২০২০ সালের ডিসেম্বরের পর প্রথমবারের মতো বিটকয়েনের মূল্য ২০ হাজার মার্কিন ডলারের নিচে নেমেছে। এ হিসাবে গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে ডিজিটাল মুদ্রাটির।
মূলত বিভিন্ন সরকারের আর্থিক নীতির কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সির দরপতন হয়েছে। বাজার মূল্যের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা বিটকয়েনের মূল্য গত শনিবার বিকালে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি কমে যায়। এতে এর মূল্য ১৭ হাজার ৫৯৩ ডলারে নেমে আসে। এতে গত ১৮ মাসে সবচেয়ে কম বাজারদরে পৌঁছেছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ক্রিপ্টোকারেন্সিটি।
অবশ্য শুধু বিটকয়েন নয়, অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি যেমন ইথিরিয়াম, সোলানা ও বিএনবিও ব্যাপক ধসের সম্মুখীন হয়েছে। বিটকয়েনের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথিরিয়াম। এই মুদ্রার বাজারদর এখন ১ হাজারের ঘরে। এটিও চলতি বছর ৭৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২১ সালের জানুয়ারির পর থেকে প্রথমবারের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির সামগ্রিক বাজারমূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এই ধসের ফলে বিরাট ক্ষতিতে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত কয়েক মাসে একের পর এক ধসের জেরে কার্যত দিশাহারা বিনিয়োগকারীরা। কেউ কেউ বলছেন, এই ধস আগামী দিনে আরও বড় আকার নিতে পারে।
ব্যাংক অব আমেরিকা করপোরেশনের ক্রিপ্টো ও ডিজিটাল অ্যাসেটস স্ট্র্যাটেজির প্রধান আলকেশ শাহ গত শুক্রবার বলেন, বিনিয়োগকারীরা গত বছরের লিকুইডিটি চালিত ডিজিটাল সম্পদের এই বাজারের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সতর্ক মনোভাব দেখাচ্ছেন। তবে পরিস্থিতি কঠিন হলেও এখনই আশাহত হওয়ার কিছু নেই বলেও জানান তিনি। কারণ বিনিয়োগকারীরা নগদ প্রবাহ ও লাভের পাশাপাশি সম্পূর্ণরূপে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য রোডম্যাপ তৈরি করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সির দামের পতন পুঁজিবাজার ও অন্যান্য সম্পদের দামের পতনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যংকের বা ফেডের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আর্থিক নীতিকে ক্রমশ কঠোর করে চলেছে।
অনেকে বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে নানা শ্রেণীর মানুষের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কোনো মৌলিক নীতি নেই। পুঁজিবাজারের তুলনায় ব্যাপক অস্থিরতা কাজ করে এখানে। ফলে বাবেল তৈরি হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেন্দ্র করে, যা ফেটে যেতেই এমন ভয়াবহ পতন।
অন্যদিকে ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীদের অনেকের অভিমত, বিটকয়েন কিংবা ইথিরিয়ামের দাম প্রচুর ওঠা-নামা করে এবং একসময় সর্বোচ্চ দামে গিয়ে পৌঁছয়, যা ভালো অংকের মুনাফা তৈরি করে দেয়। তাই তারা মনে করেন, এটি বিনিয়োগ করার ভালো সময় এবং এই পতন থেকে শিগগির ঘুরে দাঁড়াবে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার। বিনিয়োগকারীদের অনেকে এও বলেন, মৌলিক নীতি না থাকায় কখনও একটি কারেন্সি সেই উচ্চতা লাভ করতে পারে না। তাই সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যত এখনও অন্ধকার।
উল্লেখ্য, ক্রিপ্টোকারেন্সি একধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা এবং তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে বর্তমানে এ ধরনের মুদ্রার সংখ্যা আট হাজারের বেশি এবং এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিটকয়েন। ২০০৮ সালের শেষভাগে জাপানি নাগরিক সাতোশি নাকামোতো নামের একজন ও একদল সফটওয়্যার বিজ্ঞানী ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্ভাবন করেন। দরপতনের আগে বিশ্বে ভার্চুয়াল এই মুদ্রার বাজার দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণে পৌঁছেছিল। অন্যদিকে রেকর্ড দরপতনের আগে বিটকয়েনের মূল্য ছাড়িয়েছিল ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত।
গত বছরের শুরুর দিকে প্রথম বিটকয়েনের বিনিময়মূল্য ৫০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। একেকটি কয়েনের দাম বেড়ে যায় প্রায় ১০ হাজার ডলার। তখন কানাডার টরেন্টোর স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির সম্ভাবনা দেখা দেয়ার পর চাহিদা বেড়ে যায় এই ভার্চুয়াল মুদ্রার। ফলে প্রভাব পড়ে দামেও। বিশ্লেষকরা বলেন, বড় ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিটকয়েনে বিনিয়োগ করায় এই মুদ্রায় জনসাধারণের আস্থা বাড়ছে। এ কারণে এর দামে প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ৬৭ শতাংশ। তবে মূল ধারার অর্থনীতির জন্য একে উদ্বেগের কারণ বলে সতর্ক করছেন অর্থনীতিবিদরা। ♦