব্রিটিশ নারীর মৃত্যু হয়। প্রফুল্ল চাকি গ্রেফতারের আগেই আত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম গ্রেফতার হন। পুলিশি হেফাজতে অকথ্য অত্যাচার চলে তাঁর ওপর। হত্যার দায়ে বিচার হয় এবং চূড়ান্তভাবে ফাঁসির আদেশ হয়।
ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন। এ কারণে তিনি ভারতবর্ষের কনিষ্ঠতম বিপ্লবী শহীদ অভিধায় আখ্যায়িত হন।
আজ সেই ১১ আগস্ট। ১৯০৮ সালের এদিন আলিপুর জেলে ক্ষুদিরামের ফাঁসি কার্যকর হয়।
তাঁর আত্মত্যাগ নিয়েই রচিত হয় গান ‘একবার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি…। এ সঙ্গীতও প্রেরণা জোগায় সব সংগ্রামে।
আজকের দিনের ক্যারিয়ার সর্বস্ব ও রাজনীতি বিমুখ তারুণ্যের কাছে বিপ্লবী ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগ বিশেষ প্রেরণা হয়ে উঠতে পারে। সুদিনের জন্যই তো আগুন জ্বেলেছিলেন তিনি। এই মনটা তাই আশা করে যায়, ক্ষুদিরামই হোক আমাদের আইকন।
অগণন শ্রদ্ধা তাঁর প্রতি। ♦
::: হাসান শাওন, লেখক ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক