বার্সেলোনা কি শুধু খেলার দল ছিল লিওনেল মেসির কাছে? মাঠ জুড়ে পিকে, ফ্যাব্রিগাস, জাভি ও ইনিয়েস্তার সঙ্গে কী যৌথতাই না ছিল! তা হবে নাই বা কেন? এই তারকাদের প্রায় সবাই তো লা মেসিয়ার শিক্ষা ভূমির একনিষ্ঠ ছাত্র। কিন্তু এই লা মেসিয়া পর্যন্ত আসা লিওর জন্য সুলভ ছিল না।
১০ বছর বয়সে তাঁর ফুটবল যাত্রা শেষ হতে পারতো। দুরারোগ্য হরমোনজনিত ব্যাধি ধরা পড়ে, যার চিকিৎসায় লাগবে মাসে ১ হাজার ডলার। কোত্থেকে আসবে টাকা? কোনো আর্জেন্টাইন ক্লাব দায়িত্ব নেয়নি।
মেসির পারিবারিক যোগসূত্র ছিল স্পেনের কাতালোনিয়ার সঙ্গে। সেখানে চলে যান পরিবারসহ। তাঁর ফুটবল শৈলীতে মুগ্ধ হন বার্সা জুনিয়র টিমের কর্তারা। একটি পেপার ন্যাপকিনে সাইনিং নিষ্পন্ন হয়।
এরপর থেকে নুক্যাম্প মেসির ঘর বাড়ি আর ঝোড়ো ফুটবলের সাক্ষী। এখনও চেপে রাখা কাতালোনিয়ার মুক্তি সংগ্রাম দাবায়া রাখা যাবে না। লিওসহ বার্সাও তো এ দাবিতে একাত্ম।
তবে এবারের বাস্তবতা ভিন্ন। ছেড়ে যেতে হচ্ছে মেসিকে শৈশব তীর্থভূমি ছেড়ে। তাঁর নতুন বসতি হচ্ছে প্যারিসে। এ ক্লাবে ভাতা মিলে বছরে কর বাদ দিয়ে ৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো।
ক্রীড়াঙ্গনে খেলা শৈলীর চেয়ে বিশাল যুক্ততা বাণিজ্যের। এ অর্থকড়ির জৌলুসে মাঠে বল গড়ায়। মহাতারকা মেসির বেলাও এমন ঘটছে।
মেসির পিএসজিতে অবতরণে ফরাসি ফুটবলের জনপ্রিয়তা ও টিভি দর্শক নি:সন্দেহে বাড়বে। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির শেয়ারবাজারেও।
রয়টার্সের খবরে প্রকাশ, ফরাসি টিভি গ্রুপ টিএফওয়ান ও চ্যানেল প্লাসের মালিক ভিভেন্দির শেয়ারের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১ দশমিক ৩ ও দশমিক ২ শতাংশ। সঙ্গে লিগ ওয়ানের দল অলিম্পিক লিওঁর শেয়ারের দাম বেড়েছে। এর পরিমাণ দশমিক ৯ শতাংশ।
অন্য দিকে বার্সায় কান্না ইউরোর মাতমে। দলের সেরা তারকা বিযুক্তিতে বিরাট আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বার্সা।
মেসির প্রস্থানে ক্লাবটির ব্র্যান্ড মূল্য ১৩৭ মিলিয়ন ইউরো কমে যাচ্ছে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ব্র্যান্ড ফাইন্যান্সের এক প্রতিবেদন মাফিক- মেসি চলে যাওয়ায় বার্সার ব্র্যান্ডের মূল্য ১১ শতাংশ হ্রাস পাবে। অর্থাৎ ২০২১ সালে তাদের নির্ধারিত ব্র্যান্ডের মূল্য থেকে ১৩৭ মিলিয়ন ইউরো হারাতে পারে বার্সা।
এছাড়া মার্কার প্রতিবেদন আরও জানায়, মেসির জার্সি ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে যে মুদ্রা আগে আসত সেটাও হারাতে হবে। স্পোটর্স ইকোনোমিস্টদের ভবিষ্যত বাণী বলছে, এর ফলে বাণিজ্যিক আয়ের ক্ষেত্রেও ৭৭ মিলিয়ন ইউরো হারাতে পারে স্প্যানিশ ক্লাবটি।
এর আগে ২০১৮ সালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যখন রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে চলে যান তখন শেয়ার বাজারে ক্লাবটির মূল্য ১৯ শতাংশ কমে যায়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বার্সেলোনা এক বিবৃতিতে জানায়, লা লিগার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের নিয়মের বাধার কারণে তাদের পক্ষে মেসির সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। মেসি হন বার্সাহীন।
বার্সেলোনার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার লিও মেসি। সব আসর মিলে কাতালান ক্লাবটির হয়ে ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোলের কৃতিত্ব এই ফুটবল নক্ষত্রের।
লিওনেল মেসির শোকেসে আছে ৬টি ব্যালন ডি’অর। ৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। ১০ টি লা লিগা শীর্ষের একচ্ছত্রতা। সেই সঙ্গে সব মিলিয়ে ৭৫০ টি সিনিয়র ক্যারিয়ার গোল। আর অগণন গোল অ্যাসিস্টের হিসেব তো সুপার কম্পিউটারও রাখতে অক্ষম।
তাই মেসিকে হারানো মানে বহুমাত্রিক ক্ষতি। কাতালানবাসী কাঁদছেন ঘরের ছেলে হারানোর শোকে। কিন্তু বার্সা কর্তারা নিমজ্জিত মিলিয়ন মুদ্রা হারানোর ভাবনায়। এ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ তাদেরই শনাক্ত করতে হবে। ♦
– হাসান শাওন