পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিকম খাতের প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়াটা সর্বশেষ হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ঘোষণা জানিয়েছে। আলোচিত বছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের তিন শতাংশ লভ্যাংশ দেবে। গতকাল অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে আলোচিত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর এ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রায় ১১ বছরের বিরতিতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্য থেকে দ্বিতীয় কোম্পানি হিসেবে রবি আজিয়াটা গত বছর পুঁজিবাজারে আসার অনুমোদন পায়। কিন্তু প্রথম বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেবে না বলে ঘোষণা দেয় কোম্পানিটি। তখন কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যথাসময়ে লভ্যাংশ দেয়া হবে।
কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুতে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৫২৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ১৩৬ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে। এর আগে ২০০৯ সালে মুঠোফোন অপারেটরদের মধ্যে প্রথম কোম্পানি হিসেবে গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারে যুক্ত হয়। আর এ খাতের দ্বিতীয় কোম্পানি হিসেবে পুঁজিবাজারে আসে রবি।
রবি
রবি আজিয়াটা লিমিটেড একটি জয়েন্ট ভেনচার প্রতিষ্ঠান। গ্রুপটির সঙ্গে বারহাদ অব মালয়েশিয়া ও ভারতের ভারতী এয়ারটেল সম্পৃক্ত রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, রবি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর।
১৯৯৭ সালে ‘একটেল’ ব্র্যান্ড নামে বাংলাদেশে যাত্রা করে টেলিকম মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল (বাংলাদেশ)। ২০১০ সালে কোম্পানিটির নতুন ব্র্যান্ড নাম হয় ‘রবি’। পরে এর নামকরণ হয় রবি আজিয়াটা লিমিটেড।
এয়ারটেল বাংলাদেশ’র সঙ্গে একীভূত হওয়ার পর ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে একীভূত কোস্পানি হিসেবে বাণিজ্যিক যাত্রা করে রবি আজিয়াটা লিমিটেড (রবি)। এখন পর্যন্ত এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম ও টেলিযোগাযোগ খাতের প্রথম একীভূতকরণের ঘটনা।
রবি প্রথম অপারেটর হিসেবে দেশে জিপিআরএস ও ৩.৫জি সেবা চালু করে। পরে দেশের ৬৪ জেলায় চালু করে ৪.৫জি সেবা। ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যিকভাবে ফোরজি সেবা চালু হওয়ার প্রথম দিনই এ মাইলফলক অর্জন নিশ্চিত করে রবি। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ৭ হাজার ৪’শটি সাইট নিয়ে দেশের ৯৯ শতাংশ উপজেলায় পৌঁছে দেশের বৃহত্তম ৪.৫জি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে অপারেটরটি।
অপারেটরটি দেশের অনেক ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা চালু ও দেশের গ্রামীণ ও উপশহর এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় মোবাইল আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা রাখছে। ইতিমধ্যে ৪.৫জি নেটওয়ার্কে ভয়েস ওভার এলটিই ও ৫জি প্রযুক্তির সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রবি।
বিদেশে ভ্রমণকারী গ্রাহকদের আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা দিতে রবি অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে রয়েছে। ১৮২ দেশে ৩৯৮ মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে রোমিং সুবিধা দিচ্ছে রবি। এর মধ্যে ২৯ দেশের ৪০ অপারেটরে ৪জি রোমিং সুবিধা পাচ্ছে রবির গ্রাহকেরা।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জড়িত থাকার অভিপ্রয়াসে অনলাইন স্কুল রবি-টেন মিনিট স্কুল চালু করেছে অপারেটরটি। এ ছাড়া সাতটি বিভাগীয় লাইব্রেরিতে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান ও ১০ প্রধান রেল স্টেশনে নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থাসহ সরকারি সেবা সম্পর্কিত তথ্য দিতে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) সঙ্গে যৌথভাবে ৩৩৩ কল সেন্টার স্থাপন করেছে।
টেলিযোগাযোগ শিল্পে নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়ে হাজির হচ্ছে রবি। এর মধ্যে রয়েছে দেশের প্রথম সমন্বিত ধর্মীয় জীবনধারার অ্যাপ ‘নূর’, স্পোর্টস অ্যাপ ‘মাই স্পোর্টস’, মোবাইল-ভিত্তিক হেলথ ইনস্যুরেন্স ডিজিটাল সার্ভিস ‘মাই হেলথ’, গ্রাহকদের ডিজিটাল সেলফ সার্ভিস সুবিধা ‘মাই রবি অ্যাপ’, বিনোদনমূলক কনটেন্ট প্লাটফর্ম ‘রবি স্ক্রিন’ ও সমন্বিত অডিও-ভিজুয়াল ডিজিটাল মিউজিক প্লাটফর্ম ‘স্প্ল্যাশ’সহ অনেক সেবা।
ডিজিটাল সেবার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে অপারেটরটি। এর মধ্যে ডিজিটাল গ্যাজেট নিয়ে দেশের অন্যতম ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম রবিশপ, ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের জন্য অ্যাডরিচ, মাইফ’র ডিরেক্ট অপারেটরস’ বিলিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল কনটেন্ট কেনার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে মূল্য পরিশোধ সুবিধা, যানবাহন ট্র্যাকিং সেবা রবি ট্র্যাকার, ইকমার্স ব্র্যান্ড ডিজিরেড’র সহায়তায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল গ্যাজেট পৌঁছে দেয়া, অ্যাপস্টোর বিডিঅ্যাপস ডটকম চালুর মাধ্যমে উদ্যোক্তা গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি করছে রবি।
বৃহত্তম মানব পতাকা তৈরির মাধ্যমে রবি প্রমাণ করেছে কোম্পানিটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে। সমাজে বদলে যাওয়া জীবনধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবার জন্য ডিজিটাল জীবনধারা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পূরণে আত্মবিশ্বাসী রবি। ♦