সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে রয়েছেন লিটন দাস। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও ঠিক সে রূপেই নিজেকে মেলে ধরেন এ ওপেনার। দলের বিপদের সময় বুক চিতিয়ে লড়াই করে তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি।
সে সুবাদে টাইগাররা পেয়ে গেল লড়াইয়ের পুঁজি। তার ওপর ভর করে সাকিব আল হাসানের চমৎকার বোলিং নৈপুণ্যে সহজে জিম্বাবুয়েকে ১৫৫ রানে হারিয়েছে টিম টাইগার্স।
এ জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল।
আজ তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে বাংলাদেশ করে ৯ উইকেটে ২৭৬।
সফরকারীদের হয়ে সর্বোচ্চ ১০২ রান করেন লিটন দাস। আফিফ হোসেন খেলেন ঝড়ো ৪৫ রানের ইনিংস। এরপর বল হাতে স্বাগতিকদের ২৮.৫ ওভারে মাত্র ১২১ রানে গুটিয়ে দিয়ে সহজ জয় তুলে নেয় টিম বাংলাদেশ। বল হাতে সাকিব দেখান জাদু। এ তারকা নেন ২৩ রানে ৫ উইকেট।
ব্যাট হাতে মোটেও সময়টা ভাল যাচ্ছে না সাকিবের। তবে আজ এ তারকা জ্বলে ওঠেন বল হাতে। শুরুতে কিছুটা খেঁই হারান। তবে পরে নিজেকে ফিরে পান দ্রুত। জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড ভেঙে দেন তিনি। তাই জয়টাও সহজ হয় সফরকারীদের।
ম্যাচসেরার পুরস্কার নিজের করে নিয়েছেন লিটন দাস। এ তারকা শুক্রবার দলের বিপদের সময় করেন হার না মানা সেঞ্চুরি।
ক্যারিয়ারে এটি তার ৪র্থ সেঞ্চুরি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয়।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভাল হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বিদায় নেন তামিম। ব্লেজিং মুজারাবানির বাড়তি বাউন্সের বল শরীরের কাছ থেকে কাট করতে গিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক ফেরেন শূন্য রানে। সাকিব আল হাসান তিনে নেমে নিজেকে ঠিক মেলে ধরতে পারেননি। মুজরাবানির বলেই তিনি কাভারে ধরা পড়েন ১৯ রানে।
সাকিবের বিদায়ের পর দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন মিঠুন ও মোসাদ্দেক। তবে এক প্রান্তে আগলে ছিলেন লিটন। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহ। গড়ে ওঠে প্রতিরোধের জুটি। এক পর্যায়ে রায়ান বার্লকে দারুণ কাভার ড্রাইভে চার মেরে লিটন ফিফটিতে পা রাখেন ৭৮ বলে। এর পর অবশ্য রানের গতি বাড়ান তিনি। ঠিক সে সময় শতরানের পথে এগোতে থাকা জুটি ভাঙে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে। লুক জঙ্গুয়ের স্লোয়ার বাউন্সার পুল করতে গিয়ে তিনি আউট হন ৩৩ রানে। দুজনের জুটি থামে ১০৩ বলে ৯৩ রানে।
লিটন এরপর এগিয়ে যান আফিফকে সঙ্গে নিয়ে। এর মধ্যে এ তারকা শতরানে পা রাখেন ১১০ বল খেলে। এরপর ইনিংসটাকে আর বড় করতে পারেননি তিনি। রিচার্ড এনগারাভাকে পুল করে ধরা পড়েন সীমানায়। ফেরার আগে তিনি করেন ৮ চারে ১০২ রান।
লিটনের ফেরার পরও খুব একটা স্বস্তিতে ছিল না বাংলাদেশ। তবে শেষদিকে আফিফ ও মেহেদী হাসান মিরাজের জুটি স্বস্তি ফেরায় সফরকারী শিবিরে। সপ্তম উইকেটে ৪২ বলে ৫৮ রানের জুটি গড়েন তারা। তার মধ্যে ২৫ বলে ২৬ করেন মিরাজ। আফিফ ফেরেন ৩৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলে। এ কারণে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায় টিম টাইগার্স।
জিম্বাবুয়ের হয়ে মুজরাবানি ১০ ওভারে ৪৭ রানে নেন ২ উইকেট। এদিকে ৪৯ রানে চাতারা পকেটে পুরেন ১টি উইকেট। এনগারাভা ৬১ রানে নেন ২ উইকেট।
জিম্বাবুয়েকে ২৭৭ রানের লক্ষ্য দিয়ে বল হাতে শুরু থেকেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন দ্রুতই স্বাগতিক শিবিরে আঘাত করেন। এই পেসারের চমৎকার ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরেন টাডিওয়ানাশে মারুমানি। এর কিছুক্ষণ পর তাসকিনের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড হন ওয়েসলি মাধেভেরে। ভেতরে ঢোকা বলের লাইনে যেতে পারেননি মাধেভেরে। তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে উপড়ে ফেলে মিডল স্টাম্প। ১৭ বলে তিনি করেন ৯ রান। সে সময় স্বাগতিকদের রান ৫ ওভারে ২ উইকেটে ২৭।
দ্রুত ২ উইকেট তুলে নিলেও বাংলাদেশকে কিছুটা সময়ের জন্য অস্বস্তিতে ফেলেন ব্রেন্ডন টেইলর ও ডিওন মায়ার্স। কিন্তু দ্রুতই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। তাকে পুল করে ছক্কার চেষ্টায় ফিরে যান মায়ার্স। তার আগে ২৪ বলে তিন চারে ১৮ রান করেন তিনি।
এদিকে প্রথম স্পেলে খরচে সাকিব দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই নিজেকে যেন ফিরে পান। দ্রুতই তিনি সাজঘরের পথ দেখান টেইলরকে। সাকিবের করা অফ স্টাম্পে থাকা ফুল লেংথ বলে ঠিকমতো শট খেলতে পারেননি তিনি। শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ মুঠোয় জমান তাসকিন আহমেদ। তার আগে তিন চারে ৩১ বলে ২৪ রান করেন টেইলর।
নিয়মিত উইকেট হারালেও রেজিস চাকাভার আক্রমণাÍক ব্যাটিংয়ে গতি হারায়নি জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ২০ ওভারে তিন অঙ্ক স্পর্শ করে দলটির রান। তবে এরপরই স্বাগতিক শিবিরে হতাশা বাড়ান সাকিব। ইনিংসের ২১তম ওভারের তৃতীয় বলে রায়ান বার্লকে ডিপ ডিমউইকেটে আফিফ হোসেনের ক্যাচে ফেরান তিনি। পরে জঙ্গুয়েকে রানআউটে কাটা পড়ান আফিফ। সে ক্ষত শুকানোর আগেই দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাগতিক শিবিরে জোড়া আঘাত করেন সেই সাকিবই। ২৩তম ওভারের প্রথম তিনি তুলে নেন মুজরাবানিকে এলবিডব্লিয়ের ফাঁদে ফেলে। এর এক ওভার পরেই এ অলরাউন্ডার সাজঘরের পথ দেখান দারুণ খেলা রেজিস চাকাভাকে। শেষ পর্যন্ত সাকিবের বিধ্বংসী এক স্পেলেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। তাই বাংলাদেশও দাপুটে জয়ে ওয়ানডে সিরিজের শুরুটা করল।
ব্যাট হাতে না পারলেও বল হাতে ঠিকই ৯.৫ ওভারে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এদিকে তাসকিন, সাইফউদ্দিন ও শরিফুল নেন ১টি উইকেট। আগামীকাল সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ঐ ম্যাচ জিতলেই সিরিজ জিতে যাবে তামিম ইকবালের দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৬/৯ (তামিম ০, লিটন ১০২, সাকিব ১৯, মিঠুন ১৯, মোসাদ্দেক ৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৩, আফিফ ৪৫, মিরাজ ২৬, সাইফ ৮*, তাসকিন ১, শরিফুল ০*; মুজরাবানি ১০-২-৪৭-২, চাতারা ১০-১-৪৯-১, এনগারাভা ১০-১-৬১-২, জঙ্গুয়ে ৯-০-৫১-৩, বার্ল ৫-০-৩১-০, মাধেবেরে ৬-০-৩৭-০)।
জিম্বাবুয়ে: ২৮.৫ ওভারে ১২১ (মাধেবেরে ৯, মারুমানি ০, টেইলর ২৪, মায়ার্স ১৮, চাকাভা ৫৪, বার্ল ৬, জঙ্গুয়ে ০, মুজরাবানি ২, চাতারা ২*, এনগারাভা ০, মারুমা আহত অনুপস্থিত; তাসকিন ৫-০-২২-১, সাইফ ৪-০-২৩-১, সাকিব ৯.৫-০-৩০-৫, শরিফুল ৬-০-২৮-১, মিরাজ ৩-০-১৫-০, মোসাদ্দেক ১-০-১-০)।
ফল: বাংলাদেশ ১৫৫ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ তে এগিয়ে বাংলাদেশ।
ম্যাচসেরা: লিটন দাস। ♦