মুক্তিযুদ্ধের বছরের অর্ধশতক পর ২০২০ সালে এসে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আবারও শিক্ষাক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন ঘটেছে। এই যেমন পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীরা সবাই পরের ক্লাসে উঠে যাবে।
তাছাড়া এবার মাধ্যমিকের নতুন ক্লাসে ওঠা শিক্ষার্থীদের চিরাচরিত প্রথায় রোল নম্বর দেওয়া হবে না। বার্ষিক পরীক্ষার মেধাক্রমের ভিত্তিতে আগে যে রোল নম্বর দেয়া হত, তার বদলে শিক্ষার্থীদের এবার আইডি নম্বর দেয়া হবে। আজ মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি একথা জানিয়েছেন।
আর প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা আগের ক্লাসের রোল নিয়ে পরের ক্লাসে উঠবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, রোল নম্বর নিয়ে একটা সমস্যা হয়। প্রত্যেক শ্রেণিতে যে রোল নম্বর থাকে, আমাদের রোল নম্বরের যে প্রথা রয়েছে, তার কারণে একটা অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা হয় এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক সময় যে সহযোগিতার মনোভাব, যেটি থাকার দরকার, অনেক সময় সেটির অভাব ঘটে রোল নম্বরের কারণে, সামনে আসতে চায় সবাই।
আমরা চেষ্টা করছি ২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের শ্রেণির রোল নম্বরের এই বিষয়ের পরিবর্তে আইডি নম্বর প্রদান করতে, এতে পুরানো রোল নম্বর প্রথার বিলুপ্তি হবে এবং অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা সৎ প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে বলে আশা করছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক থেকে সব শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি দেওয়া হবে। পুরো শিক্ষা জীবনে সে ওই আইডি নম্বর নিয়ে থাকবে, তাতে তাকে ‘ট্র্যাক’ করা যাবে, সে ঝরে পড়ছে কি না।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, (প্রাথমিকে) আমাদের আইডি নম্বর দেয়ার পরিকল্পনা নেই। আগের (বছরের) রোল নম্বরই (নতুন ক্লাসে) দেয়া হবে।
দীপু মনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমতা আনা এবং গুণগত মান অর্জনে সরকার কাজ করছে। এবার লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, আমরা আশা করছি, তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও হয়ত সমতা আসবে।
জুনে এসএসসি, জুলাই-অগাস্টে এইচএসসি
চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হলেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি।
মহামারীর কারণে সিলেবাস কমিয়ে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে জুনে নেয়া হবে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা জুলাই-অগাস্টে।
এর আগে এসএসসি ও এইচএসসি স্তরের শিক্ষার্থীদের সিলেবাস ‘পুনর্বিন্যস্ত’ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত স্কুল-কলেজে নিয়ে ক্লাস করানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ১৬ মার্চ থেকে প্রত্যক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। সিলেবাস কাস্টমাইজ করার কার্যক্রম চলছে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জানাতে পারব। পরের স্তরে যেতে যেগুলো প্রয়োজন, সেগুলো মাথায় রেখে সিলেবাসকে কাঁটছাট করে ছোট করা হবে, সেটি আমরা জানিয়ে দেব।
আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘পুনর্বিন্যস্ত’ সিলেবাস ৩১ জানুয়ারির মধ্যে জানিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত হয়ত তাদের ক্লাসরুমে নিয়ে ক্লাস করানো হবে। জুলাই-অগাস্ট নাগাদ এই পরীক্ষা গ্রহণের আশা প্রকাশ করছি।
মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষাসহ স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাও এবার হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের কোথায় দুর্বলতা তা বোঝার জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ♦