বাংলাদেশ চাইল্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, করোনায় মানুষ কেন দ্রুত মারা যাচ্ছে, তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। ভাইরাসটি দেশে ছড়িয়ে পড়ায় মানুষের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, বলেন ড.সমীর কুমার সাহা।
বিশ্বখ্যাত এ অণুজীববিজ্ঞানী বলেন, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যেপ্রাচ্য, কিংবা চীন থেকে করোনা শনাক্ত যারা আসছেন, তাদের থেকে উপসর্গগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি দ্রুত কীভাবে ছড়াচ্ছে, সেটাও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। করোনার টিকা আবিষ্কারে ভূমিকা রাখবে জিন রহস্য উম্মোচন।
বিশ্বব্যাপী গবেষকরা ১শ’র বেশি টিকা নিয়ে কাজ করছেন। ১০টি টিকা ট্রায়ালে রয়েছে। তবে করোনার জিনোম আবিষ্কার করে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন ড. সমীর কুমার সাহা ও তার মেয়ে ড. সেঁজুতি সাহা।
চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অনুজীব বিজ্ঞানী ড.সেঁজুতি সাহা জানান, ২৯ মার্চ আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোভিড-১৯ এর টেস্ট করার জন্য অনুমতি পাই। সেদিন থেকে আমাদের যাত্রা শুরু জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের।
বিল ও মিলিন্ড গেটসের সঙ্গে আমরা কাজ করি অনেক বছর ধরে। আমরা কোভিড-১৯ এর রেসপন্সে টিম হিসেবে জড়িত হয়েছি জানানোর পর তারা আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করেন। এর আগেও আমরা নানা ধরণের ভাইরাস, ইনফ্লেুয়েঞ্জা ভাইরাস ও বেশ কয়েকটি ব্যাকটেরিয়ার জিনোম সিকোয়েন্স করেছি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায়।
ল্যাবে ভাইরাসের সিকোয়েন্স করার আগে আমরা একে নিষ্ক্রিয় করে নেই যাতে ছড়াতে না পারে। বিষয়টা খুব জটিল। এর ইন্টেলিজেন্স গাইডেন্সটা এসেছে চ্যান জুকারবার্গ বায়োহাব বা ইনেশিয়েটিভ থেকে। তারা কিছু প্রটোকল ও টেকনিক ব্যবহার করে, যা আমাদের কাজে লেগেছে। আমি দুবছর আগে এ প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং নিয়েছিলাম।
এইচআইভি ও ডেঙ্গুর মতো করোনার ভ্যাকসিনও আবিষ্কৃত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। সেঁজুতি আরও বলেন, আমি স্টাডি করার সময়ে শিখি কীভাবে জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে হয়, বিশ্লেষণ করতে হয়। এ সুযোগ কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা পায় না। আমার ইচ্ছা ছিল, যেটা বাইরে শিখেছি সেটা দেশে নিয়ে আসবো। চার বছর আগে বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এ জেদটা নিয়ে দেশে ফিরি যেন এখানেই একটা সিস্টেম ডেভেলাপ করতে পারি যাতে পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয়।
আমার মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। প্রটোকলগুলো শিথিল হচ্ছে, মেশিন সহজ হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে বেশ কয়েকটা সিকোয়েন্সার এসেছে। মেশিন থাকলেই হবে না। আমাদের টেকনিক্যাল এক্সপার্টিস লাগবে। এটা গ্রো করাতে হবে। কারণ কারও মেশিন আছে, কারও টেকনিক্যাল এক্সপার্টিস রয়েছে।
এখন পর্যন্ত ২৪ হাজারের বেশি সিকোয়েন্সিং হয়েছে। প্রথম এ ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স হয়েছে ৯ জানুয়ারি। ওই দিন সেকোয়েন্সটি দেখতে পেয়েছিলাম বলে জানতে পেড়েছি সার্স সিওভি-২ ভাইরাস থেকে এটি এসেছে। বাদুড়ের মুখ থেকে অন্য প্রাণীর মাধ্যমে এটি মানুষের দেহে ছড়িয়েছে।
পুরো পৃথিবীতে কোভিড-১৯ এর জন্য পিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে। পিসিআর টেস্টের জন্য লাগে প্রাইমার। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য আমরা প্রাইমারগুলো টেস্টের জন্য সাজাতে পেরেছি।
এর মাধ্যমে আমরা ভাইরাসের গতি প্রকৃতি বুঝতে পারছি। এটি পরিবর্তিত হয়ে কি হচ্ছে সেগুলো জানতে পারছি। আমরা দেখছি, ভাইরাসটি একেক দেশে একেক রকম আচরণ করছে। এর কারণ কিন্তু মানুষের আচরন। জীবনাচারের জন্যও হতে পারে। ♦