মিউচুয়াল ফান্ড অনেক ভালো পারফর্ম করছে। এতে আমরা খুশি। খাতটিকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে চাই। এজন্য আমরা সেবক হিসেবে যত সুযোগ-সুবিধা দেয়া দরকার, তার সব দিতে চাই। কারণ পুঁজিবাজারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ডের ভূমিকা।
এমন মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডস (এএএমসিএমএফ) আয়োজিত ‘ইনস্টিটিউশনাল রোল ইন সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এএএমসিএমএফের সভাপতি ড. হাসান ইমাম।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এ বাজারের স্টেবলে মিউচুয়াল ফান্ডের মতো দক্ষ ও শিক্ষিত জনবল আর কোথাও পাওয়া যায় না। এ কারণে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের দায়িত্বরতদের প্রতি আমাদের আকাঙ্ক্ষা অনেক।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ড. মিজানের ভাষ্য অনুযায়ী মিউচুয়াল ফান্ডের আকার মাত্র ১৫ হাজার কোটি টাকা। এত ছোট কেন হবে? সবাইকে এই ১৫ হাজার কোটির আকারকে কীভাবে দেড় লাখ কোটিতে নেয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আপনারা আমাদের বলেন, কী করতে হবে, কোথায় সমস্যা? আমরা আপনাদের আইনগতভাবে সব সহযোগিতা করব।
মিউচুয়াল ফান্ডের প্রচার না থাকা সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ খাতের কোনো প্রচার নেই। চলতি বছর ফান্ডগুলো অনেক ভালো রিটার্ন দিয়েছে। তারা অনেক ভালো করছে, যাতে আমরা খুশি। আমরা চাচ্ছি খাতটি উন্নতি করার যে সঠিক সময় যাচ্ছে, সেই সুযোগটি নিতে।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহেও মিউচুয়াল ফান্ড খাত নিয়ে কমিশন সভায় বসেছিল। কীভাবে এ খাতকে সহযোগিতা ও দশগুণ আকার করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতেই বসেছিল। তাই আশা করব আপনাদের কী সহযোগিতা দরকার, তা বলবেন।
অনুষ্ঠানে এএএমসিএমএফের সভাপতি ও বাংলাদেশ রেস ম্যানেজমেন্টর সিইও ড. হাসান ইমাম বলেন, পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিনিয়োগের খাত। দেশের পুঁজিবাজারে এ সেক্টরের বড় সম্ভাবনা রয়েছে।
ড. হাসান ইমাম বলেন, এ বছর অবশ্যই মিউচুয়াল ফান্ড ভালো করেছে। ডিভিডেন্ড গেইন হিসেবে এ বছর ইকুইটি বা শেয়ারভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্মিলিভাবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে, যেটা বর্তমান কমিশনের বড় কৃতিত্ব। কারণ তারা আমাদের ভালো লভ্যাংশ দিতে উত্সাহিত করেছেন। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ‘এ’ ক্যাটেগরির বড় ও মাঝারি কোম্পানির শেয়ারে সিংহভাগ বিনিয়োগ করছে। আর ফান্ডগুলোর পোর্টফোলিওতে গড়ে ৩০ থেকে ৫০টি কোম্পানির শেয়ার থাকে।
কাজেই একটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে ব্রড ডাইভারসিফিকেশন পাওয়া যাচ্ছে, যা নিজের পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে সাসটেইনেবল ইনভেস্টমেন্টের শর্ত কোয়ালিটি ইনভেস্টমেন্ট বিবেচনায় মিউচুয়াল ফান্ড ভালো মার্ক পাবে। বিনিয়োগকারীরা একটু যাচাই-বাছাই করে দেখবেন, মিউচুয়াল ফান্ডের পোর্টফোলিওতে ‘এ’ ক্যাটেগরির শেয়ারের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। সাসটেইনেবিলিটির হিসেবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বড় ও মাঝারি মূলধনের কোম্পানিতে গভর্ন্যান্স, বিজনেস সাসটেইনেবিলিটি সবচেয়ে বেশি পালন করা হয়ে থাকে।
এএএমসিএমএফের প্রেসিডেন্ট বলেন, বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন মিউচুয়াল ফান্ডে ভালো ক্যাপিটাল গেইন দিতে পারছে না। কিন্তু তথ্য কিন্তু সেটা বলছে না। তথ্য বলছে, গত অর্থবছর ডিএসইর বেঞ্চমার্ক ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) বিবেচনায় ব্যাংক বা আর্থিক খাতের শেয়ারের চেয়ে মিউচুয়াল ফান্ডে ভালো ক্যাপিটাল গেইন পেয়েছে। সেদিক বিবেচনায় ডিভিডেন্ড ও ক্যাপিটাল গেইন মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা ভালো মুনাফা করেছেন। ফলে মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা সবচেয়ে নিরাপদ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী।
আলোচক ছিলেন সিডব্লিউটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের এমডি মোনিজা চৌধুরী এবং অ্যালায়েন্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিইও ও এমডি খন্দকার আসাদুল ইসলাম। ♦