যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের পরবর্তী মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এরিক অ্যাডামস। দেশের সর্ববৃহৎ শহরটির নেতৃত্বভার পাওয়া দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ তিনি।
নিউ ইয়র্কের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র ছিলেন ডেভিড ডিনকিন্স। প্রায় ৩০ বছর আগে ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত শহরটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের পর সবচেয়ে জটিল হিসেবে বিবেচিত নিউ ইয়র্কের মেয়রের পদটি। ৮০ লাখের বেশি মানুষের মেয়র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম পৌরসভা বাজেট, সর্ববৃহৎ পুলিশ বাহিনী আর সরকারি স্কুলব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে হবে অ্যাডামসকে।
নির্বাচনে বড় ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস সিলওয়াকে হারিয়েছেন ৬১ বছর বয়সী অ্যাডামস।
ভোট শেষ হয় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে। প্রাথমিক ফলে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে মধ্যপন্থি এই ডেমোক্র্যাট নেতার ঝুলিতে।
জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়া প্রগতিশীল নেতা বিল ডি ব্লাসিও স্থলাভিষিক্ত হবেন এরিক অ্যাডামস। আগামী ৩১ ডিসেম্বর মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় ও শেষ মেয়াদ পূর্ণ হবে ব্লাসিওর।
ব্রুকলিনের দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা অ্যাডামসের জয়কে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে।
১৯৬০ সালে জন্ম নেয়া অ্যাডামসের মা ছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, বাবা ছিলেন কসাই। কিশোর বয়সে অপরাধী চক্রের সদস্য এরিক অ্যাডামস পুলিশের মারও খেয়েছিলেন একসময়। তখনই পুলিশ বাহিনীর সদস্য হওয়ার জেদ চাপে তার। পুলিশে ঢুকে দেখেছেন বাহিনীটিকে আমূল পরিবর্তনের স্বপ্ন।
১৫ বছর বয়সে নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের দুই কর্মকর্তা অ্যাডামসকে গ্রেপ্তারের পর পিটিয়েছিল। বিচারবহির্ভূতভাবে পেটানো মানুষগুলোকে উপযুক্ত জবাব দিতে পুলিশে যোগ দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে নিজের পরবর্তী জীবন গুছিয়ে নিতে শুরু করেন অ্যাডামস।
আশির দশকের মাঝামাঝিতে পুলিশে যোগ দেন তিনি। ২২ বছর দায়িত্ব পালনের পর হন ক্যাপ্টেন।
১৯৯৫ সালে অ্যাডামস ‘হান্ড্রেড ব্ল্যাক্স ইন ল এনফোর্সমেন্ট হু কেয়ার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পুলিশ বাহিনীতে এখনও পর্যন্ত বিদ্যমান বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক লড়াই গড়ে তুলতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
২০০৬ সালে পুলিশ বিভাগ থেকে অবসরে যান অ্যাডামস। পরে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালনের পর শুরু করেন মেয়র হওয়ার তৎপরতা, যা সাফল্যের মুখ দেখল দীর্ঘ আট বছর পর।
কেন্দ্রে নিজের ভোটটি দিয়ে অশ্রুসজল অ্যাডামস বলেন, ‘আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি বলেই নিউ ইয়র্কের প্রতিটি মানুষ এ শহরে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে শিখবে। আমার মতো ছোট্ট মানুষই এটি সম্ভব করে দেখাবে।’
কোভিড-১৯ মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার অ্যাডামসের সামনে আপাতত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনায় ৫৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রাজ্যে; বন্ধ হয়ে গেছে ছোট-বড় হাজারো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ♦