উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ তথ্য নিরাপত্তায় পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে বেশ এগিয়ে, যা অন্যান্য দেশের জন্য রোল মডেল। এখন পর্যন্ত সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্মের (সিবিভিএমপি) মাধ্যমে দেশে ২৬০ মিলিয়নের বেশি সিম কার্ড নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে ইউনিক সাবস্ক্রাইব ১৩৫ মিলিয়ন।
একই সঙ্গে সিবিভিএমপি সব মোবাইল ফোন অপারেটরের সিম ডেটার সর্বাধিক লেনদেনের ডেটাবেজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতি সেকেন্ডে যা ৫০০টি ডেটা রেজিস্ট্রেশন করতে পারে। এ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১ সেকেন্ডের জন্যও কোনো ধরনের ত্রুটি ঘটেনি বলে জানিয়েছেন দেশের প্রথম সারির আইসিটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব আহমেদ চৌধুরী।
সিবিভিএমপি প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, সেন্ট্রাল সিবিভিএমপি দেশের মানুষকে তথ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আদায় এবং টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন নিয়মাবলী প্রবর্তনের কাজ করে যাচ্ছে।
২০১০ সালে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৬৭ দশমিক ৯২ মিলিয়ন, যা ২০১৯ সালে এসে দাঁড়ায় ১৬৫ দশমিক ৫৭ মিলিয়নে।
সিবিভিএমপি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতিটি সিম কার্ড নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবির সত্যতা সঠিকভাবে যাচাই করাসহ ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্টেও আনা হয়েছে ডিজিটালাইজেশন।
তিনি আরও বলেন, সিবিভিএমপি) প্রকল্পটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। সম্প্রতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেস বা বেসিস “সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি)” ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর “ইলেক্ট্রনিক ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ইটিআইএন)” এই দুটি প্রকল্পকে পুরস্কৃত করেছে।
সিবিভিএমপি প্রকল্পের জন্য আমরা উইসিস উইনার পুরস্কার অর্জন করেছি। কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের টিম মেম্বারদের প্রতি, যাদের নিরলস প্রচেষ্টায় শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পটি এক সেকেন্ডের জন্য ও ডাউনটাইম হয়নি।
সিনেসিস আইটির নানা সেবা সম্পর্কে তিনি বলেন, সিনেসিস আইটি লিমিটেড সিএমএমআই লেভেল ৩ সার্টিফাইড একটি আইসিটি প্রতিষ্ঠান। আমরা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ই-গভর্নেন্স, ই-হেলথ অ্যান্ড টেলিহেলথ, কন্ট্রাক্ট সেন্টার সল্যুউশন ও টেন্ডার-বাজার ডটকমের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি।
এছাড়া তথ্যঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া যথাযথভাবে পরিপালনের স্বীকৃতি হিসেবে আইএসও ২৭০০১:২০১৩ সনদ এবং আইএসও ৯০০১ অর্জন করেছে সিনেসিস আইটি।
৫৫০ জনের বেশি লোকবল নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিডিবিএল ভবনের মূল অফিস থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটি।
এখন পর্যন্ত সিনেসিস আইটি বাংলাদেশ সরকারের ১৫০টির বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে কাজ করছে ও জাতীয় পর্যায়ে ২৫টির বেশি কন্ট্রাক্ট সেন্টার পরিচালনা করছে।
এসব প্রজেক্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এনইআইআর, সিবিভিএমপি, ই-টিন, একপে, ওয়াসা লিংক ১৬১৬২, ইএফডিএমএস, ই-স্টাইপেনড, অনলাইন জিডি, এমপিও অটোমেশন, জিইআরপি, ইএমআইএস ইত্যাদি। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩, কভিড ১৯ টেলি হেলথ সেন্টার, সুখি পরিবার ১৭৬৭৬, প্রবাস বন্ধু, স্বাস্থ্য সেবার হেল্পলাইন ৭৮৯, মাইন্ড টেল ৭৮৯৯সহ আরও অনেক জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কল সেন্টার রয়েছে।
দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিনেসিস আইটির কী ধরনের বিশেষত্ব রয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাব আহমেদ চৌধুরী বলেন, সিনেসিস আইটি বর্তমানে ২০টির বেশি এসএমএস সার্ভিস গেটওয়ের মাধ্যমে সরকারের ডিজিএইচএস, এলজিআরডি, ডিএই, বিএসটিআই, বাংলাদেশ আর্মি, ওয়াসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিচ্ছে।
সিনেসিস আইটির সাতটির বেশি মোবাইল অ্যাপ, ৭০টিরও বেশি ড্যাশ বোর্ড মনিটরিং সিস্টেম, ৫টিরও বেশি অনলাইন ভেরিফিকেশন, ২টিরও বেশি হাই টিপিএস, ৩ টিরও বেশি ই-চালান ব্যবস্থা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এছাড়া পাবলিক সেক্টরে ডিজিটাল সার্টিফিকেট প্রবর্তন থেকে এনআইডি ইন্টিগ্রেশন ও আইডেন্টিটি সল্যুউশনে সিনেসিস আইটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
ইতোমধ্যে সিনেসিস আইটি মোবাইল হেলথ অ্যান্ড টেলিহেলথ সেবার মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে এবং শুধু করোনাকালে প্রায় সোয়া কোটি মানুষকে সেবা দেয়ায় বাংলাদেশর সর্ববৃহৎ টেলিহেলথ সেবাদানকারি সংস্থা হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। তাছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে সিনেসিস আইটি।
দেশীয় সফটওয়্যার বাজারের ব্যবসা বর্তমানে কেমন চলছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বেসিসের মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ ছোট বড় সফটওয়্যার ও আইটি কোম্পানি রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩০,০০০ আইটি প্রফেশনাল কাজ করছেন। এই ইন্ডাস্ট্রির আকার প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বেশিরভাগ আইটি কোম্পানিই ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এবং কনটেন্ট ক্রিয়েশন, ডেটা প্রসেসিং এবং সফটওয়্যার মেইনটেনেন্সে করে। বেশিরভাগ কোম্পানি দেশের লোকাল মার্কেটে এ ধরণের কাজ করছে। তবে বড় কোম্পানিগুলো দেশের স্বার্থে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, ই-গভর্নেন্স এবং ই-লার্নিংয়ের কাজ করে যাচ্ছে।
আমার মতে দেশের আইটি সেক্টরে একটি বুম হয়েছে যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। আমার বিশ্বাস আমরা এই তথ্য প্রযুক্তি খাতে অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হব এবং দেশের লোকাল মার্কেট ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম অর্জনে সক্ষম হব। ♦