ফেলো, জীবনসদস্য, সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীকী প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির ৪৬তম বার্ষিক সভা। গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত এ সভা থেকে বিভিন্ন অঙ্গনের সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দেওয়া হয় বাংলা একাডেমির এ বছরের সম্মানসূচক ফেলোশিপ।
সেই সঙ্গে কবিতা, শিশুসাহিত্য এবং কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত লেখককে দেওয়া হয় একাডেমি পরিচালিত সাতটি পুরস্কার। এ ছাড়া সভা থেকে ২০২২-২৩ সালের একাডেমির বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ২০২৩-২৪ সালের বাজেট উপস্থাপন করা হয়।
বাংলা একাডেমি পরিচালিত সাহিত্য পুরস্কারজয়ী সাত গুণীজন হলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, ড. মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ, ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, ড. অনুপম সেন, ওমর কায়সার ও আবদুল গাফফার।
তাদের মধ্যে ২০২৩ সালের মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার পেয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ; অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ পুরস্কার দেওয়া হয় নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারকে; আবু রুশ্দ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ড. মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ; মেহের কবীর বিজ্ঞান সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ; সাহিত্যিক মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধ সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন অনুপম সেন। সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কবি ওমর কায়সার। বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট: বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান গ্রন্থের জন্য হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার পেয়েছেন আবদুল গাফফার।
সভায় মুক্তিযুদ্ধ, শিল্প-সাহিত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন আক্কু চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধ), মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু (সাংবাদিকতা), তানভীর মোকাম্মেল (চলচ্চিত্র), এ কে শেরাম (আদিবাসী গবেষণা), মো. আলম দেওয়ান (ফোকলোর), ফালগুনী হামিদ (সংস্কৃতি) ও ডা. হালিদা হানুম আখতার (চিকিৎসাবিজ্ঞান)।
সকালে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশিত জাতীয় সংগীতের সুরে জাতীয় পতাকা ও একাডেমির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রয়াত গুণী ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ ও তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মানে নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং একাডেমির সচিব মো. হাসান কবীর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অবহিত করেন। একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে সাধারণ সভা শুরু হয়। তিনি অসুস্থবোধ করায় সাধারণ সভার পরবর্তী কার্যক্রমে পর্যায়ক্রমে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির ফেলো নূহ-উল-আলম লেনিন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার।
পুরস্কার ও ফেলোশিপপ্রাপ্ত গুণীজনদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য, সম্মাননাপত্র, সম্মাননা-স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছা তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি সেলিনা হোসেন ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
কবি নির্মলেন্দু গুণের পক্ষে তাঁর কন্যা মৃত্তিকা গুণ এবং আক্কু চৌধুরীর পক্ষে রামেন্দু মজুমদার পুরস্কার ও ফেলোশিপ গ্রহণ করেন।
বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক-প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি প্রায় সাত দশক ধরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বাতিঘর হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করে চলেছে বাংলা একাডেমি। সাধারণ পরিষদের সভায় সারা দেশ থেকে আগত ফেলো, জীবনসদস্য ও সাধারণ সদস্যদের মতামত ধারণ করে একাডেমি তার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে। ♦