আজ শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ২০২২ বছর আগে জেরুজালেমের কাছাকাছি বেথলেহেম নগরীর এক গোয়ালঘরে আজকের দিনে জন্ম নিয়েছিলেন খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশু।
বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর খ্রিষ্টান সম্প্রদায় আজ রোববার দিনটি উদ্যাপন করছে।
এই উদ্যাপন আনন্দময়, এই আনন্দের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে যিশুর শান্তির বাণী। কারণ মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে জন্মেছিলেন যিশু।
হিংসা, বিদ্বেষ, পঙ্কিলতার পথ থেকে মানুষকে উদ্ধার করে তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন ভালোবাসা, করুণা, মিলন ও সুন্দরের পথ।
মহান যিশু যে মানবিক আদর্শের বাণী প্রচার করে গেছেন, তা সর্বকালে জাতিধর্ম-নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর শান্তির বাণী শাশ্বত।
তিনি আশাহীন মানুষকে দিয়েছেন আশা; জীবনসংগ্রামে পর্যুদস্ত মানুষকে জুগিয়েছেন জীবনজয়ের অনুপ্রেরণা।
যুদ্ধ ও অশান্তির বিপরীতে যিশু মানুষকে ডেকেছেন মমতা, ভালোবাসা ও মিলনের পথে। এর জন্য যিশুকে অবর্ণনীয় নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছিল। কিন্তু সত্য ও কল্যাণের পথ থেকে কোনো কিছুই তাঁকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
নিপীড়কের বিরুদ্ধে তিনি পাল্টা আঘাতের কথা বলেননি; তিনি অকাতরে ক্ষমা করেছেন, আর সমগ্র মানবজাতির হয়ে সব দুঃখ-যন্ত্রণা যেন একাই আত্মস্থ করতে চেয়েছেন। তাই অমানবিকতাকে জয় করে প্রকৃত মানব হয়ে ওঠার জন্য যিশুর শিক্ষা বিরাট পাথেয়।
এ উৎসব কেন্দ্র করে সমগ্র বিশ্বে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোয় বাজার চাঙা হয়ে ওঠে। ঘরে ঘরে উৎসবের নানা আয়োজন চলছে। লম্বা ছুটি নিয়ে প্রিয়জন বা পরিবার নিয়ে মানুষ ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন পর মিলিত হচ্ছেন আপনজনের সঙ্গে।
গত দুই বছর কভিড-১৯ মহামারির করালগ্রাসে বড়দিন উদ্যাপিত হয় ভিন্ন এক বাস্তবতায়। দেশে দেশে নানা বিধিনিষেধ ও সীমিত পরিসরে দিনটি উদ্যাপন করতে হয়েছিল মানুষকে।
মহামারি অবসানের পর এবার পূর্ণ মাত্রায় বড়দিন উদ্যাপনের প্রস্তুতি থাকলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেখানে কিছুটা হলেও ছাপ ফেলছে। এ যুদ্ধের কারণে ইউরোপের অনেক দেশকে শরণার্থী সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। করোনা-পরবর্তী ধাক্কা ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পৃথিবীর অনেক দেশকে সংকটে ফেলে দিয়েছে। ফলে আগামী বছর বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
বড়দিনে যিশুর কোটি কোটি ভক্ত তাঁর বন্দনা গাইবে। যাবতীয় অশান্তি, বিদ্বেষ, হানাহানি, সংকট থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনায় নত হবে মানুষ। যিশু তো এসেছিলেন পরিত্রাণের দূত হয়েই।
বিশ্বের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানাই। যিশুর সংযম, সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার শিক্ষা হোক সবার পাথেয়। পৃথিবী থেকে দূর হোক হিংসা ও অশান্তি।
শুভ বড়দিন। ♦