সুদের হার ২৫০ বেসিস পয়েন্ট কমাল শ্রীলঙ্কা

0

র্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। মূল্যস্ফীতি তুলনামূলক সহনীয় হয়ে আসায় এবার মূল সুদের হার ২৫০ বেসিস পয়েন্ট বা আড়াই শতাংশ কমিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটি।

এর মাধ্যমে চরম অর্থনৈতিক সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেশটি যে ফের প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে প্রস্তুত হচ্ছে, তারই বার্তা মিলছে।

ঋণের বিপরীতে সুদের হার কমানোর যে নির্দেশনা গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে, তাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস পাওয়া গেছে।

রাজাপক্ষে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার জন্য দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়।

জনগণের বিক্ষোভের পর গত জুনে রনিল বিক্রমাসিংহের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাজাপক্ষে সরকার। সেই থেকে তিনি একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও অর্থমন্ত্রী উভয় পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।

দায়িত্ব নেওয়ার পরপর ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে জরুরি ভিত্তিতে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ২৯০ কোটি ডলার ঋণের (বেইলআউট) আবেদন করে বিক্রমাসিংহের সরকার। দেশটির অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি যাচাই শেষে গত মার্চে সেই ঋণ মঞ্জুর করে আইএমএফ।

কলোম্বোভিত্তিক এশিয়া সিকিউরিটিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জীওয়া ফারনান্দো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ এই পদক্ষেপ নিয়ে বলেন, আমরা সম্ভবত চলমান এই অর্থনৈতিক সংকটের শেষ পর্যায়ে আছি।

নতুন ঘোষণায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিবিএসএল আমানতে সুদের হার ও ঋণে সুদের হার ১৫ দশমিক ৫ ও ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ১৩ ও ১৪ শতাংশ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি. নন্দলাল বীরাসিংহে বলেন, আসলে সংকট থেকে উত্তরণের ব্যাপারটি ধাপে ধাপে ঘটে। আমরা কেউই বলতে পারি না যে, আগামীকাল কিংবা আজ থেকে এক বা দু’সপ্তাহের মধ্যে আমরা সব ঠিক করে ফেলতে পারব।

‘তবে বর্তমানের যে পরিস্থিতি, তা বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি সংকট থেকে উত্তরণের ধারাবাহিক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, কিংবা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক গতি ফিরে পাচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার স্থিতিশীল রাখবে বলে বেশিরভাগ বিশ্লেষকের প্রত্যাশা থাকলেও অর্থনৈতিক সংকট যখন মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, সেই ২০২২ সালের মার্চের পর এখন দেশটিতে সুদের হার সর্বনিম্ন অবস্থায় পৌঁছেছে।

মূল্যস্ফীতি দ্রুতগতিতে কমা, মূল্যস্ফীতিজনিত অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হওয়া এবং লেনদেনে ভারসাম্যজনিত চাপ সহজ হয়েছে। এ কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধ শক্তিশালী হচ্ছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে নীতি সুদহার কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিএসএল।

বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সুদহার কাঠামো স্বাভাবিকীকরণ, অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যাপকতার গতি বাড়ানো এবং আর্থিক বাজারের ওপর চাপ কমিয়ে অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়ানোর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে—এই আশা থেকে সুদের হার কমানো হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ কলম্বো কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স এপ্রিলের ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে নেমে মে মাসে ২৫ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়ায়, যা সাত দশকের মধ্যে সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকটে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির দাপটে কাঁপতে থাকা অর্থনীতির ওপর থেকে চাপ কমিয়েছে।

২০২১ সালের গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই প্রাইস ইনডেক্স ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশে উঠেছিল। দেশটিতে গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ, গত বছরের সেপ্টেম্বরেও যা ছিল ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির সীমা চলতি বছরের জন্য ১৫ দশমিক ২ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু সিবিএসএলের লক্ষ্য আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তাদের চোখ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মূল্যস্ফীতিকে এক অঙ্কের ঘরে নিয়ে আসা।

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সবমিলিয়ে মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের শুরুর দিকেই এক অঙ্কের ঘরে চলে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রান্তিকের মাঝামাঝিতে সেটি একক অঙ্কের ঘরের মাঝখানে কোথাও থাকবে। ১৫ বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১৩ জনই চলতি বছরের চতুর্থ নীতি সুদহার ঘোষণায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করেছিলেন।

মূল্যস্ফীতি কমাতে গত বছর সিবিএসএল সুদের হার রেকর্ড ৯৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছিল। এ বছরের মার্চেও বেসিস পয়েন্ট ১০০ বাড়ানো হয়েছিল। 

Share.