স্বপ্ন দেখতে হবে এবং কাজ করে যেতে হবে, তাহলে সাফল্য এক সময় ধরা দেবে। এখন ধৈর্য ধারণের সময়। সামনে সুদিন আসবেই। তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তাই মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এম এ রাজ্জাক খান রাজ বলেন, আশা করা যায় শিগগির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং ব্যবসাবাণিজ্য আগের মত চাঙ্গা হয়ে উঠবে। সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় বর্তমান পরিস্থিতি এবং মিনিস্টারের যাত্রা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথাগুলো বলেছেন এ শিল্পোদ্যোক্তা।
মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের পথচলা শুরুর গল্প করতে গিয়ে তিনি বলেন, একেবারে শুরুতে আমরা সাদাকালো টেলিভিশন দিয়ে যাত্রা করলেও সাফল্যের মুখ দেখতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। সাদাকালো টেলিভিশনে সাফল্যের পর স্বল্প মূল্য ও লো ভোল্টেজে চলে এমন টেলিভিশন মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিতে কাজ করি। এরপর রঙিন টেলিভিশনের যাত্রা হয়। তখন মাইওয়ান টেলিভিশনই বাংলাদেশে প্রথম সাত বছরের ওয়ারেন্টি দেওয়া শুরু করে।
প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা মাইওয়ান নামে পরিচিত হলেও কিভাবে নতুন নামে মানুষের আরো কাছে পৌছানো যায়, সে চিন্তাভাবনা করতে থাকি। তখন মিনিস্টার নামটি বেছে নেই, যা আল্লাহর রহমতে এখন সবার কাছেই সমাদৃত।
এ স্বপ্নের শুরু ২০০২ সালের ১ জুন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি ছোট কারখানায় মাত্র পাঁচ সহকর্মী ও পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে।
সিঙ্গাপুর থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা ও চাকরির পর দেশে ফিরে একটি দেশীয় মাল্টিন্যাশনাল ব্র্যান্ডের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের উপর ভর করে আজ তিনি তার সাফল্যের চরম শিখরে। একের পর এক নতুন পণ্য বাজারে এনে তিনি সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে থাকেন। আর সেই স্বপ্নবাজ মানুষ হলেন এম এ রাজ্জাক খান রাজ; যিনি কাল পরিক্রমায় ক্রমশ আজ আস্থার একটি প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
এম এ রাজ্জাক খান রাজ বলেন, বাজারের অন্য টেলিভিশনের তুলনায় মিনিস্টার টেলিভিশন চোখের যত্নে বেশি আন্তরিক। চোখের সুরক্ষায় এ পণ্যটি আই প্রোটেক্টিভ টেকনোলজির তৈরি। এতে রয়েছে উন্নতমানের প্যানেল, তাই বজ্রপাতেও প্যানেল নষ্ট হয় না। এ ছাড়া এতে রয়েছে ফোর কে ও ফুল এইচডি সিস্টেম। এটা কম্পিউটার মনিটর হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। টিভির সঙ্গে দুইটি রিমোট ও একটা ওয়াল হ্যাঙ্গার ফ্রি।
মিনিস্টারের টিভিতে সাত বছরের ওয়ারেন্টি ও চার বছরের প্যানেল গ্যারান্টিসহ রয়েছে এক বছরের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি।
তুলনামূলক কম খরচ ও কম ভোল্টেজে চলে এমন রেফ্রিজারেটরের জন্য তিনি বিল্ট ইন স্ট্যাবিলাইজারসমৃদ্ধ এনার্জি সেভিং রেফ্রিজারেটর এনেছেন, যা ইতোমধ্যে গ্রাহকের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। স্বল্প ভোল্টেজে চলা এ পণ্যটির চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এ রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসারে রয়েছে ১২ বছরের গ্যারান্টি।
রেফ্রিজারেটরের অগ্রযাত্রার ফলশ্রুতিতে তরুণ নেতা এম এ রাজ্জাক খান বাজারে আনেন এয়ার কন্ডিশনার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিনিস্টার এসি এনার্জি সেভিং, ইনভার্টার ও ইএস টেকনোলজিসমৃদ্ধ, মানেও উন্নত। ফ্রিজের মত ইনভার্টার এসির কম্প্রেসারেও থাকছে ১২ বছরের গ্যারান্টি।
এ সব পণ্যের পাশাপাশি তিনি বাজারজাত করেছেন ব্লেন্ডার, রাইস কুকারসহ গৃহস্থালির নানা বৈদ্যুতিক তৈজসপত্র।
করোনাকালে মূলত স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য মিনিস্টার এনেছে “মিনিস্টার হিউম্যান কেয়ার”। বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে গঠিত ছয়টি নতুন ব্র্যান্ড এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। “সেইফটি প্লাস”, “ইজি ওয়াস”, “চাঁদ”, “হেক্সিন”, “কেয়ার এন্ড কেয়ার” ও “ফ্ল্যাশ” এ ছয়টি ব্র্যান্ডে পাওয়া যাচ্ছে প্রোডাক্টগুলো।
“সেইফটি প্লাস” এর মধ্যে হ্যান্ড ওয়াস, গ্লাস ক্লিনার, ফ্লোর ক্লিনার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ভেজি ওয়াস অন্তর্ভুক্ত। “ইজি ওয়াস” এর অধীনে রয়েছে ডিটারজেন্ট পাউডার, লন্ড্রি সোপ ও লিকুইড ডিটারজেন্ট রয়েছে। “চাঁদ” এ রয়েছে ফেব্রিক ব্রাইটেনার (ব্লু), ডিশ ওয়াস লিকুইড ও ডিশ ওয়াস বার। “হেক্সিন” এর মধ্যে রয়েছে হ্যান্ড রাব। “কেয়ার এন্ড কেয়ার” এর অধীনে বডি ওয়াস, বডি লোশন ও পেট্রোলিয়াম জেলি রয়েছে। “ফ্ল্যাশ” এ রয়েছে টয়লেট ক্লিনার ও টয়লেট ক্লিন পাউডার।
এ ছাড়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মাস্ক নিয়ে সারাদেশে অব্যবস্থাপনা শুরু হলে ও নিম্নমানের মাস্ক যখন চড়া দামে বিক্রি শুরু হয়, তখন এ তরুন তুর্কী দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রুততার সঙ্গে বিদেশ থেকে মাস্ক তৈরির মেশিন আনেন। মানুষের প্রয়োজনে বাজারে তুলনামূলক কম দামে মেল্ট ব্লোনসমৃদ্ধ তিন লেয়ারবিশিষ্ট মাস্ক সরবরাহ শুরু করেন, যা ইতোমধ্যে ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন পেয়েছে। মানুষের কাছেও সমাদৃত হয়েছে।
করোনার মহামারীতে দেশের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও এ তরুণ প্রগতিশীল ব্যবসায়ী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের সব পণ্যই আমাদের নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন করা হয়। এখানে দেশের তরুণ, প্রতিভাবান ও উদ্যোমী কর্মীরা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন। এ মহামারীতেও আমাদের কর্মীরা সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করে নিষ্ঠার সঙ্গে তারে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আমি মনে করি, আমাদের কোম্পানী ১৮ বছর ধরে এ ভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
‘আমার পণ্য আমার দেশ, গড়ব বাংলাদেশ’- এ স্লোগানকে লালন করে আমাদের এগিয়ে চলা”।
সরকার ইতোমধ্যে মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য প্রচুর কাজ করছে ও করোনা পরিস্থিতে অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া সরকার বিভিন্ন সময়ে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ, বিসিক শিল্পনগরীগুলোয় জমি বরাদ্দ ইত্যাদি সুবিধা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
এম এ রাজ্জাক খান রাজ সরকারের এমন প্রয়াসের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি ব্যবসায় মালিক সমিতির সবাইকে সরকারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করার আহ্বান করেছেন। ♦