আছাড় দিলেও ভাঙবে না মোবাইল ফোন

0

মোবাইল ফোন পড়ে গেলেও ভাঙবে না, ভূমিকম্পেও খুব একটা ক্ষতি হবে না ভবনের কাঠামোর, পানিতে মরিচা ধরবে না লোহায়, অথচ এই পদার্থটি হবে প্লাস্টিকের থেকেও হালকা যার ফলে যেকোনো বস্তু বা যেকোনো যন্ত্র টিকবে আরও অনেকদিন। এমন এক পদার্থ তৈরি করা এতকাল ধরে মানুষের স্বপ্ন ছিল।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, এমন পদার্থ তৈরি করা কার্যত অসম্ভব।

কিন্তু আগের বদ্ধমূল ধারণা দুমড়েমুচড়ে দেয়াই বিজ্ঞানীদের কাজ। আপাতদৃষ্টিতে ‘অসম্ভব’ এমন একটি কাজকে বাস্তবে রূপ দিলেন তারা।

একসময় ভাবা হতো প্লাস্টিকের থেকেও হালকা অথচ স্টিলের থেকেও মজবুত- এমন পদার্থ তৈরি করা অসম্ভব। কিন্তু এমআইটির গবেষকরা এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন।

এমআইটির গবেষকরা এমন এক পদার্থ তৈরি করেছেন, যার স্থিতিস্থাপকতা স্টিলের থেকেও দ্বিগুণ, কিন্তু প্লাস্টিকের চেয়ে হালকা। এ ছাড়া এ পদার্থের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা বুলেটপ্রুফ গ্লাসের ৬ গুণ।

শুধু তা-ই নয়, এ পদার্থ প্রচুর পরিমাণে তৈরি করা সম্ভব। আর ব্যবহার করা যাবে নানা জিনিস তৈরিতে। হাতে থাকা সেলফোন থেকে শুরু করে গাড়ি, বিল্ডিং স্ট্রাকচার এমনকি ব্রিজেও ব্যবহার করা যাবে নতুন বানানো এই পদার্থ।

যেকোনো বস্তুকে নতুন আবিষ্কৃত এই পদার্থের আবরণে মুড়িয়ে দিলে তা হবে আরও মজবুত। কিংবা প্রয়োজনীয় বস্তুটিই তৈরি করে নেয়া যাবে এটি দিয়ে।

এ-সংক্রান্ত গবেষণার একজন জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল স্ট্রানো বলেন, ‘প্লাস্টিককে আমরা সাধারণত এমন কোনো পদার্থ মনে করি না, যা আপনি বিল্ডিং স্ট্রাকচারে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এই পদার্থ দিয়ে আপনি অনেক কিছুই করতে পারবেন। এর খুব অস্বাভাবিক কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আমরা এ নিয়ে বেশ উত্তেজিত।’

এমআইটির গবেষকরা যুগান্তকারী এই উপাদান তৈরিতে নতুন ধরনের পলিমারাইজেশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করেছেন। সব প্লাস্টিকই হলো পলিমার, যা মনোমার নামক বিল্ডিং ব্লকের চেইন দিয়ে তৈরি।

নতুন অণুগুলো পলিমার ব্লকের চেইনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তাদের বৃদ্ধি করা হয় ও পরবর্তী সময়ে তাদের ত্রিমাত্রিক বস্তুতে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিকের বোতল এবং আমাদের আশপাশে থাকা অন্যান্য প্লাস্টিকের তৈরি উপাদান।

নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এ অসাধ্য সাধন করেছেন। তারা একটি দ্বিমাত্রিক শিট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যাকে পলিরামাইড বলা হচ্ছে। সেখানে নতুন উপাদান ডিস্ক আকারে গাদাগাদি করে রাখা হয়। ফলে তা হয়ে যায় খুবই স্থিতিশীল, শক্তিশালী ও হালকা।

স্প্যাগোটির মতো অণু তৈরি করার পরিবর্তে শিটের মতো আণবিক সমতল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যেখানে বিজ্ঞানীরা দ্বিমাত্রিক অণুগুলোকে একসঙ্গে যুক্ত করতে পারেন।

এই পদ্ধতিতে প্রকৌশলীরা বেশি করে উপকরণ দিলে এই পদার্থ বেশি করে তৈরি হবে।

শুধু এটির স্থিতিস্থাপকতাই বেশি নয়, যেকোনো গ্যাসীয় উপাদান থেকেও এটি কোনো বস্তুকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। বস্তুর ওপর এই উপাদানের প্রলেপ সেই বস্তুকে বাইরের উপাদান থেকে সুরক্ষা দেবে। যেমন- লোহায় মরিচা পড়ে। এর ক্ষেত্রে এমনটি হবে না।

অধ্যাপক স্ট্রানো বলেছেন, ‘এটি দিয়ে অতি পাতলা আবরণ তৈরি করা যায়, যা পানি ও গ্যাসকে সম্পূর্ণরূপে আটকাতে পারে। এই ধরনের আবরণ গাড়ি এবং অন্যান্য যানবাহন বা ইস্পাত কাঠামোর ধাতুকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।’

Share.