তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা ছিল অন্যতম লক্ষ্য। কিন্তু বিধিনিষেধের গেরোয় তাবড় ব্যবসায়ীদের বেঁধে ফেলা হয়েছে। আর এর প্রভাব এবার পড়তে চলেছে চীনের অর্থনীতিতে।
আলিবাবার কর্ণধার জ্যাক মা-র প্রতি শি জিনপিং সরকারের আচরণে শঙ্কিত দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা। সরকারি রোষানল থেকে বাঁচতে প্রকাশ্যে যদিও মুখ খোলার সাহস দেখাচ্ছেন না কেউ, তবে সরকারি নজরদারি এড়াতে ব্যবসা গোটাতে শুরু করেছেন উঠতি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা।
বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে গত কয়েক মাসে জ্যাকের আলিবাবা ও অ্যান্ট গ্রুপ কো-র লাগাম টেনে ধরেছে চীন সরকার। ২০২০ সালের অক্টোবরে একটি বক্তৃতায় শিল্পক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধের সমালোচনা করেন জ্যাক। এরপরে অ্যান্ট গ্রুপের তরফে যে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের শেয়ার বাজারে ছাড়া হচ্ছিল, তা রুখে দেয় জিনপিং সরকার।
আঘাত নেমে আসে আলিবাবার উপরও। এরপর এশিয়ার সবচেয়ে ধনী শিল্পপতির মুকুট সরে যায় জ্যাকের মাথা থেকে।
সে থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে জ্যাক মা। মাসে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে শিশুশিক্ষা নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। তবে আগের মতো জনসমক্ষে আর দেখা যায় না। তিনি কোথায় রয়েছেন, কী করছেন, সদুত্তর নেই কারও কাছে। সরকারের নজরদারিতে তিনি বন্দি হয়ে রয়েছেন কি না, আন্তর্জাতিক মহলও তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
জ্যাক ও আলিবাবার এ অনিশ্চিত ভবিষ্যতে আশঙ্কার মেঘ দেখছেন দেশটির ব্যবসায়ী ও শিল্পমহল। জ্যাকের জন্মশহর ঝেজিয়াংয়ের এক স্টার্টআপের স্বত্ত্বাধিকারী জানান, একসময় জ্যাকের মতো সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু জ্যাকের প্রতি সরকারের আচরণ দেখে তিনি আর আলিবাবার মতো বিরাট সাফল্য চান না।
তাঁর মতে, ব্যবসা বাড়লেই সরকারের নজর পড়তে পারেন। নজরবন্দি করে ফেলা হবে তাঁকে। তার চেয়ে জীবন চলার মতো উপার্জন নিয়ে শান্তিতে থাকা ভাল।
আর এক উঠতি ব্যবসায়ী জানান, প্রকাশ্যে জ্যাককে নিয়ে আলোচনা বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। এমনকি মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেও এ নিয়ে কোন আলোচনা করেন না, যাতে সরকারি নজরদারিতে পড়তে না হয়।
একাধিক স্টার্টআপ দাঁড় করিয়েছেন, এমন একজন বিনিয়োগকারী জানান, জ্যাকের সঙ্গে যা হয়েছে, তাতে অনেকে শঙ্কিত। আগের মতো উদ্যম নিয়ে আর ঝাঁপিয়ে পড়তে আগ্রহী নয় কেউ-ই। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতা যাঁদের, তাঁরা আগ্রাসী মনোভাব দেখাতে নারাজ। কারণ ব্যবসা বাড়াতে গেলে সরাকরি বিধিনিষেধ বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আর তা নিয়ে কথা বলতে গেলে আঘাত নেমে আসবে। তাই বিপদ এড়াতে অনেকে যেচে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলছেন বলে জানিয়েছেন ওই শিল্পপতি।
একটি সফটওয়্যার স্টার্টআপের মালিকের আশঙ্কা, বিরুদ্ধাচরণ করলে সরকারি আমলারা এসে সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেবেন।
ব্যবসায়ী মহলের একটি অংশের মতে, এ কথা সত্য যে আলিবাবার মতো বৃহৎ সংস্থাগুলির দাপটে অনেক ছোট সংস্থা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু সব কিছুতে সরকার নাক গলাতে এলে ব্যবসা করা মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। এতে ধাক্কা খাবে দেশের অর্থনীতিও। ♦