করোনাভাইরাস রোধে টিকার বিকল্প নেই। আর টিকাকরণের অনিশ্চয়তাও কেটেছে- ৭০ লাখ টিকা বাংলাদেশে আসা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আজ বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে ভারত সরকারের উপহার দেয়া ২০ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান।
দেশে টিকা আসার আগে প্রয়োগ বা টিকাকরণের নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে টিকা নিতে আগ্রহীদের। নিবন্ধনের জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘সুরক্ষা’ নামে একটি অ্যাপ। এতে ব্যক্তির নাম ও তথ্য নিবন্ধন করা যাবে আজ থেকে।
তবে অ্যাপটি পরীক্ষামূলক। আর পরীক্ষায় উৎরে গেলে ২৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে অ্যাপটি। পরদিন থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন। টিকাদান কর্মসূচি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে।
-নিবন্ধনের প্রক্রিয়া-
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সুরক্ষা অ্যাপে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
দিতে হবে ফোন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, নাম, জন্মতারিখের পাশাপাশি কোনো শারীরিক জটিলতা আছে কি না, পেশা ইত্যাদি।
স্মার্ট ফোনে ইন্টারনেট সংযুক্ত করে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। অ্যাপে তথ্য দিলে টিকার আপডেট সম্পর্কে গ্রহীতাদের এসএমএস দেয়া হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ টিকা বিতরণ করতে নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। কারা আগে টিকা পাবেন, সেই অগ্রাধিকারের তালিকাটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকেও সংগ্রহ করা যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সুশৃঙ্খলভাবে টিকা দিতে অনলাইনে নিবন্ধন করা হচ্ছে। অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের কারণে সব তথ্য সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে। কারা কোন সময়ে টিকা পাবেন তাও অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে।
একজনকে দুটি করে টিকা দেয়া হবে। খুরশীদ আলম জানান, প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ কবে দেয়া হবে সেটা এসএমএসে জানানো হবে।
-স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট নেই-
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যাদের মোবাইল বা ইন্টারনেট সুবিধা নেই তারা ইউনিয়ন পরিষদ বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিবন্ধন করবে। সঙ্গে এনআইডি নম্বর নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে বিধবা বা বয়স্কভাতা পান এমন তালিকাও সংগ্রহ করে দেখা হবে।
টিকা দেয়ার আগে নিবন্ধন নিয়ে সারাদেশে প্রচার চালানো হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার টিকা প্রয়োগের কর্মসূচি স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়নের জন্য সুরক্ষা প্লাটফর্ম নামে অ্যাপ বানানো হয়েছে। এ কাজে আইসিটি বিভাগের সঙ্গে বেসিস ও এটুআই যুক্ত রয়েছে। অ্যাপটি তাদের নিজস্ব জনবল বানিয়েছে।
-টিকার উৎস ও পরিমাণ-
ভারত থেকে আসবে টিকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রধান কার্যালয়, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) ও রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির নিজস্ব সংরক্ষণাগারে (ইপিআই স্টোর) রাখা হবে।
এসব টিকা ওয়াক ইন কুলে (ছোট ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ) রাখা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে এক সঙ্গে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হবে।
দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। সে হিসেবে দেশের প্রায় আট থেকে নয় কোটি মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
ছয় মাসের মধ্যে ভারতের সিরাম থেকে আসবে তিন কোটি ডোজ। ভারত সরকারের উপহার হিসেবে এসেছে ২০ লাখ ডোজ। আর সারাবিশ্বে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে আন্তর্জাতিক জোট কোভ্যাক্স থেকে পৌনে সাত কোটি টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে অন্য দেশের সফল টিকা আমদানির চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, টিকা কার্যক্রমের বাইরে থাকবে পাঁচ থেকে ছয় কোটির বেশি মানুষ। কারণ জটিল রোগে আক্রান্ত, গর্ভবতী ও ১৮ বছরের নিচে কাউকে টিকা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হযেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা মেনে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ গর্ভবতী রয়েছেন। মোট জনশক্তির প্রায় ৩৭ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক। প্রবাসী প্রায় এক কোটি। ক্যান্সারে আক্রান্ত ও ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি, করোনায় আক্রান্ত ও যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা একেবারেই নেই তাদেরও এখন টিকার দরকার নেই।
-ভারতের উপহারের টিকা-
ভারত সরকারের উপহার দেয়া ২০ লাখ ডোজ করোনার টিকা এসেছে বাংলাদেশে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় টিকার প্রথম চালান।
সকাল ৮টায় মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয় ফ্লাইটটি বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ কথা জানান। আনুষ্ঠানিকতা শেষে টিকাগুলো তেজগাঁও ইপিআই স্টোরে নেয়া হবে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আজ দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা হস্তান্তর করা হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ টিকা গ্রহণ করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তখন ভারতীয় হাইকমিশনারসহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। ♦