গৃহিণীরাও সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায়

0

নিজস্ব আয় না থাকা, অর্থাৎ পুরোদস্তুর গৃহিণীরাও সরকারের জাতীয় পেনশন কর্মসূচিতে (স্কিম) অংশ নিতে পারবেন। স্বকর্ম ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের জন্য ‘সুরক্ষা’ নামে যে স্কিম রয়েছে, সেটিতেই গৃহিণীরা নিবন্ধন করে চাঁদা দিতে পারবেন।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) গৃহিণীদের কাজের আর্থিক হিসাব যোগ হয় না। কিন্তু তাঁদের শ্রমের মূল্য আছে।

সেই বিবেচনা থেকে গৃহিণীরা স্বকর্মে যুক্ত হিসেবে পেনশন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন। নিজস্ব আয় না থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যের আয় থেকে তাঁরা পেনশনের চাঁদা দেবেন।

দেশের ৪ শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে গত বৃহস্পতিবার থেকে চালু করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা। শুরুতে পেনশন-ব্যবস্থায় রয়েছে চারটি আলাদা স্কিম। সেগুলো হচ্ছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা।

এর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাস; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি; রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিতদের জন্য সুরক্ষা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সমতা স্কিম নেওয়া হয়েছে।

পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন চাঁদাদাতা। তবে চাঁদাদাতা মারা গেলে তাঁর নমিনি বা মনোনীত উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে চাঁদাদাতার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত হতে যত বছর বাকি থাকবে, সেই সময় পর্যন্ত নমিনি পেনশন উত্তোলন করতে পারবেন।

সরকার সর্বজনীন যে পেনশন কর্মসূচি চালু করছে, তাতে ১৮ বছর বয়সে যিনি এতে যুক্ত হবেন, তিনিই পাবেন সর্বোচ্চ সুবিধা। তার মানে অন্যদের মতো গৃহিণীরাও যত কম বয়সে পেনশনের জন্য নিবন্ধন করে চাঁদা পরিশোধ শুরু করবেন, ৬১ বছর বয়স থেকে তত বেশি সুবিধা পাবেন।

সুরক্ষা কর্মসূচিতে মাসে ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা হারে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ আছে। এতে ১৮ বছর বয়সীরা যদি মাসে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দেন, তাহলে ৪২ বছর শেষে তিনি মাসে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে পাবেন। আর যদি চাঁদার পরিমাণ ৩ হাজার হয়, তাহলে তিনি মাসে পাবেন ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা। ২ হাজার ও ১ হাজার টাকা চাঁদায় মাসে পেনশন যথাক্রমে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা ও ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা।

গৃহিণীদের কেউ যদি ৩০ বছরে বয়সে পেনশনে যুক্ত হয়ে মাসে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দেন, তাহলে ৬১ বছর বয়স থেকে মাসে পেনশন পাবেন ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা। চাঁদা ৩ হাজার টাকায় মাসে পেনশন ৩৭ হাজার ৩৯৮ টাকা।

২ হাজার ও ১ হাজার টাকা চাঁদায় মাসে পেনশন মিলবে যথাক্রমে ২৪ হাজার ৯৩২ টাকা ও ১২ হাজার ৪৬৬ টাকা।

এভাবেই পেনশন কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার বয়স ও মাসে কত হারে চাঁদা দেওয়া হচ্ছে, সে অনুযায়ী অন্যদের মতো একই হারে গৃহিণীরাও পেনশন পাবেন।

যেভাবে নিবন্ধন করবেন
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। ওয়েবসাইটটি হলো upension.gov.bd। নিবন্ধনের পরবর্তী ধাপে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা পাসপোর্ট নম্বর, একটি সচল মোবাইল ফোন নম্বর, ব্যাংক হিসাব নম্বর, নমিনি বা মনোনীত ব্যক্তির এনআইডি ইত্যাদি তথ্য লাগবে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, কেউ যদি অনলাইনে নিবন্ধন করতে না পারেন, তাহলে সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় যেতে পারেন। সেখানে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবন্ধনের পাশাপাশি চাঁদা পরিশোধের বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তিদের সহায়তা করবেন। 

Share.