কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে অপো বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগটি তুলেছেন তাদের সাবেক এক নারী সহকর্মী। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন, অভিযোগকারী নারী।
অভিযোগকারী অপো বাংলাদেশের একটি বিভাগের ম্যানেজার ছিলেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আইনি নোটিশ পাঠানোর পর মামলার প্রক্রিয়ায় যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু নতুন চাকরি হওয়ায় সময় হয়ে ওঠেনি। আইনজীবী আমাকে মামলা ও সংবাদ সম্মেলন করতে বলেছিলেন। তবে তারা (অপো) আমাকে টাকা-পয়সা দিয়ে দেবে মর্মে এসব না করতে অনুরোধ করে। কিন্তু ঘটনার পর প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও তারা আমার টাকাও দেয়নি, ডেস্কের জিনিসপত্রও দেয়নি।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমি মামলা করিনি, কারণ আমার ডিপার্টমেন্টের অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। এইচআর-এর কর্মী চাকরি ছেড়েছেন। তার সঙ্গেও বেশ খারাপ আচরণ করা হয়েছে। আমার অভিযোগের তালিকায় সবার প্রথমে যে রয়েছে, তাকে তড়িঘড়ি করে প্রতিষ্ঠান থেকে চীনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাকিদের মধ্যে একজন চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। আর তিনজন এখনো সেখানে কর্মরত আছে। তখন করোনা মহামারি ছিল। আমিও করোনা আক্রান্ত হয়েছি। এসব কারণে দেরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অপো থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তারা আমার সঙ্গে বসতে চায়। আমি তো তাদের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্লাকবোর্ড স্ট্র্যাটেজিস বা অপো থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।
‘অপো একটা করাপ্টেড কোম্পানি। তারা ভ্যাট দেয় না, ট্যাক্স দেয় না, হুন্ডি করে টাকা দেশের বাইরে পাচার করে। কোটি কোটি টাকা তারা অথরাইজেশন ছাড়া ক্যাশ রাখে। সব জায়গায় ক্যাশ পেমেন্ট করে। এগুলো করতে চাইতাম না দেখেই আমাকে তাদের ভালো লাগেনি’, বলেন অপো বাংলাদেশের সাবেক এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, সাবেক অনেক কর্মীর টাকা তারা দেয়নি। কাগজপত্র দেয়নি। কিছু গরিব ছেলে টেরিটরি সেলস ম্যানেজার, সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে অল্প টাকায় চাকরি করে। এদের টাকাও মেরে দিয়েছে। হুমকি-ধামকি দিয়ে তাদের রিজাইন দিতে বলত। আমাকেও বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়েছে। আমার যেন কোথাও চাকরি না হয়, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। আজেবাজে কথা ছড়িয়েছে। তারা যদি এসব করতে থাকে, তাহলে আমি আবার অ্যাকশনে যাব। বেশি বাড়াবাড়ি করলে মামলার প্রস্তুতি নেব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অপো বাংলাদেশের পিআর ম্যানেজার সাকিব বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। বিষয়টি ডিল করছে তাদের পিআর প্রতিষ্ঠান।
পরে পিআর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, অন্যান্য কোম্পানির মতো আমরাও সম্পূর্ণ প্রফেশনালি বিষয়গুলো ডিল করি। কী বিষয় জানতে চাই তা জানিয়ে অফিসে ই-মেইল করতে বলেন তারা।
গত সোমবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় ই-মেইল করার পর তিনবার তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে অভিযোগের বিষয়ে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের জুনে অপো বাংলাদেশের পাঁচ কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ দেন তাদের এক সহকর্মী। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাফিজুর রহমান খান অভিযোগকারীর পক্ষে ওই নোটিশ পাঠান।
ওই নোটিশের অনুলিপি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে দেয়া হয়। নোটিশে তাকে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও যৌন নির্যাতন করার কারণে উল্লেখিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চাওয়া হয়। সেখানে তিনি অপোর কাছে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাওনার বিষয়েও ছাড়পত্র চান। নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা চান।
এছাড়া নোটিশে তিনি বলেন, তার চরিত্র হননের চেষ্টায় অপপ্রচার বা গুজব চালানো হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে গত ১৩ মে অপো বাংলাদেশের পক্ষে ব্লাকবোর্ড স্ট্র্যাটেজিস এশিয়াটিক ৩৬০ একটি বক্তব্য পাঠায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমরা তার থেকে আইনি নোটিশ পাই। এর পরপরই আমরা তার জবাব দেই। প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধিতে আমরা আমাদের প্রাক্তন কর্মীদের সাথে যেকোনো আলোচনায় আগ্রহী।’
সেখানে আরও বলা হয়, ‘আমাদের জানামতে, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইক্যুইপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডে অভিযোগকারীর চাকরির সময়কালে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং আমরা ওই সময়ে এ সংক্রান্ত কোনো নোটিশ বা অভিযোগ পাইনি। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে যেকোনো ধরনের অসদাচরণ বা হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি। আমাদের প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ ও ধর্ম নির্বিশেষে কর্মীদের জন্য সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়, যাতে প্রত্যেক কর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে নিজেদের উন্নতিতে অনুপ্রাণিত বোধ করেন।’ ♦
কৃতজ্ঞতা: ঢাকা পোস্ট