অ্যাকাডেমিক গবেষণার জন্য সেরা এআই টুলস

0

বিষ্যত শিক্ষার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ভাষা প্রাধান্য রাখবে। এ প্রসঙ্গে আসে চ্যাটজিপিটির কথা।

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ডেনমার্কের গবেষকরা এক্স বার্তায় বলেন, নি:সন্দেহে চ্যাটজিপিটি ভবিষ্যতে শিক্ষাগত গবেষণাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে। তবে অনেক শিক্ষাবিদ জানেন না, কীভাবে এই প্রযুক্তি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়।

শিক্ষা ও এআই একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠছে। তাই শিক্ষাবিদরা এআই-প্রযুক্তি নির্ভর কয়েকটি সফটওয়্যারের কথা বলেছেন, যা শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। এমন কয়েকটি

কনসেনসাস
চ্যাটজিপিটি এবং গুগল স্কলারের মিলিত রূপ হলো কনসেনসাস। এটি এআই-ভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিন। এটি অন্যসব সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনের মতো, তবে এটি শিক্ষা সম্পর্কিত সব ধরণের উত্তর দেয়ার চেস্টা করে। এই অ্যাপের মাধ্যমে সামাজিক নীতি, অর্থনীতি, মানসিক স্বাস্থ্য, ওষুধ এবং স্বাস্থ্য সহায়ক খবরাখবর সহজে পাওয়া যায়।

এই সফটওয়্যারের মূল লক্ষ্য বিশেষজ্ঞদের জ্ঞানে সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং তা বোধগম্য করে তোলা। অনলাইনে নিরপেক্ষ তথ্য খুঁজে পাওয়া বেশ শ্রমদায়ক এবং কস্টের বলে মনে করেন এর উদ্ভাবকরা। এক্ষেত্রে তারা সতর্কতার সঙ্গে এআই ব্যবহার করে সঠিক তথ্য দিচ্ছে। তাই গবেষক কিংবা সাধারণ ব্যবহারীর জন্য কনসেনসাস নির্ভরযোগ্য উৎস হতে চায়।

ক্রিশ্চিয়ান সালেও ও এরিক ওলসন কনসেনসাসের প্রতিষ্ঠাতা। তারা দু’জনেই যুক্তরাষ্ট্রের ডি১ অ্যাথলেট টিমের সদস্য। এই দল সাধারণত প্রফেসর, বিজ্ঞানী ও শিক্ষকদের মধ্যে যারা খেলাধুলায় বিশেষ পারদর্শী তাদের নিয়ে তৈরি করা হয়। বর্তমানে কনসেনসাসে মাত্র ছয় জন কাজ করছেন। আর উপদেষ্টা পর্ষদে রয়েছেন পাঁচ জন।

কনসেনসাসকে সহায়তা করছে বিশ্বখ্যাত কয়েকটি উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান। যেমন ড্রাপার অ্যাসোসিয়েটস, অ্যালামনাই ভেনচারস গ্রুপ, পাথ ভেনচারস, মার্ক ম্যাককেব, ব্রায়ান পোকোরনি, ডেস ট্রেইনার, ডেভিড রোসেনটিল অ্যান্ড ন্যঅট ম্যানিং, কেভিন কারটার, রব মে ইত্যাদি। তাদের অংশীদার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ওপেনএআই, সেমানটিক স্কলার, সেন্টার ফর ওপেন সায়েন্স, সেন্তুর ল্যাবস ইত্যাদি।

সাইটডটএআই
এটি একটি নিফটি (প্রকল্প, টাস্ক ও যোগাযোগ একসঙ্গে পাওয়ার সফটওয়্যার) টুল, যা গবেষণাপত্র খুঁজে পেতে সহায়তা করে। এটি ইলিসিটের মতো, তবে সব গবেষণাপত্রের বিস্তারিত তথ্য এতে পাওয়া যায়। একই সঙ্গে এখানে অভিযোগ করার সুযোগও রয়েছে এবং সেই অভিযোগ খণ্ডনের সুযোগ রয়েছে। এটি একেবারে সঠিক তথ্য দিয়ে থাকে।

সাইটডটএআই-এর প্রতিষ্ঠাতারা জানিয়েছেন, যেকোনো প্রশ্ন করুন এবং গবেষণার সঠিক উত্তর জেনে নিন। এই সফটওয়্যারে এখন পর্যন্ত ১ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১২০ কোটি সাইটেশন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ১৮৪ মিলিয়ন বা ১৮ কোটি ৪০ লাখ আর্টিকেল, বুক চ্যাপ্টার ও ডেটাসেটও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে সাত দিনের ফ্রি ট্রায়ালের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে তিন লাখ ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী, গবেষক ও শিল্পখাতের বিশেষজ্ঞরা এই সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন।

প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। এর মধ্যে আইএসএমটিই পিপল’স চয়েস অ্যাওয়ার্ড, এএলপিএসপি অ্যাওয়ার্ড ফর ইনোভেশন ইন পাবলিশিং, এনএসএফ ফেজ ১ এসবিআইএর গ্রান্ট, ভেসালিআস প্রাইজ উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনে এর সদর দপ্তর।

ইলিসিটডটঅর্গ
ইলিসিট অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতাদের মতে, এটি ‘এআই রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট’। এটি ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়। এখন পর্যন্ত এর সব তথ্য গবেষণানির্ভর। এতে ‘বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা’ এবং ব্রেইনস্টর্মিং নিয়ে জ্ঞানভিত্তিক ও যাচাইকৃত উৎস (ভেরিফায়েড সোর্স) থেকে তথ্যউপাত্ত সরবরাহ করা হয়। এই সফটওয়্যারে প্রয়োজনীয় গবেষণাপত্রের খোঁজ পাওয়া যায়।

লিটারেচার রিভিউ-এর জন্য ইলিসিটি বেশ নির্ভরযোগ্য এবং বর্তমানে এ সংক্রান্ত কাজে সহায়তা করছে। গবেষণাসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়া এর অন্যতম লক্ষ্য। এটি জিপিটি-৩-এর মতো ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এর ব্যবহারকারীদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন গবেষকরা (শিক্ষাখাতের ছাত্র ও গবেষক, বিভিন্ন সংস্থা)। ব্যবহারকারীদের মতে, সাইটেশনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস ইলিসিট।

এর প্রতিষ্ঠাতা অলাভজনক মেশিন লার্নিং রিসার্চ ল্যাব অট। যুক্তরাষ্ট্রের বে এরিয়া, অস্টিন, নিউ ইয়র্ক ও ওরিস্টার আট গবেষক মিলে এই সফটওয়্যার নির্মাণ করেন।

চ্যাটপিডিএফ
এআই-ভিত্তিক অ্যাপ চ্যাটপিডিএফ। এতে সহজে ও দ্রুত জার্নাল পড়া এবং বিশ্লেষণ করা যায়। এটি গবেষণার ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি নামে পরিচিত। ব্যবহারকারী এতে গবেষণাপত্র পিডিএফ আকারে আপলোড করতে পারেন এবং পরে প্রশ্ন করা ও উত্তর দেয়ার সুযোগ পান। এরপর এটি গবেষণা সারাংশ প্রস্তুত করে এবং সম্পূর্ণ আর্টিকেল সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের উত্তর দেয়।

চ্যাটপিডিএফে সব ভাষায় আর্টিকেল আপলোড করার সুযোগ রয়েছে। এমনকি সব ভাষায় চ্যাট করার সুযোগ পাওয়া যায়। এখানে পৃষ্ঠা ওল্টানোর সমস্যা নেই, শুধু স্ক্রল করলেই চলে।

শিক্ষার্থীরা এখান থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতিস্বরূপ বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নোত্তর (এমসিকিউ) পেতে পারেন, হোমওয়ার্ক বা বাড়ির কাজ করতে পারেন। গবেষকদের আর্টিকেল, সায়েন্টিফিক পেপারস ও বুক আপলোড করার সুযোগ রয়েছে এবং অন্য গবেষকদের তথ্য জানার সুযোগ পান তারা। পেশাজীবিরাও এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন। তারা আর্থিক প্রতিবেদন, ম্যানুয়াল, ট্রেনিং ম্যাটেরিয়াল, আইনি চুক্তি ইত্যাদি এখানে পাবেন। এত কিছুর পরেও এটি দ্রুত, সহজ, ফ্রি ও নিরাপদ বলে স্বীকৃত। এখানে সব ধরণের ফাইল নিরাপদ ক্লাউড স্টোরে জমা রাখা হয়।

রিসার্চ র্যাবিট
গবেষণাকাজে ফাস্ট-ট্রাক টুল রিসার্চ র্যাবিট। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি, তবে অনেক গবেষক এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। এক ঘোষণায় প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গবেষকদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিরকাল সেবা দেয়া হবে।

রিসার্চ র্যাবিট গবেষণার ক্ষেত্রে ‘ষ্পটিফাই’ হিসেবে খ্যাত। স্পটিফাইয়ের মতো এখানেও আপনি গবেষণাপত্র যুক্ত করতে পারেন। এমনকি এই সফটওয়্যার আপনার পছন্দ ও আগ্রহের বিষয় আমলে নিয়ে সুপারিশও করে।

এছাড়া আপনি চাইলে অন্য গবেষকদের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবেন এবং বিশ্বের সেরা গবেষকদের সঙ্গে নিজের আইডিয়া ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন। নিজের মতামত ও মন্তব্য জানাতে পারবেন। 

Share.