চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ ত্যাগ করা উচিত বাইডেনের

0

আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেবেন জো বাইডেন। এরপর অনেক নীতিতে বদল আনতে হবে তাকে। ব্যতিক্রম হবে শুধু চীনের বেলায়। তবে বাইডেন যদি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো সংঘাতপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখেন, তাহলে এর জন্য তাকে অনুতপ্ত হতে হবে একসময়। বিশেষ করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে।

কেননা বাইডেন ইতোমধ্যে চীনের বাণিজ্যচর্চা সম্পর্কে হোয়াইট হাউজে তার পূর্বসূরীদের অনেক অভিযোগের প্রতিধ্বনি করেছেন। অভিযোগ করেছিলেন, চীন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরি করছে। বৈদেশিক বাজারে পণ্য ফেলে আসছে ও আমেরিকান কোম্পানিগুলোর কাছে প্রযুক্তি স্থানান্তরে বাধ্য করছে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২০ সালের ‘ফেজ ওয়ান’ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি অথবা ২৫ শতাংশ শুল্ক অপসারণ করবেন না।

বাইডেনের দৃষ্টিতে, ‘একটি সুসংহত কৌশল নির্মাণের’ লক্ষে বিদ্যমান চুক্তির পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা না করা পর্যন্ত চীনের প্রতি চলমান দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না আনাই শ্রেয়। তার মনোনীত বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাই পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। ক্যাথরিন তাই এশিয়ান-আমেরিকান বাণিজ্য আইনজীবী। তিনি অনর্গল ম্যান্দারিন ভাষায় কথা বলতে পারেন। চীন সম্পর্কে তার যথেষ্ট অভিজ্ঞ তিনি।

গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কের অনুপাতের পরিমাণ বেড়েছে ৭০ শতাংশের বেশি। শুল্ক সাপেক্ষে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির শেয়ার আকাশছোঁয়া, যা ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২ শতাংশ থেকে দুই বছর পরে হয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি।

একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের অনেক সংস্থার বিরুদ্ধে ১১বার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গত মাসে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের রপ্তানি নিয়ন্ত্রক সংস্থার তালিকায় ৫৯ চীনা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে যুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে এখন পর্যন্ত সংস্থাটির তালিকায় যুক্ত হয়েছে ৩৫০ চীনা নাম, যা যে কোন দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি।

খরচ ও রপ্তানির উপর কঠোর সীমাবদ্ধতা থাকায় চীন সম্ভবত তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবে না। এর মধ্যে রয়েছে প্রথম পর্যায়ের চুক্তির অধীনে ২০২০-২১ সালে প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমেরিকান পণ্য ও সেবা কেনার শর্ত। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চীনে মার্কিন রপ্তানি চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেক কম রপ্তানি করা গেছে। ফলে ২০২০ সালের নভেম্বরে বার্ষিক ক্রয় প্রতিশ্রুতির মাত্র ৫৭ শতাংশ পূরণ করেছে চীন।

যতক্ষণ বাইডেন ট্রাম্পের সংঘাতপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখবেন, প্রথম পর্যায়ের চুক্তি মৌলিকভাবে অকার্যকর হবে। পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ব্যাহত হবে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও ভেঙ্গে পড়তে পারে।

এর মানে এই নয় যে, বাইডেন প্রশাসনের শুধু শুল্ক অপসারণ করা প্রয়োজন। প্রথম পর্যায়ের চুক্তিটিও গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ। অন্তত তা মেনে চলার কারণে চীনকে অন্য দেশ থেকে আমদানি কমাতে বাধ্য করবে।

তাই অন্য দেশগুলো প্রতিযোগিতার মাঠ সমান করার চেষ্টা করছে। ২০২০ সালের শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন বিনিয়োগ সম্পর্কিত চুক্তি করে। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আসিয়ানভুক্ত দশটি দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আঞ্চলিক বিস্তীর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (আরসিইপি) স্বাক্ষর করে। এর কোনটাই আমেরিকার স্বার্থে নয়।

ট্রাম্পের সংঘাতপূর্ণ চীন নীতি বজায় রাখার পরিবর্তে বাইডেনের উচিত বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের কেন্দ্রীয় ভূমিকা স্বীকার করা। পারস্পরিক লাভজনক ও বৈষম্যহীন বাণিজ্য চুক্তি অনুসরণ করা। ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্বের জন্য বিস্তৃত ও অগ্রসরমান চুক্তিতে যোগ দেয়া।

বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের সঙ্গে তার সম্পর্ক নতুন করে শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সে প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য চীনের বিরুদ্ধে তার পূর্বসূরির বিধ্বংসী বাণিজ্যযুদ্ধ শেষ করা বুদ্ধিমানের।

Share.