দেহের একটি ছোট অঙ্গ হৃৎপিণ্ড। এটি আকারে ছোট। ভেতরে ফাঁপা। হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলোর প্রয়োজন নিজস্ব রক্তের সরবরাহ। এছাড়ার দেহের বাকি অংশের মতো হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টির দরকার।
হৃদযন্ত্র করোনারি ধমনীর মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। হৃৎপিণ্ড যখন তার কাজ ঠিকমতো করতে পারে না, তখন হার্ট ফেইলর হয়।
একজন ব্যক্তির শ্বাস যতক্ষণ চলে ততক্ষণ তার হৃদস্পন্দনও চলতে থাকে। যখন তার শ্বাস-প্রশ্বাস থেমে যায়, তখন হৃদস্পন্দনও থেমে যায়। আর তখনই ওই ব্যক্তিকে মৃত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যখন হৃৎপিণ্ডের রক্তের ধমনীর ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় তখন রক্ত প্রবাহ না হওয়ায় হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।
কারণ
* যদি কোনো ব্যক্তির এক বা একাধিক হৃৎপিণ্ডের রক্তের ধমনী বিকল হয়ে পড়ে তখন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় করোনারি আর্টারিজ ডিজিজ।
* কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থ হৃৎপিণ্ডকে প্রভাবিত করে। যেখানে প্লেগ ফেটে যায়, সেখানে রক্ত জমাট বাঁধে যায়। রক্ত জমাটের কারণেও হার্ট অ্যাটাক হয়।
* হৃদপিণ্ডের ধমনী ফেটে যাওয়ার কারণেও হার্ট অ্যাটাক হয়।
* করোনারি আর্টারি স্প্যাম রক্তের পেশীগুলোকে প্রভাবিত করে। এ কারণে রক্ত হৃদপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। তাই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
মারাত্মক লক্ষণ
* বুক জ্বালা করা
* মাথা ঘোরানো
* শ্বাসকষ্ট
* পেটে ব্যথা
* ক্লান্ত হয়ে পড়া
* বুকে চাপ অনুভব করা
* গলায় প্রচণ্ড ব্যথা
* স্ট্রেস অথবা ভয় পাওয়া
* হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি
* হাত, মুখ, পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
নারীদের বেলায়
পুরুষদের মতো নারীদেরও পিঠ ও ঘাড়ে ব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়া পেটের সমস্যাসহ ক্লান্তি, হালকা মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরানোর সমস্যা দেখা দিতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের কয়েক সপ্তাহ আগে নারীদের ফ্লু বের হতে পারে এবং অনিদ্রা দেখা দিতে পারে।
দ্রুত করণীয়
* জরুরি ভিত্তিতে অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
* হার্ট অ্যাটাকের পরপরই রোগীকে শক্ত জায়গায় হাত-পা ছড়িয়ে শুইয়ে দিন। গায়ের জামা-কাপড় ঢিলা করে দিতে হবে।
* রোগীর শরীরে বাতাস চলাচলের সব রাস্তা উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যাতে রোগী গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন।
* হার্ট অ্যাটাকের পর যদি রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তাকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে হবে।
* রোগী বমি করলে তাকে একদিকে কাঁত করে দিন। যাতে সহজে বমি করতে পারে।
* হার্ট অ্যাটাকের পর হৃৎপিণ্ডের রক্তের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বাজারে প্রচলিত ৩০০ মিলিগ্রাম ডিসপ্রিন (অ্যাসপিরিন), ৩০০ মিলিগ্রাম ক্লোপিডোগ্রেল, ৪০ মিলিগ্রাম অ্যার্টভাস্টাটিন ও ৪০ মিলিগ্রাম ওমিপ্রাজল খেয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
প্রতিকার
* হৃদরোগের প্রধান শত্রু হচ্ছে ধূমপান। তাই ধূমপান থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকুন।
* ধূমপানের মতো মাদক সেবনও হৃদরোগের আরেকটি কারণ। তাই সব ধরনের মাদকদ্রব্য পরিহার করা উচিত।
* অযথা দুঃশ্চিন্তা করবেন না। নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখতে মেডিটেশন বা ইয়োগা করুন।
* মাঝে মাঝে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং সে অনুযায়ী চলার চেষ্টা করুন।
* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এজন্য নিয়মিত হাঁটা-চলা ও ব্যায়াম করে নিজেকে সুস্থ রাখুন।
* প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ♦