সুপরিচিত ও সুস্বাদু ফল খেজুর। যার মধ্যে শরীরের জন্য আশ্চর্যজনক উপকারিতাও রয়েছে। খেজুর যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টি গুনেও সমৃদ্ধ।
নিজেকে সুস্থ ও সচল রাখতে খেজুর খাওয়া খুব জরুরি। নিয়মিত খেজুর খেলে প্রাণশক্তি বাড়ে এবং অদম্য মনোবল ও তৈরি হয়।
খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। অন্যান্য ফলের চেয়ে খেজুরের উপকারিতা অনেক বেশি।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ছাড়াও খেজুরে রয়েছে ভিটামিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক। খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে।
পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের অনেকটাই খেজুর থেকে আসে। আমাদের ক্লান্ত শরীরে যথেষ্ট পরিমন শক্তির জোগান দিতে সক্ষম এই খেজুর।
খেজুর চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা হয়, কারণ এটি চিনির মতো ক্যালোরি বাড়ায় না।
-উপকারিতা-
* রোগ প্রতিরোধক্ষমতা- খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। খাদ্যাভ্যাসে এই উপাদানটি থাকলে ক্যান্সারসহ আরও অনেক দূরারোগ্য ব্যাধির ঝুঁকি কমে যায়।
* কোলেস্টেরল ও ফ্যাট- খেজুরে কোন কোলেস্টেরল এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাট থাকে না। ফলে আপনি যখন সহজেই খেজুর খাওয়া শুরু করবেন তখন অন্যান্য ক্ষতিকর ও চর্বি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে পারবেন। এতে শরীরের বাড়তি ওজন কমে। যারা চিনি খান না তারা খেজুর খেতে পারেন। চিনির বিকল্প খেজুরের রস ও গুড়।
* খেজুরের মধ্যে রয়েছে পটাসিয়াম। এটি খেলে বিপি নিয়ন্ত্রণে থাকে যা স্ট্রোক, কোলেস্টেরল ও হার্টের রোগ থেকেও রক্ষা করে। প্রতিদিন প্রায় দুটি খেজুর খাওয়া উচিত।
* কর্মশক্তি বাড়ায়- খেজুর বিভিন্ন ভিটামিনের উৎস। খেজুরে রযেছে ভিটামিন বি ১, বি ২, বি ৩, বি ৫, এ ১ ও সি। এটি আমাদের সুস্থ রাখার পাশাপশি দ্রুত শক্তি বাড়াতে ও সাহায্য করে। কারণ খেজুরে আছে গ্লুকোজ, সুক্রোজ এবং ফ্লুক্টোজের মতো প্রাকৃতিক শর্করা। সেই সঙ্গে খেজুরে দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়, ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে ।
* আয়রনের অভাব দূর করে- খেজুরে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা যারা হিমোগ্লোবিনের অভাবে ভুগছেন তাদের খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আয়রনের অভাবজনিত কারণে রক্তস্বল্পতা, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা হতে পারে। এসব সমস্যা দূর করে খেজুর। এছাড়া এটি রক্ত পরিশোধন করে। খেজুরে থাকা ফ্লোরিন আমাদের দাঁত সুস্থ রাখতে কাজ করে।
* কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে ও হজমে সাহায্য করে- খেজুরে রয়েছে উচ্চ ফাইবার। ফলে খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। খেজুর হজমে ও সাহায্য করে। তবে সারা রাত জলে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
* স্নায়ুতন্ত্র ঠিক রাখে- খেজুরে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। বিশেষ করে স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এই উপাদান। এতে অল্প সোডিয়ামও থাকে যা আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে ঠিক রাখে।
* হাড় গঠনে সহায়ক- খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড় মজবুত করে। খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে।
* সংক্রমণ- যকৃতের সংক্রমণের হাত থেকে খেজুর রক্ষা করে। এছাড়া গলা ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি ও ঠাণ্ডায় খেজুর উপকারী। খেজুর অ্যালকোহল জনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী।
* ত্বক টানটান করে- অনেক সময়ে বয়স বাড়ার ফলে মুখের চামড়া কুঁচকে যায়। খেজুরে ভিটামিন বি রয়েছে, যা ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভেজানো খেজুর নিয়মিত খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
-সতর্কতা-
এত উপকারীতা জেনে অতি পরিমানে খেজুর খাওয়া ঠিক নয়। সব কিছুই পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিত। খেজুর শরীরে রক্তে সুগার বাড়িয়ে তুলতে পারে তাই এটি বেশি পরিমাণে খাবেন না এবং যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের কেবল ডাক্তারের পরামর্শে নিয়ে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত খেজুর পেটে ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে। ♦