১৯৫০ সালের পর জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে জীবনযাত্রার মান সর্বনিম্ন

0

১৯৫০ সালের পর চলতি বছর যুক্তরাজ্যে জীবনযাত্রার মান সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর বৈশ্বিক পর্যায়ে জ্বালানিশক্তির দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে যুক্তরাজ্যের জীবনযাত্রায়ও। পাশাপাশি দেশটির জাতীয় আয় কমেছে তিন দশমিক এক শতাংশ।

ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিদরা আগে থেকে সোচ্চার ছিলেন। গত মাসে তারা জানিয়েছিলেন, ইউরোপে যুদ্ধ বাধলে তার প্রভাব পড়বে আশপাশের দেশগুলোয়। তাদের সেই পূর্বাভাস বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাইকারি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়তে থাকায় পণ্যের দাম আরও বাড়বে। এতে পরিবারগুলোর ওপর বাড়তি চাপ পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। কেননা এরই মধ্যে ইউটিলিটি বিলের দাম বেড়ে গেছে।

ব্যাংক অব আমেরিকার বিশ্লেষকরা বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে নাগরিকদের প্রকৃত আয় গত বছরের তুলনায় তিন দশমিক এক শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। এ হিসেবে ১৯৫৬ সালের পর সর্বোচ্চ আয় কমছে দেশটির নাগরিকদের। সে বছর সুয়েজ সংকটের কারণে বার্ষিক আয় কমে।

এছাড়া ১৯৭০ সালে তেলের ব্যাপক দরপতনের পর যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তা প্রত্যক্ষ করছে দেশটি। বিশেষ করে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউরোপজুড়ে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে যুক্তরাজ্যে।

আগেই বলা হয়েছিল, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে বিশ্বে অপরিশোধিত তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তবে সপ্তাহের শুরুর দিনের তুলনায় গত শুক্রবার গ্যাসের দাম কম ছিল।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, উত্তেজনা না কমলে বেড়ে যাবে গ্যাসের দাম।

উত্তেজনার কারণে বিশ্ব পুঁজিবাজারে ধস নামলেও হামলার পরের দিন শুক্রবার ইউরোপের পুঁজিবাজারে উত্থান দেখা গেছে। এদিন এফটিএসই ২৬০ পয়েন্ট বা তিন দশমিক ছয় শতাংশ বেড়ে যায়।

চলতি মাসে যুক্তরাজ্যজুড়ে ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বেড়েছে। দেশটির অটোমোটিভ পরিষেবা সংস্থা আরএসি জানায়, চলতি সপ্তাহে চতুর্থবারের মতো রেকর্ড বেড়েছে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম। তাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রথমবারের মতো লিটারপ্রতি পেট্রোলের দাম ১৫০ পাউন্ড ছাড়িয়ে গেছে, আর ডিজেলে দাম বেড়ে হয়েছে ১৫৩ পাউন্ড। ১৯৯২ সালের পর যা সর্বোচ্চ।

এর আগে গত মাসে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অর্থনৈতিক স্থবিরতা দেখা দিলে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ বাড়ে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম।

রাশিয়ার আগ্রাসনের আগে দ্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ড পূর্বাভাস দিয়েছিল, যুক্তরাজ্যে আসছে এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি সাত শতাংশ বাড়তে পারে। তবে ইউক্রেন সংঘাতের কারণে এই মূল্যস্ফীতি বেড়ে আট শতাংশ হতে পারে এবং বছরজুড়ে তা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ব্যাংক অব আমেরিকার পূর্বাভাস বলছে, বছরের শেষ প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে।

ব্যাংকটিতে কর্মরত যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিদ রবার্ট উড বলেন, জ্বালানি খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আজ হয়তো পণ্যের দাম কমে গেল, এতে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে না। কেননা হুট করে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে এবং এটাই দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে, প্রকৃত আয়েও পতন দেখা যায়। এ কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশটির নিম্নআয়ের পরিবারগুলো। দুর্বল ভোক্তা ব্যয়ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তা অর্থনীতিকে ধীরগতির করে দেয়। তখন ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে পারে এবং এতে জীবনযাত্রার সংকট আরও বাড়তে পারে।

থিংকট্যাংক গ্রুপ রেজ্যুলেশন ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী টরস্টেন বেল বলেন, সংঘাত দীর্ঘায়িত হতে পারে। এ কারণে জীবনযাত্রার মান আরও কমবে। এমনকি বছরের শেষ প্রান্তিকে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলোর এই ক্রমবর্ধমান চাপ থেকে অবকাশ পাওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পাচ্ছে।

Share.