ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্রমণে ইচ্ছুক পর্যটকদের প্রত্যাখ্যাত ভিসা আবেদনের ফি থেকে ২০১৩ সালে ১৩ কোটি ইউরো আয় করেছে। এই আয় ২০২২ সালের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২২ সালে যা ছিল ১০ কোটি ৫০ লাখ ইউরো।
ইইউ অবজারভার এই আয়কে ‘উল্টো-রেমিট্যান্স’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
২০২৩ সালে প্রত্যাখাত শেনজেন ভিসা ফি থেকে পাওয়া এই আয়ের ৯০ শতাংশ এসেছে আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলো থেকে।
চলতি বছর এই আয় আরো বাড়বে।
চলতি মাসের ১১ জুন থেকে ইইউ ভ্রমণে আসতে ইচ্ছুক প্রাপ্তবয়স্কদের ভিসা আবেদন ফি ৮০ ইউরো থেকে বাড়িয়ে ৯০ ইউরো করেছে ইউরোপীয় কমিশন।
তবে এটি শুধু ব্যবসায়িক বা ভ্রমণের উদ্দেশে আসতে চাওয়া মানুষদের দূতাবাসে জমা দেওয়া ফির হিসাব। অন্যান্য খচর, যেমন আবেদনকারীদের ফাইল গুছাতে এবং বিভিন্ন এজেন্সিকে দেওয়া খরচের হিসেব উল্লেখ করা হয়নি।
ভ্রমণ ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের দেশগুলোয় বেশি।
আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে ঘানা, সেনেগাল এবং নাইজেরিয়ায় প্রত্যাখ্যানের হার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ।
গত বছরে ইইউতে সবচেয়ে বেশি ভিসার আবেদন এসেছে আলজেরিয়া এবং মরক্কো থেকে।
ইইউয়ের মতে, এই ব্লকের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রে সব অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রায় অর্ধেকই তাদের ভিসা ওভার স্টে বা মেয়াদ শেষেও থেকে যান। এ কারণে, গত বছর ৮৩ হাজারের বেশি পর্যটককে ইইউ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ইইউ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে অনিয়মিতদের ফেরত পাঠানোর হার ১৯ শতাংশ।
লাগো কালেকটিভের প্রতিষ্ঠাতা এবং ওডিআই থিঙ্কট্যাঙ্কের সিনিয়র ভিজিটিং ফেলো মার্তা ফরেস্টি ইইউ অবজারভারকে বলেন, ভিসা বৈষম্যের খুব স্পষ্ট পরিণতি রয়েছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রদের এটিতে মূল্য দিতে হয়।
তিনি বলেন, আপনি প্রত্যাখ্যান হওয়া ভিসার খরচকে ‘উল্টো রেমিট্যান্স’ হিসাবে ভাবতে পারেন। যার অর্থ দরিদ্র দেশগুলো থেকে ধনী দেশগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহিত হয়। আর্থিক সাহায্য বা অভিবাসন নিয়ে আলোচনা করার সময় আমরা কখনও এই খরচ সম্পর্কে শুনি না। এটি নিয়ে চিন্তাধারা পরিবর্তন করার সময় এসেছে।
২০১৯ সালে থেকে ইউরোপীয় ভিসা কোডের ২৫এ অনুচ্ছেদকে ব্যবহার করে ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা শুরু করেছে। এটি এমন একটি বিধান যার মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত নিতে না চাওয়া দেশগুলোর ওপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়।
চলতি বছরের এপ্রিলে ইথিওপিয়ার ওপর এমন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সম্মত হয়েছে ইইউ কাউন্সিল। যার অর্থ ইথিওপিয়ার কূটনৈতিক এবং সরকারি পাসপোর্টধারীরা আর ভিসা ফি থেকে ছাড় পাবেন না এবং নানা বাঁধার সম্মুখীন হবেন। এছাড়া ইথিওপিয়ার নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় ১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ৪৫ দিন করা হয়।
এছাড়া অনিয়মিতদের ফেরত পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশকে এমন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ইইউ-বাংলাদেশ সই করা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) চুক্তির মধ্যেও এটি উল্লেখ করা হয়।
২০২১ সালে গাম্বিয়ার বিরুদ্ধেও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে চলতি বছরের এপ্রিলে সেটি তুলে নেওয়া হয়। ২০২২ সালে ইইউ থেকে অনিয়মিত গাম্বিয়ান নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর হার ১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। ♦