আজ ২২ এপ্রিল বিশ্ব ‘আর্থ ডে’। এ উপলক্ষে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের আয়োজন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
দুই দিনের এ সম্মেলনে বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ ৪০ দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেবেন। গতকাল বুধবার বেইজিং এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অনলাইনে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানে সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আবারও নেতৃত্বের ভূমিকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন ও এর সমস্যা অস্বীকার করে আসছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এ সম্মেলনই হবে বাইডেন ও শি জিন পিংয়ের মধ্যকার প্রথম বৈঠক।
গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্মেলনে শি জিনপিং গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন। সাংহাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু-বিষয়ক প্রতিনিধি জন কেরির সফরের কয়েক দিনের মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্টের জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেয়ার খবর জানানো হলো। কেরি ও চীনের প্রতিনিধি জি ঝেনহুয়া বলেছেন, তারা জলবায়ু পরিবর্তনরোধে একে অন্যকে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দেশ দুটির মধ্যে বর্তমানে বেশ কিছু ইস্যুতে উত্তেজনা চললেও জলবায়ু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে তারা।
হংকং ও তাইওয়ানে চীনের কার্যক্রম এবং জিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের প্রতি চীনের পদক্ষেপের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বিরোধ বাড়ছে। তবে বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষ এ দেশ দুটির অংশগ্রহণ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কোনো আলোচনা সফল হবে না। কারণ বিশ্বের মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রায় অর্ধেক নির্গমন হয় শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে।
এর আগে গত রোববার দেশ দুটির পক্ষ থেকে দেয়া যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। পাশাপাশি অন্য দেশের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে বিশ্বের দুই পরাশক্তি।
ওয়াশিংটন-বেইজিং যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, জলবাযু পরিবর্তন মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অপরের সঙ্গে এবং অন্য দেশের সঙ্গে কার্যকরভাবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা ও তা দ্রুত কার্যকরভাবে মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।
আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী গ্রুপ গ্রিনপিসের জলবায়ু উপদেষ্টা লি শুয়ো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এ যৌথ বিবৃতিকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
পরিবেশবিদরা মনে করেন, ক্ষমতাধর দেশ দুটির মধ্যে জলবায়ু ইস্যুতে ঐকমত্য হওয়ায় আসন্ন জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো তাদের প্রাপ্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কার্বন নিঃসরণে শীর্ষে রয়েছে। জলবায়ু বিষয়ে প্যারিস চুক্তি থেকে ট্রাম্প প্রশাসন সরে আসে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতা নেয়ার পরই আবার প্যারিস চুক্তিতে ফিরে আসেন।
আর চীন ২০৬০ সাল নাগাদ কার্বণ নিঃসরণ কমিয়ে আনার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে। গত সপ্তাহে সাংহাইয়ে চীনের জলবায়ু দূত শি ঝেনহুয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু দূত জন কেরির মধ্যে কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দেয়া ওই বিবৃতিতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে উভয়পক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে বলে জানানো হয়।
এর আগে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় প্রথমবারের মতো বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে চীনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দু’পক্ষের বাকবিতণ্ডা ছাড়া তেমন ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। তবু বিশ্লেষকরা ওই বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, যার ফল জলবায়ু ইস্যুতে একমত হওয়া। ♦