ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোয় এ যুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এসব দেশের মধ্যে অন্যতম মিশর। তবে দেশটিকে আশার বাণী শুনিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এই সংস্থা জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব থেকে মিশরকে বাঁচাতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।
আইএমএফ এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মিশরকে কঠোর অর্থনৈতিক সংকট থেকে রক্ষা করা হবে। কয়েক দিন আগে মিশরের কর্তৃপক্ষ আইএমএফের কাছে অর্থনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের অনুরোধ করে। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এমন ঘোষণা দেয়া হলো।
আইএমএফ এক বিবৃতিতে জানায়, মিশরের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশটিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। দেশটিতে খাবার, জ্বালানি ও সারের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এছাড়া যে কয়েকটি দেশ ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আমদানি করে তাদের মধ্যে রয়েছে মিশরও। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গমের সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া কোভিড-১৯ মহামারি, রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের হার বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা মোকাবিলা করছে দেশটি।
মিশরে আইএমএফের কান্ট্রি মিশনের প্রধান সেলিন অ্যালার্ড জানান, বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ মিশরের মতো দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের গম ও সূর্যমুখী তেলের ওপর নির্ভরশীলতা সর্বজনবিদিত। এ দুই পণ্যের আমদানি ব্যাহত হওয়ায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। গত মাসে মূল্যস্ফীতি বাড়ে ১০ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যের দাম বাড়ে ২০ শতাংশ।
এরই মধ্যে মিশর বাধ্য হয়ে গম আমদানির একটি দরপত্র বাতিল করেছে, যেখানে অল্প কিছু প্রস্তাব এসেছিল। তবে এর দাম ছিল তুলনামূলক বেশি।
অ্যালার্ড বলেন, ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত নীতি হয়তো মিশরের অর্থনীতিকে এই ধাক্কা সামলে উঠতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে আমাদের সহায়তা দেশটির স্থিতি বজায় রাখতে ও মধ্যমেয়াদি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমরা সামাজিক সুরক্ষা ও বিনিময় হার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছি।
তবে মিশরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পেছনে আইএমএফকে অনেক অর্থনীতিবিদ দায়ী করেন। সমস্যাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বলে জানান তারা। তারা বলেন, ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। ওই সময় আইএমএফের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক সংস্কার আনা হয়। এর পর থেকে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। আইএমএফের পরামর্শে অনেক উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নেয় দেশটি। তখন প্রায় ১১ বিলিয়ন ইউরো ঋণ সহায়তা দেয় সংস্থাটি। পরে ২০২০ সালে আবার ৫৪০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা অনুমোদন করা হয়। তখন কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এ সহায়তা দেয়ার কথা জানায় সংস্থাটি।
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে গত সোমবার (২১ মার্চ) মিশরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ায়। ২০১৭ সালের পর এবারই প্রথম এমন পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কভিড ও যুদ্ধের কারণে তেলের দাম রেকর্ড বেড়ে যাওয়ায় এ মূল্যবৃদ্ধি বলে এক বিবৃতিতে জানায় ব্যাংকটি।
প্রসঙ্গত ইউক্রেন নিয়ে সংকট শুরুর পর তেলের দাম বাড়তে বাড়তে চলতি মাসে ১৪০ ডলারে পৌঁছায়। যদিও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নেয়া হয় নানা উদ্যোগ, কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। যুদ্ধের কারণে গত সাত বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। তবে সেই পরিস্থিতি বিশ্ববাজার সামলে উঠলেও এর রেশ রয়ে গেছে মিশরে।
ব্যাংক তাই মনে করে, আইএমএফের নতুন অর্থ সহায়তা পেলে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে এবং বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হবেন। ♦