বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ট্রাম্প মিত্র মিচ ম্যাককনেল

0

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র মিচ ম্যাককনেল।

স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার দেশটির কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ এ নেতা বাইডেনকে অভিনন্দন জানান। সিনেট এখন রিপাবলিকানদের দখলে। সেই সিনেট ফ্লোরেই বক্তব্য দেন ম্যাককনেল।

এর আগে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকটোরাল কলেজ বাইডেনের জয় নিশ্চিত করে।

ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনকে অভিনন্দন জানানোর প্রশ্নে এত দিন নীরবতা অবলম্বন করে আসছিলেন রিপাবলিকান দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা ম্যাককনেল। এ নিয়ে উৎকণ্ঠা ছিল রাজনৈতিক মহলে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের বাইরে নিশ্চিত বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন না জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই উৎসাহিত করছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।

বিশ্বনেতাদের মধ্যে এতদিন যারা বাইডেনকে অভিনন্দন না জানানোয় সমালোচিত হন, তারাও গতকাল তাকে অভিনন্দন জানান। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজ অব্রাদর।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ৩০৬ ইলেকটোরাল কলেজ পেয়ে জয় নিশ্চিত করে। অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পান ২৩২ ইলেকটোরাল কলেজ। এর মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউসে বসা বাইডেনের জন্য নিশ্চিত হয়ে গেল। আগামী ২০ জানুয়ারি পরবর্তী চার বছরের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন তিনি।

যদিও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখনো পরাজয় মেনে নেননি ট্রাম্প। নির্বাচনে কারচুপির ভিত্তিহীন অভিযোগ জারি রেখেছেন তিনি।

সিনেটে দেয়া বক্তব্যে ম্যাককনেল বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনে ‘ভিন্ন ফল’ আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ইলেকটোরাল কলেজ বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করায় তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাইডেনের রানিং মেট কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দনের পর ম্যাককনেল বলেন, ‘প্রথমবারের মতো দেশ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পেয়েছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রবাসী গর্বিত হতে পারেন।’

প্রতিক্রিয়ায় ম্যাককনেলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাইডেন। তিনি এক ফোনালাপে বলেন, শিগগির সাক্ষাতের বিষয়ে দুজন সম্মত হয়েছি।

এদিন সিনেটের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা চাক শুমার ট্রাম্পকে সম্মানের সঙ্গে মেয়াদ শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাইডেনকে দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিতেও অনুরোধ করেন তিনি।

এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হ্যারিস বলেছেন, আমি ম্যাককনেলের মন্তব্যকে স্বাগত জানাই।

-ট্রাম্প কি করছেন-
মসনদ ছেড়ে দেওয়ার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও জট পাকানোর চেষ্টা করছেন। তাঁর সমর্থক রাজ্য আইনপ্রণেতারা সুইং স্টেটগুলো থেকে ‘বিকল্প ইলেকটোরাল ভোট’ গ্রহণ করে কংগ্রেসে পাঠিয়েছেন।

আগামী ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন থেকে নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার অমূলক চিন্তা থেকে এখনো সরে আসতে পারছেন না ট্রাম্প।

উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি স্কুল অব লর পরিচালক রেবেকা গ্রিন বলেছেন, নির্বাচন ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আইনি লড়াই ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, চেষ্টা না করার জন্য নয়, ব্যর্থ হয়েছে প্রমাণের অভাবে।

প্রসঙ্গত, গত ছয় সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প শিবিরের মামলা দুই দফা খারিজ করেছেন। ফেডারেল ও রাজ্য আদালত নির্বাচনপরবর্তী ট্রাম্প শিবিরের ৬০ মামলা খারিজ করেছেন।

ভোট গণনা দফায় দফায় করার পরও জর্জিয়া ও উইসকনসিনে নির্বাচনী ফলাফলের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

তবে এতকিছুর পরও ট্রাম্প শিবির থামেনি। গতকাল হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কাইলি ম্যাকনেনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ট্রাম্প এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ ট্রাম্প যে থামছেন না, এ বিষয়টিই স্পষ্ট।

শিবির থেকে নতুন এক কৌশল নেওয়া হয়েছে। যেসব রাজ্যে নির্বাচনের ফল কাছাকাছি ছিল, সেখানে রাজ্যের রিপাবলিকান ট্রাম্প–সমর্থক আইনপ্রণেতারা নিজেরা সভা করেছেন। তাঁরা রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফলের পাল্টা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ‘বিকল্প ইলেকটোরাল ভোট’ দিয়ে ওয়াশিংটনে পাঠাচ্ছেন। এমন বিকল্প ইলেকটোরাল ভোট অ্যারিজোনা, জর্জিয়া , মিশিগান , পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন থেকে পাঠানো হচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার। বলেছেন , তাঁরা এসব বিকল্প ইলেকটোরাল ভোট কংগ্রেসে পাঠিয়ে আইনের সব পথ খোলা রাখছেন।

অ্যালাবামার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান মও ব্রুক ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে কংগ্রেসে আপত্তি জানানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ট্রাম্প–সমর্থক শতাধিক আইনপ্রণেতা যোগ দেবেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারকে বিদায় দিয়ে কয়েক সপ্তাহের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জেপ্যি রোজেনকে। ট্রাম্প তাকে কী কাজে লাগান, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।

এখন দেখার অপেক্ষা, নতুন কোন বিরোধের ছুতো ধরে আবার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার চেষ্টা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

Share.