দেশের পুঁজিবাজারে পণ্য বহুমুখী করার জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই অংশ হিসেবে এটিবি প্ল্যাটফর্ম বা বিকল্প বিনিয়োগ বোর্ডে স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ড ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানির প্ল্যাটফর্মের বাইরে থাকা সব ধরনের সিকিউরিটিজ হাতবদল হবে।
ইতোমধ্যে নতুন এ প্ল্যাটফর্মকে বিশ্বমানের করতে কারিগরি কাজ শেষদিকে। অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) প্ল্যাটফর্মে তিন ধরনের পণ্য লেনদেন হবে।
পণ্যগুলো হলো— বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড, অ-তালিকাভুক্ত যেকোনো সিকিউরিটজ ও বন্ড। এ প্ল্যাটফর্মে আড়াই লাখ কোটি টাকার বন্ড লিস্টেড হবে। এর মধ্যে দুই এক্সচেঞ্জ লেনদেনের জন্য প্রস্তুত। বিকল্প বিনিয়োগ বোর্ড চলতি মাসে চালু করতে যাচ্ছে বিএসইসি।
বিএসইসি সূত্রমতে, ১৯২০ সালের সিকিউরিটিজ আইনে সংজ্ঞায়িত যেকোনো ধরনের সরকারি সিকিউরিটিজ, কোম্পানির বন্ধকিকৃত সম্পদ, হস্তান্তরযোগ্য শেয়ার, স্ক্রিপ, নোট, ডিবেঞ্চার, ডিবেঞ্চারস স্টক, বন্ড, বিনিয়োগ চুক্তি, ডেরিভেটিভ, কমোডিটি ফিউচারস কন্ট্রাক্ট ও অপশনস কন্ট্রাক্ট নতুন এ প্ল্যাটফর্মের আওতায় লেনদেন করা যাবে।
তবে মূলধন বাড়ানোর উদ্দেশ্য এটিবিতে তালিকাভুক্ত হওয়া যাবে না। অর্থাৎ এ প্ল্যাটফর্মের তালিকাভুক্ত হলে শেয়ার সংখ্যা বাড়বে না। শুধু একটি লেনদেন প্ল্যাটফর্মের হিসেবে বিক্রেতার অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্রেতার শেয়ার প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করবে এটিবি।
এ প্ল্যাটফর্মের সিকিউরিটিজকে এটিবিতে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ হিসেবে অভিহিত করা হবে। মূল বোর্ডের মতো এখানে দ্বৈত তালিকাভুক্তির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
এ এটিবি প্ল্যাটফর্মে তিন ধরনের পণ্য লেনদেন হবে। পণ্যগুলো হলো বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড, অ-তালিকাভুক্ত যেকোনো সিকিউরিটজ ও বন্ড।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা বলেন, ‘পুঁজিবাজার পণ্য বহুমুখী করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে বিএসইসি। এরই অংশ হিসেবে এ এটিবি প্ল্যাটফর্ম। আশা করছি চলতি মাসের মধ্যে এই এটিবি প্ল্যাটফর্ম চালু করতে পারব। আমরা পুরোপুরি তৈরি। আর লেনদেন শুরু হলে পুঁজিবাজারের লেনদেন অনেক বাড়বে। একজন বিনিয়োগকারী স্টক ব্রোকারের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদিত প্রক্রিয়ায় এটিবিতে থাকা সিকিউরিটিজের লেনদেন সম্পন্ন হবে। সিকিউরিটিজের ধরন অনুসারে স্টক এক্সচেঞ্জ এটিবির লেনদেন প্ল্যাটফর্মের শ্রেণীকরণ করবে। এক্ষেত্রে অকশন ও নেগোসিয়েশন নামে দুটি শ্রেণি থাকবে। স্টক এক্সচেঞ্জ এটিবির সিকিউরিটিজের জন্য প্রযোজ্য সব ধরনের ফি, কমিশন ও চার্জ নির্ধারণ করবে। কমিশনের অনুমোদনক্রমে এক্সচেঞ্জ এটিবির সিকিউরিটিজের জন্য প্রতিবেদন জমা, ডিসক্লোজার ও তথ্য প্রদানের শর্তাবলি নির্ধারণ করবে।’
এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইতুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের পুঁজিবাজার ইকুইটি নির্ভর বাজার। এ বাজারের সঙ্গে মানি মার্কেটের সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে হবে। একজন উদ্যোক্তা ব্যাংকঋণের ভালো বিকল্প হিসেবে বন্ড ছেড়ে বড় প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য আসতে পারে। কারণ এখন দেশে মূল্যস্ফীতির হার আট শতাংশের কাছাকাছি। অন্যদিকে ব্যাংক ডিপোজিটের রেট ৫ থেকে ৬ শতাংশ। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারী ব্যাংকমুখী হবে না অথবা নির্ভরশীলতা কমবে। তারাও ভালো বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারমুখী হবে। আর বন্ডের বিনিয়োগ ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। তবে যেগুলো ক্ষতিকর বন্ড হবে, সেগুলো লিমিটের মধ্যে থাকবে। আমরা সেই পথে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমাদের বিকল্প বিনিয়োগ বোর্ড লেনদেনের জন্য রেডি। চলতি মাসে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে লেনদেন শুরু করব। ♦