যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরে মাস্ক ও পিপিই তৈরির একটি প্লান্ট স্থাপন করবে বাংলাদেশের বেক্সিমকো গ্রুপ। এ লক্ষ্যে দেশটিতে ২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বেক্সিমকো। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিতের শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। এমন ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে এ বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বেক্সিমকো।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এ খাতে বড় বিনিয়োগ করছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি।
বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ডিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ নাভিদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ডেট্রয়েটের প্লান্টে তাদের কোম্পানি ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। আগামী নয় মাসের মধ্যে এ প্লান্ট প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বাংলাদেশেও এ খাতে ৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে বলে ব্লুমবার্গকে জানান তিনি। প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে ডেট্রয়েটে এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করবে। এরপর ক্রমান্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য এলাকায় এটি সরবরাহ করা হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে নিউইয়র্ক ও প্যারিসের নামিদামি ব্র্যান্ড থেকে সুরক্ষাসামগ্রীর ক্রয়াদেশ পাচ্ছে বেক্সিমকো। এরই মধ্যে বাংলাদেশী এ জায়ান্ট কোম্পানী যুক্তরাস্ট্রের বাজারে ৬৫ লাখ ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) রপ্তানির কার্যাদেশ পেয়েছে।
২৫ মে এমিরেটসের একটি উড়োজাহাজে এ কার্যাদেশের প্রথম চালান ঢাকা থেকে পাঠানো হয়। যুক্তরাস্ট্রের ফেডারেল ইমারজেন্সি এজেন্সির (এফইএমএ) জন্য দেশটির পোশাকের ব্র্যান্ড হেইনস বেক্সিমকোর কাছ থেকে ৬৫ লাখ পিপিই কিনেছে।
নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো পিপিই তৈরি ব্যবসায় নেমেছে বেক্সিমকো। জানা গেছে, পশ্চিমা দেশগুলোর মতো বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কোনো কর্মী কমাবে না। বরং প্রতিষ্ঠানটির এ খাতে নিয়োজিত ৪০ হাজার কর্মীর বেতন-ভাতাদি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। আর বিশ্বব্যাপী পিপিই চাহিদা বৃদ্ধির কারণে প্রতিষ্ঠানটি এখন এ সুরক্ষাপণ্য তৈরিতে বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছে।
মিশিগানে প্লান্ট স্থাপনের বিষয়ে বেক্সিমকোর সিইও আরো বলেন, ডেট্রয়েটে আমরা যৌথ উদ্যোগে এ প্লান্ট স্থাপন করব। এখানে পিপিইর একটি অসংখ্য ক্রেতা রয়েছে। মিশিগান অঙ্গরাজ্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ প্রকল্পের জন্য সব ধরনের সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা শিকাগোভিত্তিক একটি আমেরিকান কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে এ প্লান্ট স্থাপন করব।
সৈয়দ নাভিদ হোসেনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পিপিই তৈরিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পথে হাঁটছে বেক্সিমকো। বিশ্ববাজারে উন্নতমানের পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে তারা। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বিশ্ববাজারে উন্নতমানের পিপিই সরবরাহকারী সেরা তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থাকতে চায় বেক্সিমকো। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য এরই মধ্যে দেশের বাজারে পিপিই বিক্রি শুরু করেছে তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত বিশ্বমানের এসব পিপিই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করছে বেক্সিমকো। এর বাইরে বাংলাদেশ পুলিশকে উল্লেখযোগ্য পিপিই দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এসএইচএস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও অনুমোদন পাওয়ার পর দেশটিতেও পিপিই সরবরাহ করেছে বেক্সিমকো। ♦