চলে গেলেন এক সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান কলিন ম্যাকডোনাল্ড

0

আজ থেকে ৭০ বছর আগের ক্রিকেটের কথা ভাবুন তো! আজকের মতো ওই দিনগুলোয় ক্রিকেটারদের জন্য এত সুরক্ষা বর্ম ছিল না। তখন উইকেট ঢেকে রাখা হতো না। আরো ভয়ঙ্কর ছিল- মাথায় থাকত না হেলমেট। তবু সে সময় অনেক ব্যাটসম্যান বুক চিতিয়ে লড়াই করতেন। বেধড়ক পেটাতেন বোলারদের। তাদেরই একজন ছিলেন কলিন ম্যাকডোনাল্ড। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ইতিহাসে আলাদা জায়গা রয়েছে তাঁর।

ছিলেন এই অর্থে  যে, ক্রিকেটের মতো দীর্ঘদিন ছিলেন জীবনের ইনিংসেও। আজ সোমবার এর সবকিছু থেমে গেল। ক্রিকেট ও জীবন- সবকিছুর সীমানা ছাড়িয়ে গেলেন বিশ্বের এক সময়কার এক নম্বর ব্যাটসম্যান কলিন ম্যাকডোনাল্ড।

কলিন ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত ৪৭ টেস্ট খেলেন।

জীবনের ক্রিজেও সেঞ্চুরি ছুঁইছুঁই ছিল তাঁর- ৯২ বছর বয়সে আজ মৃত্যুবরণ করেছেন ম্যাকডোনাল্ড।

পরিসংখ্যান
৫ সেঞ্চুরি ও ১৭ ফিফটিতে তাঁর টেস্ট রান ৩ হাজার ১০৭। গড় ৩৯.৩২।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১ হাজার ৩৭৫ রান করেন, ঝুলিতে ছিল ২৪ সেঞ্চুরি ও ৫৭ ফিফটি।

মোট ২৯ সেঞ্চুরি করেন কলিন।

এসব পরিসংখ্যানে তাকে সামান্যই ফুটিয়ে তোলা যায়। হেলমেট-পূর্ব যুগে ফাস্ট বোলারদের সামনে সব ব্যাটসম্যান কঠিন পরীক্ষায় পড়তেন। সে পরীক্ষায় ম্যাকডোনাল্ডকে মনে করা হয় ইতিহাসের সবচেয়ে সাহসী সৈনিকদের একজন। তিনি ওয়েস হল, ফ্র্যাঙ্ক টাইসন, ফ্রেড ট্রুম্যান, ব্রায়ান স্টাথামের মতো ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলারদের সামলেছেন নিপুন দক্ষতায়। শুধু তা-ই নয়, স্পিনেও তার টেকনিক ছিল ভালো।

সেরা
ম্যাকডোনাল্ডের সেরা দুটি সিরিজ ছিল ১৯৫৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ও নিজভূমে ১৯৫৮-৫৯ অ্যাশেজ।

ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষের সিরিজে ২ সেঞ্চুরিতে তার রান ছিল ৬৪.১৪ গড়ে ৪৪৯। ইংলিশদের বিপক্ষের সিরিজে ২ সেঞ্চুরিতে ৫১৯ রান করেন, গড় ৬৪.৮৭।

অ্যাশেজে সাফল্যের পর ১৯৫৯ সালের আগস্টে আইসিসি টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠেন।

একই বছর রিচি বেনোর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ঢাকায়ও টেস্ট খেলেন ম্যাকডোনাল্ড। সে ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটের জয়ী হয়। এর দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যাকডোনাল্ড ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

তাঁর মৃত্যুতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী আর্ল এডিংস বলেন, “ভিক্টোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের কিংবদন্তি হিসেবে সবসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন কলিন। ফাস্ট বোলারদের সামনে তিনি ছিলেন ভয়ডরহীন, স্পিনের বিপক্ষেও স্কিল ছিল দুর্দান্ত। আন্তর্জাতিক ও রাজ্য পর্যায়ে এবং ক্লাব ক্রিকেটে তার অসাধারণ সেবার জন্য অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সমৃদ্ধ হয়েছে।”

কলিন ম্যাকডোনাল্ড
তাঁর পুরো নাম কলিন ক্যাম্পবেল ম্যাকডোনাল্ড, এএম। জন্ম ১৯২৮ সালের ১৭ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার গ্লেন আইরিশে।

ঘরোয়া প্রথম শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া বুশর‌্যাঞ্জার্সের প্রতিনিধিত্ব করেন কলিন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। দলের প্রয়োজনে উইকেটরক্ষকের দায়িত্বও পালন করতেন।

মেলবোর্নের স্কট কলেজে পড়ালেখার পর মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

ক্রিকেটজীবনের শুরুতে টমস ও ম্যাকডোনাল্ড তাঁদের রাজ্য দল ভিক্টোরিয়ার পক্ষে ওপেনিং করতেন। একই মৌসুমে ক্লাব দল ও মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষেও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। টমস খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর চিকিৎসাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তখন থেকে জিম বার্কের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটি গড়েন ম্যাকডোনাল্ড। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল জুটি তাঁরা।

১৯৫২ সালের ২৫ জানুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক ঘটে। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে সতীর্থ ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জর্জ টমস-সহ রিচি বেনো’র একসঙ্গে অভিষেক হয়। ওই খেলায় অস্ট্রেলিয়া ২০২ রানের বিরাট ব্যবধানে জয়ী হয়।

১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে ইংরেজ দলের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজে নিজের খেলোয়াড়ী জীবনের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেন কলিন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বাধিক রান তোলার কৃতিত্ব অর্জন করেন ১৯৫৯ সালে। অ্যাডিলেডে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৭০ রান তুলেন। তবে দ্বিতীয় দিনের অধিকাংশ সময় রিটায়ার্ড হার্ট ছিলেন। মেলবোর্নের নিজ মাঠে অনুষ্ঠিত ৫ম টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন।

১৯৫৮-৫৯ ও ১৯৬০-৬১ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার অধিনায়কেরও দায়িত্ব পালন করেন কলিন।

১৯৬১ সালে ইংল্যান্ড সফরে যান। কিন্তু, কবজিতে চোট পেয়ে তাকে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে হয়।

পরে কলিন ম্যাকডোনাল্ড বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বীমা প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করার পর টেনিস অস্ট্রেলিয়ার নির্বাহী পরিচালক মনোনীত হন। ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনে (এবিসি) ক্রিকেটের ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেন।

কলিন ম্যাকডেনাল্ডের বড় ভাই ইয়ান ম্যাকডোনাল্ড ও কাজিন কিথ রিগ ভিক্টোরিয়ার পক্ষে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতেন। 

Share.