করোনাভাইরাস বিশ্বের অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যর পাশাপাশি ক্ষতি করেছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। অন্যান্য দেশের মতো এ ক্ষতির সম্মুখীন কানাডার শিক্ষার্থীরাও।
কোভিড-১৯ এর তাণ্ডবে কানাডা থেকে অনেকটা নীরবে চলে গেল ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম। মূলত মার্চের প্রথম দিক থেকে কানাডার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে পারেনি। ক্লাসে বসে শিক্ষা নেয়ার সুযোগ এখন বন্ধ রয়েছে। অনলাইনে কিছু ক্লাস চললেও এর মান ফিজিক্যাল ক্লাসের মতো নয়।
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম এ বছর এখানকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল সম্পূর্ণ নতুন। প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের সাড়া পেতে বেশ অসুবিধা হয়েছে। আর সব শিক্ষার্থী সমানভাবে এ কার্যক্রম ধরতেও পারেনি।
কানাডার ইউনিভার্সিটিগুলো অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করতে মোটামুটি সফল হলেও জুনিয়র স্কুল, হাইস্কুল ও কলেজগুলোয় এ কার্যক্রম সেভাবে সফল হয়নি। স্কুলের শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনি।
অনেকের কম্পিউটার ও অনলাইন ক্লাস করার মতো টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট না থাকার কারণে এ কার্যক্রম সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি। কানাডার অধিকাংশ প্রভিন্সে কিন্ডারগার্টেন থেকে গ্রেড সিক্স পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষার বিধান এমনিতে নেই। আর উপরের ক্লাসগুলোয় দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফল ও গত তিন মাসের অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে এ বছর অনেকটা ‘অটো প্রমোশন’ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট কার্ডে মূল্যায়ন করার সময় প্রতিটা বিষয়ে মার্চে (সেকেন্ড টার্ম) যে নম্বর পেয়েছে, তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
চলতি মাসের বিভিন্ন সময়ে সীমিত আকারে স্কুলগুলো গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম সেরে ফেলেছে। অন্য বছরগুলোয় ব্যাপক জাঁকজমকপূর্ণ গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম করা হলেও এবার সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখে ৮ থেকে ১০ জন করে শিক্ষার্থীকে স্কুল ও কলেজে ডেকে গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম আলাদাভাবে করা হয়েছে।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মার্চ পর্যন্ত ক্লাস হলেও আগামী বছরের কার্যক্রম নিয়ে চিন্তিত এখানকার ছাত্রছাত্রীরা। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে সেপ্টেম্বরে শুরু হতে যাওয়া ২০২০-২১ শিক্ষাবছরের ফিজিক্যাল ক্লাস এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত। যদিও কয়েকটি প্রভিন্সের নীতিনির্ধারকরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্কুল খোলার ব্যাপারে সম্মতি প্রকাশ করেছেন।
কানাডার কিন্ডারগার্টেন থেকে গ্রেড টুয়েলভ পর্যন্ত যে শিক্ষা কারিকুলাম রয়েছে, সেখানে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি অন্য বিষয়গুলোর উপর অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়। স্কুলগুলো বন্ধ থাকার ফলে এসব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। স্কুলগুলোয় বিভিন্ন ক্লাব ও খেলাধুলার পাশাপাশি অনেক কিছু শিখিয়ে দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রান্না শেখা, কাঠের কাজ, মিউজিক ক্লাস, আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কানাডার ভেতর ও বিভিন্ন দেশে শিক্ষাসফরের ব্যবস্থা সবকিছুই বন্ধ ছিল এ বছর। এখানকার স্কুল-কলেজের লাইব্রেরি ও ল্যাবগুলো বেশ মানসম্মত। ছাত্রছাত্রীরা মার্চের পর এগুলো ব্যবহার করতে পারেনি।
মার্চের পরে ইউনিভার্সিটিগুলো বন্ধ থাকার ফলে ফিজিক্যাল ক্লাস বন্ধ। তবে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে বিদেশ থেকে কোনো স্টুডেন্ট কানাডায় আসতে পারছে না। তবে তারা অনলাইনে নিজ নিজ দেশে বসে ক্লাস করছে। ফলে লাখো ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট কানাডায় বসে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কানাডায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা ও উদ্বিগ্নতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ♦