সাকিব আল হাসান: ফিরেই এক নম্বরে, লক্ষ্য দলগত বিশ্বজয়ে

0

নিষিদ্ধ হওয়ার আগে অর্থাৎ ঠিক এক বছর আগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ছিলেন ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বসেরা। তখন ৩৯৪ পয়েন্ট নিয়ে ওয়ানডেতে শীর্ষে ছিলেন তিনি। টেস্টে ছিলেন তৃতীয়, টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয়। ৩৯৭ পয়েন্ট নিয়ে তিনি টেস্টে ছিলেন তিন নম্বরে। আর টি-টোয়েন্টিতে তার পয়েন্ট ছিল ৩৫৫।

সম্প্রতি এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে এ অলরাউন্ডারের। নিষেধাজ্ঞার পরও র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানেই ফিরেছেন তিনি। তিনি ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে ফিরেছেন চার নভেম্বর। এখন তার পয়েন্ট ৩৭৭। সাধারণত দেশের হয়ে একটি ওয়ানডেতে অংশ নিতে না পারলে একজন খেলোয়াড় তার রেটিং পয়েন্টের আধা শতাংশ (১/২%) হারান। পুরো একটি বছর মাঠের বাইরে থাকার কারণে ম্যাচপ্রতি সাকিব হারিয়েছেন ১.৯৭ পয়েন্ট। প্রসঙ্গত তার নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলেছে তিনটি।

এবার দেখা যাক, টেস্ট ম্যাচে তার অবস্থান। টেস্টে একজন খেলোয়াড় একটি ম্যাচ না খেললে তার মোট রেটিং পয়েন্টের এক শতাংশ হারান। সাকিব তার নিষেধাজ্ঞার সময় টেস্ট মিস করেছেন চারটি। এতে প্রতি ম্যাচে পয়েন্ট হারাবেন ৩.৯৭ করে। এর মানে, তিনি হারিয়েছেন প্রায় ১৬ পয়েন্ট। এ হিসেবে তার পয়েন্ট হবে ৩৮১। তখন তিনি থাকবেন চার নম্বরে।

সাকিব আল হাসান টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে ফিরবেন ১১ নভেম্বর। সাধারণত একটি টেস্ট ম্যাচ, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে র‌্যাংকিং আপডেট করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।

এবার মাঠে ফিরে সাকিব আল হাসান নিয়মিত খেলতে চান গত বিশ্বকাপের খেলাটাই। গেল বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সটাকেই নতুন শুরুর মানদন্ড ধরতে চান তিনি। এ লক্ষে পৌঁছাতে সাকিব ফিটনেস ও দক্ষতা বাড়ানোয় মনোযোগী হয়েছেন। তার প্রস্ততির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ফিটনেস। পাশাপাশি অন্যের আয়নায় নিজেকে দেখতে চান তিনি। এর অর্থ, এর আগে নানা সিরিজে তাঁর চেনা প্রায় সব ক্রিকেট বিশ্লেষকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। তাঁদের নিজের ব্যাটিংয়ের খুঁত খুঁজে বের করতে বলেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, প্রতিপক্ষ দল তাঁকে কীভাবে আউট করার ছক আঁকে, সেটি তাদের আয়নাতেই দেখে নেওয়া। সবশেষে স্পিন বলে আগ্রাসী হতে চান সাকিব। ঠিক ডেভিড ওয়ার্নার ও জনি বেয়ারস্টোর মতো খেলতে চান।

সাকিবের ফেরা নিয়ে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছেন কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। কোচ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভালো লাগছে যে সে আবার ক্রিকেট খেলা শুরু করবে। সাকিবের খেলা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন না আমি, আজ হোক কাল হোক সে আগের জায়গায় ফিরে আসবে। মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও সাকিব আল হাসানের সম্পর্কটা গুরু শিষ্যের চেয়ে বেশি। খেলা নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে সাকিব শরণাপন্ন হন এ কোচের। তাই প্রিয় শিষ্যের পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তিত নন কোচ। তার মতে, কয়েক দিনের মধ্যে সাকিব ফিরে আসবে পুরনো রূপে।

জুয়াড়ির কাছে প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের (এসিইউ) কাছে গোপন করেছিলেন সাকিব আল হাসান। এর অপরাধে এক বছর নিষিদ্ধ থাকতে হয়েছে তাকে। গত ২৯ অক্টোবর থেকে সাকিবের সে নিষেধাজ্ঞা কেটে গেছে। এর আগে এ অপরাধের জন্য কেমন শাস্তি হয়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থেকেও দুর্দান্ত খেলেন ২০১৯ বিশ্বকাপে। ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে করেছিলেন ৬০৬ রান। বোলিংয়ে পেয়েছিলেন ১১ উইকেট।

যা হোক, নিষেধাজ্ঞা ও করোনার এ সময়টা জীবন নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে সাকিব আল হাসানকে। তিনি মনে করেন, সতীর্থদের সঙ্গে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেছেন, আমার প্রতি তাদের যে বিশ্বাসটা ছিল এখনো সেটাই থাকবে। করোনা ও নিষেধাজ্ঞা তার জীবনকে ভিন্নভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। অনেক বেশি আইডিয়া তৈরি করতে শিখিয়েছে। তাই তিনি বলেন, আমি এখন অনেক ভিন্নভাবে চিন্তা করি যেটা এক বছর আগে হয়তো করতাম না। সামনে এটা আমাকে অনেক সহায়তা করবে বলে মনে করি। এতেই বুঝিয়ে দিলেন, ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত সেরা হয়েই থাকতে চান এ বাঁহাতি অলরাউন্ডার।

এর ইঙ্গিতও পাওয়া গেল তার কথায়, ‘সেরা মুহূর্ত এখনও আসেনি। সেরা মুহূর্ত হবে বাংলাদেশের হয়ে কোনো বিশ্বকাপ জয়, সেটা ওয়ানডে হোক বা টি-টোয়েন্টি। এ পর্যন্ত যদি মনে করি, সেরাগুলোর একটি হলো অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট ম্যাচ জয় ও এবারের বিশ্বকাপে আমার পারফরম্যান্স, ব্যক্তিগত দিক থেকে।’ বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নপূরণের সুযোগ সামনে পাবেন সাকিব। আগামী তিন বছরে বিশ্বকাপ হবে তিনটি। ২০২১ ও ২০২২ সালে পরপর দুইটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০২৩ সালে হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এ বিশ্ব আসরগুলোয় বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে নিজের ভাবনাও জানালেন তিনি।

‘টি-টোয়েন্টিতে আমি জানি না আমরা কতটা এগিয়েছি। তবে এই সংস্করণের একটা সৌন্দর্য্য হলো, কেউ ফেবারিট নয়, যে কোনো দিন যে কোনো দল যে কাউকে হারাতে পারে। ওইটা আমাদের একটা ভরসা। যেহেতু আমরা এখন নিয়মিত টি-টোয়েন্টি খেলেছি, ২০১৫-১৬ থেকে অনেক ভালো একটা দল আমরা, অনেক বুঝতে পারি কিভাবে খেলা উচিত, সেটা আমাদের সাহায্য করবে আরেকটু ভালো খেলার জন্য।’

আরও যোগ করেন, ‘২০২৩ বিশ্বকাপ এখনও বেশ দূরে। করোনাভাইরাসের কারণে সেভাবে খেলাও হয়নি। আমার মনে হয় না এটা নিয়ে কেউ ভাবতে পেরেছে। হয়ত এক-দেড় বছর আগে থেকে ওটা নিয়ে ভাবনা শুরু হবে।’ 

Share.