ডায়াবেটিস সামিট ২০২১ উপলক্ষ্যে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএডিএএস) একটি বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করেছে। বিশ্ব ডায়াবেটিস কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গতকাল রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বলরুমে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ডায়াবেটিস সামিটে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ফার্মাসিউটিক্যালস একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা অ্যাপ হেলথএইড উদ্বোধন করে।
এর মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীসহ সবাই প্রযুক্তির সাহায্যে সহজে চিকিৎসা ও শরীরের অবস্থা জানতে পারবেন। তাছাড়া এ অ্যাপের মাধ্যমে ভিডিওকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন।
সেমিনারের ডায়াবেটোলজি ও অ্যান্ডোক্রিনোলজির ক্ষেত্রে প্রখ্যাত বক্তারা সাম্প্রতিক আপডেটের উপর উপস্থাপনা তুলে ধরেন। ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডিসিইসির ডায়াবেটিস ও অ্যান্ডোক্রাইন ডিজিজ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ইমেরিটাস হাজেরা মাহতাবের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের মার্কেটিং বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক মো. এ কে আজাদ খান।
বক্তা ছিলেন বারডেম একাডেমীর পরিচালক প্রফেসর মো. ফারুক পাঠান, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র কনসালটেন্ট প্রফেসর ডা. এস এম আশরাফুজ্জামান, বারডেমের অ্যান্ডোক্রিনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফিরোজ আমিন, বারডেমের ইউনিট হেড ও সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া আফসানা।
বিআইএইচএসের সহযোগী অধ্যাপক ও পরামর্শক ডায়াবেটিস ও অ্যান্ডোক্রিনোলজি ডা. নাজমুল কবীর কোরেশীর সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের সেলস ও ডিস্ট্রিভিশন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মোঃ ফেরদৌস খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এছাড়া সেমিনারে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা এবং ডায়াবেটিসকে পরাজিত করার বিষয়ে তাদের মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি শেয়ার করেন।
প্রফেসর মোঃ ফারুক পাঠান বলেন, “অ্যাকসেস টু ডায়াবেটিস কেয়ার”- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে আমরা এবারের ডায়াবেটিস দিবসে সচেতনতা শুরু করেছি। দেখা যায়, অসচেতনতার কারণে পুরো বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন। একই সঙ্গে আমাদের দেশের রোগীর সংখ্যাও ভয়াবহ। আমরা স্বল্প মূল্যে এই রোগের চিকিৎসার জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সেই সঙ্গে আশা করবো আমাদের সঙ্গে দেশের সব ওষুধ কোম্পানি এগিয়ে আসবে।
ডায়াবেটিস এখন একটি মহামারি। এ রোগের অত্যধিক বিস্তারের কারণে সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রতিটি পরিবারকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। এ বিষয়ে সরকার, চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষক, ধর্মগুরু, সমাজকর্মী ও সাংবাদিকসহ সবাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি পাঁচজনে একজন পরিবারের সদস্য ডায়াবেটিস সম্পর্কে অবহিত। তাছাড়া বিশ্বে এখনো ৭৫ শতাংশের বেশি পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিসের তীব্রতা, নিয়ন্ত্রণ ও তার ভূমিকা নিয়ে সচেতন করা বাকি।
একমির ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা হেলথইড অ্যাপের নানা তথ্য, গৃহীত কৌশল ও সমাধানগুলোর সঠিক চিকিত্সা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাকে কমিয়ে স্বভাবিক জীবনের দিকে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এ অ্যাপের মাধ্যমে অনেক খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যাবে। ফলে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসে যে কোনো চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন রোগীরা। ইতোমধ্যে বিশ্বমানের ও ওরাল অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধ তৈরির জন্য পুরো বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে একমি।
সেমিনারের প্রধান অতিথি বক্তব্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক মো. এ কে আজাদ খান বলেন, সময়োপযোগী একটি সেমিনার করার জন্য ধন্যবাদ জানাই একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডকে। আমাদেরকে সবসময় সচেতন থাকতে হবে এই ডায়াবেটিস সম্পর্কে। কারণ দেশের অধিকাংশ মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হয়। তবে এই রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্ত না হলেও আমাদের সচেতনতাই রক্ষা করবে। ফলে আমরা সবাই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন থাকবো।
মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বলেন, “ডায়াবেটিস রোগীদের জীবন সহজ করতে এবং পরামর্শকারী চিকিত্সকের সাথে একটি সেতু তৈরি করতে আমরা ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী অ্যাপ হেলথএইড চালু করতে পেরে গর্বিত। বর্তমান ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে আমরা সবাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে অভ্যস্ত। আমাদের দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তি ছাড়া আমরা দৈনন্দিন কার্যকলাপ কল্পনা করতে পারি না। একজন ডায়াবেটিস রোগীকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে লেগে থাকতে হয়, যেমন প্রতিদিনের স্ব-নিরীক্ষণ, সতর্কতার সাথে ওষুধ খাওয়া এবং নিয়মিত রক্তে শর্করা, রক্তচাপ কমানো। আর এইসব করতে সার্বিক সহায়তা করবে আমাদের ডিজিটাল অ্যাপ। এছাড়াও একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড লাইফ স্টাইল পরিবর্তন, স্ব-নিরীক্ষণ এবং রোগীর ক্ষমতায়নের জন্য সচেতনতা বাড়াতে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে।” ♦