হোমিওপ্যাথিক ও ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রিধারীদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ শব্দ ব্যবহার বৈধ নয় :বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।উচ্চ আদালত দেশের এসব বিকল্প চিকিৎসা নিয়ে আলাদা একটি মন্ত্রণালয় করার পরামর্শ দিয়েছেন।
আজ এ সংক্রান্ত রায়টি এসেছে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে।
৭১ পৃষ্ঠার লিখিত রায়ে এ সংক্রান্ত জারি করা রুলটি খারিজ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে চার দফা পরামর্শ দিয়েছেন আদালত।
রায়ে বিকল্প চিকিৎসা নিয়ে বলা হয়, বিকল্প এ চিকিৎসা পদ্ধতি পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন। সুতরাং পাঁচ হাজার বছর ধরে সমগ্র পৃথিবীতে চলে আসা প্রাচীন বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির যথাযথ এবং সঠিকভাবে পঠন এবং প্রশিক্ষণ জনমানুষের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করবে।
প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি তথা পশ্চিমা চিকিৎসা পদ্ধতি আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া শুরু হয় আজ থেকে মাত্র ১৬২ বছর আগে। পৃথিবীর প্রথম প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির আইনটির নাম “The Medical Act, 1858” যা ইংল্যান্ডের সংসদ পাস করেছিল। অর্থাৎ ১৮৫৮ সালের আগে চিকিৎসা ব্যবস্থা আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ছিল না। অপরদিকে পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে মানুষ বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে আসছে।
অপরদিকে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪০ অনুযায়ী, ‘আইনের দ্বারা অরোপিত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যেকোনো পেশা গ্রহণের অধিকার তার মৌলিক অধিকার।’
একজন নাগরিক প্রচলিত চিকিৎসক হবেন না বিকল্প ধারার চিকিৎসক হবেন এটি তার মৌলিক অধিকার। সুতরাং বিকল্প ধারার কিংবা প্রচলিত চিকিৎসক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো প্রস্তুত করে দেয়া সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
আদালতের পরামর্শ
উচ্চ আদালতের ভাষ্য, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চিকিৎসা পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এ কারণে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো।
এক. ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘কাজাখস্তান ঘোষণা’ থেকে ‘আলমাআতা ঘোষণা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সার্বিক পরিকল্পনা, নীতিমালা এবং প্রয়োজনীয় আইন দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে।
দুই. সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তথা প্রচলিত এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ‘রোগীকেন্দ্রিক চিকিৎসা সেবা’ নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
তিন. প্রয়োজনে বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির আলাদা মন্ত্রণালয় তথা ‘Ministry of Ayush Government of India’-এর আদলে বাংলাদেশের একটি আলাদা মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করার পরামর্শ দেয়া হলো।
চার. বিকল্পধারার চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কিত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সেবার মান নির্ধারণ ও উন্নয়ন এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা শাস্ত্র সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং প্রদত্ত ডিগ্রিগুলোকে স্বীকৃতি দেয়ার পদ্ধতি নির্ধারণের পরামর্শ দেয়া হলো।
হোমিও ও ইউনানি ডিগ্রিধারীরাও তাদের নামের আগে ডাক্তার ব্যবহারের বৈধতা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিল। ওই রিটের পর আদালত রুল জারি করেছিলেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে রুলটি খারিজ করে দেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও অ্যাডভোকেট খোন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন। অপর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম। ♦