করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা উঠছে। গোটাবিশ্বের একই পরিস্থিতি। গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে স্প্যানিশ ফ্লুর তিনটি ঢেউ বা ওয়েভ দেখা গিয়েছিল। এর মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউটা ছিল প্রথমটির তুলনায় মারাত্মক। তাই পুরোপুরি নিশ্চিন্ত বসে থাকার জো নেই।
সংক্রমণের হার কমে গিয়ে বা স্তিমিত হয়ে পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী হলে তাকে দ্বিতীয় ঢেউ বলা হয়। আমাদের সংক্রমণের হার কি আদৌ কমেছে? যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বা যাঁদের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, তাঁরা সবাই কি নমুনা পরীক্ষার আওতায় আসছেন? তাই আমাদের এখানে বলা মুশকিল যে এটা দ্বিতীয় ঢেউ না প্রথম ঢেউ?
অন্যসময়ের তুলনায় শীতে আমাদের ঘোরাঘুরি, উৎসব, অনুষ্ঠান বেড়ে যায়। এবার শীতে যেকোনো জনসমাগম, উৎসব, অনুষ্ঠান, ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। উৎসব অনুষ্ঠানের জন্য সীমিত পরিসরে অল্প মানুষ নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করুন।
শীতকালে মানুষের নানা ধরনের ফ্লু, নিউমোনিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বাড়ে। বাড়ে হাঁপানি বা ব্রংকাইটিস রোগীদের সমস্যা। প্রতিবছর ফুসফুসের নানা রোগ, সংক্রমণ, জ্বর, কাশির রোগীতে শীতকালে আমাদের হাসপাতাল পূর্ণ হয়ে যায়। তাই শীতে কোভিডসহ অন্যান্য ফুসফুসের সংক্রমণ বাড়বে, তা ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষকেরা বলেন, যেকোনো ভাইরাস শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে। শীতে মানুষের বদ্ধ ঘরে থাকার প্রবণতা বাড়ে, ফলে অ্যারোসল ছড়ায় বেশি। শীতে দুনিয়াজুড়ে বয়স্ক ও শিশুদের ফুসফুস সংক্রমণজনিত মৃত্যুহারও সবচেয়ে বেশি থাকে। এ বছর বড়সংখ্যক নবজাতক শিশু লকডাউন ও মহামারির কারণে যথাসময়ে সব টিকা শেষ করতে পারেনি।
যেহেতু করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি কিংবা এর টিকা আবিষ্কৃত হয়নি তােই দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে প্রস্ততি নিতে হবে আমাদেরই।
যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন
* কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি।
* সবকিছু স্বাভাবিকভাবে আগের মতো চলছে। তার মানে এই নয় যে, করোনা সংক্রমণ শেষ হয়ে গেছে। জীবন-জীবিকার কারণে সব খুলে দেওয়া হয়েছে; মহামারি শেষ হয়ে গেছে বলে নয়। এ কথা মনে রাখতে হবে।
* মনে রাখতে হবে, এখনও বেড়ানো, উৎসব, সামাজিকতা, জনসমাগম করার মতো স্বাভাবিকতা আসেনি।
* অনেকে মনে করেন, মৃত্যুহার কমে গেছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ঝুঁকি কমেনি মোটেও। পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিটি বা এমন কেউ যাঁর ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনি রোগ বা জটিল সমস্যা আছে তাঁদের হেলা করবেন না।
মেনে চলুন
* অপ্রয়োজনে বাইরে যাবেন না। কাজ শেষে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসুন। আপনার পরিবারের কাছে আপনি সবচেয়ে মূল্যবান ব্যক্তি। তাই অকারণে ঝুঁকি নেবেন না।
* বাইরে গেলে সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে চলুন। যথাসম্ভব দূরত্ব মেনে চলুন। ঘরের বাইরে অবশ্য মুখে মাস্ক পরবেন। মাস্ক খুলবেন না।
* বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস অব্যাহত রাখুন। হাঁচি–কাশির আদবকেতা মেনে চলুন।
* অসুস্থবোধ করলে, জ্বর, কাশি বা গলাব্যথা, স্বাদহীনতা দেখা দিলে উপসর্গ যত মৃদুই হোক, নিজেকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে ফেলুন। পরীক্ষা না করা বা চিকিৎসকের পরামর্শ না নেওয়া পর্যন্ত বের হবেন না।
* বাড়ির সবার কাছ থেকে দূরে থাকুন। এখন অনেকেরই মৃদু উপসর্গ হচ্ছে, আর তা নিয়েই সবাই বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটা অন্যায়।
* শিশুদের নিয়ে অকারণে বাইরে যাবেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ। সেটা শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই করা। তাই বলে তাদের নিয়ে সমুদ্রসৈকতে, রিসোর্ট কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ঘুরে বেড়ানো যাবে না। শিশুরা নীরব বাহক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
* পরিবারের বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা, ডায়াবেটিসের রোগী, হৃদ্রোগ, কিডনি রোগ বা ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছেন যিনি, তাঁকে আলাদা রাখুন। তিনি বাইরে তো যাবেনই না, যাঁরা বাইরে থেকে আসেন, তাঁরাও তাঁর কাছে যাবেন না। দরকার হলে শীতের আগে ফ্লু বা নিউমোনিয়ার টিকা ঝুঁকিপূর্ণদের দিয়ে নিতে পারেন। এতে করোনার ঝুঁকি না কমুক, অন্য রোগে হাসপাতালে ভর্তির হার কমবে। ♦